উদ্ধার তিন দেহ, কান্নার রবে বছর শুরু গাংদোয়ায়
ক জনের দেহ মিলেছিল আগের দিনই। অন্ধকার নেমে আসায় মঙ্গলবার আর উদ্ধারকাজ চালানো যায়নি। গঙ্গাজলঘাটির গাংদোয়া জলাধারে বুধবার ভোর থেকে চার ঘণ্টার তল্লাশিতে মিলল পিকনিকে এসে তলিয়ে যাওয়া দুর্গাপুরের বাকি তিন যুবকের দেহ।
বছরের শেষ দিনে গাংদোয়া জলাধারের পাড়ে পিকনিক করতে এসেছিলেন দুর্গাপুরের আট যুবক। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকেলে তাঁদের মধ্যে চার জন পাড়ে বেঁধে রাখা একটি নৌকা নিয়ে জলাধারে নেমে পড়েন। খানিকটা গিয়ে নৌকাটি উল্টে যায়। তলিয়ে যান চার জনই। কিছু ক্ষণ পরে শৌভিক সিংহ মজুমদার (২৬) নামে এক যুবক ভেসে ওঠেন। এলাকাবাসী তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে মৃত বলে জানানো হয়। পুলিশ সে দিন তল্লাশি শুরু করলেও অন্ধকার নেমে আসায় তা বন্ধ রাখতে হয়।
ডুবে যাওয়া নৌকাটি উদ্ধার করে পাড়ে তোলা হচ্ছে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
এ দিন ভোর ৫টা নাগাদ ফের উদ্ধারকাজ শুরু হয়। দু’টি বোটে জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা জলাধারে নামেন। দড়িতে কাঁটা বেঁধে জলাধারে তল্লাশি চালানো হতে থাকে। ঘণ্টা তিনেক পরে প্রথমে ডুবে যাওয়া নৌকাটির হদিস মেলে। কাঁটা দিয়ে সেটি টেনে তোলা হয়। তার মিনিট ৪৫ পরে একে একে রাজু মান্না (২৭), উৎপল মণ্ডল (২৬) ও রিন্টু সেনের (২৮) দেহ তোলা হয়।
নৌকাডুবির খবর পেয়েই দুর্গাপুর থেকে এসেছিলেন ওঁদের পরিজনেরা। রাজুর দেহ পাড়ে তোলার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর বাবা দিলীপ মান্না বলেন, “বছরের শেষ দিনে কত আনন্দ নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিকে করতে বেরিয়েছিল। আর কোনও দিন বাড়ি ফিরবে না!” উৎপলের ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা রয়েছে। বিয়ে করেছেন বছরখানেক আগে। তাঁর বাবা মানিক মণ্ডল বলেন, “দুপুর থেকে বৌমা বারবার ফোন করছিল ছেলেকে। কিন্তু কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। আমাদের চিন্তা বাড়ছিল। রাতে কয়েক জন গিয়ে ঘটনার জানায়।” ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে রিন্টুর জ্যেঠতুতো দাদা কাজল সেন জানান, আসবাবপত্রের ব্যবসা ছিল রিন্টুর। অনেক চেষ্টা করে ব্যবসা দাঁড় করার চেষ্টা করছিল। কাঁদতে কাঁদতে কাজলবাবু বলেন, “নতুন বছরের শুরু এ ভাবে হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি।”
সকাল থেকেই জলাধারের পাশে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন রাজু, উৎপলদের সঙ্গে মঙ্গলবার পিকনিকে আসা সঞ্জীব কুণ্ডু। তিনি বলেন, “পিকনিক শেষ হয়ে এসেছিল। আমরা ফেরার তোড়জোড় করছিলাম। তখনই শুনলাম আমাদের চার বন্ধু জলে নেমে ডুবে গিয়েছে।” তাঁর দাবি, “কয়েক জন মাঝি এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নৌকাভ্রমণে নিয়ে যাচ্ছিল। আমার চার বন্ধুও সে ভাবেই মাঝি নিয়ে গিয়েছিল। ঘটনার পরে মাঝি সাঁতার কেটে পাড়ে উঠে পালান।”
জেলা প্রশাসন যদিও তা স্বীকার করেনি। বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “আমি রিপোর্ট পেয়েছি, ওই চার যুবক পাড়ে বাঁধা একটি নৌকা নিজেরাই জলাধারে নিয়ে গিয়েছিলেন। কোনও মাঝি ছিলেন না। নৌকাটির অবস্থাও খারাপ ছিল।” তিনি আরও বলেন, “ওই জলাধারে নৌকা চালানোর কোনও অনুমতি নেই। তার পরেও কেউ যদি নৌকায় ভ্রমণার্থীদের নিয়ে জলাধারে যায়, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বছরের প্রথম দিন উপলক্ষে বুধবারও গাংদোয়ায় পিকনিকে এসেছিলেন বহু মানুষ। ঘটনার কথা জানতে পেরে অনেকেই পিকনিকের জায়গা পরিবর্তন করেন। অনেকে আবার শোকের আবহের মধ্যেই সাদামাটা ভাবে পিকনিক সেরে ফিরে যান। মেজিয়া থেকে পরিবারের সকলের সঙ্গে এসেছিলেন কলেজ ছাত্রী মহুয়া অধিকারী। তিনি বলেন, “এ রকম ঘটনার কথা জেনে খুব মনখারাপ হয়ে গেল। বছরের শুরুর দিনটা এত খারাপ কাটবে ভাবিনি।” বন্ধুবান্ধব নিয়ে এসেছিলেন বাঁকুড়ার সুকান্ত বিশ্বাস। জলাধারের পাড়ে দাঁড়িয়ে উদ্ধারকাজ দেখার পরে গাড়ি ঘুরিয়ে তাঁরা রওনা দেন শুশুনিয়ার দিকে। সুকান্তবাবু বলেন, “চারপাশে কান্নার রব। এই পরিস্থিতিতে কি আর পিকনিক করা যায়!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.