হাতে গরম খিচুড়ি আর কষা মাংস। সঙ্গে আলু-কপির ডালনা, মুচমুচে পাঁপড় ভাজা ও চাটনি। শেষপাতে রসগোল্লা ও সন্দেশ। অবশেষে মৌরি-জোয়ানের মুখসুদ্ধিতে সমাপ্তি। বুধবার ইংরাজি বছরের প্রথম দিনে লালাবাগের হাজারদুয়ারি মিউজিয়াম ও প্যালেস লাগোয়া মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের বাংলো ‘ফক্সেস কুটীর’ চত্বরে সামিয়ানা খাটিয়ে যাদের সামনে ওই ভুরিভোজের থালা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, তারা বেশিরভাগই অনাথ, কেউ হারিয়ে গিয়েছে, কেউ বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে।
তাদের এই আনন্দভ্রমণের উদ্যোগ জেলা পুলিশের। এই ছেলেমেয়েদের সংখ্যা প্রায় দু’শো। বয়স ৫ থেকে ১৮। প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়া। তাদের মধ্যে প্রায় দেড়শো জন ছাত্রী। বসবাস ২৫ ফুট উঁচু পাচিল ঘেরা বহরমপুরের সরকারি হোম ‘শিলায়ন’-এ। বাকি জনা পঞ্চাশেক ছাত্র থাকে ‘আনন্দআশ্রম’ নামের সরকারি ‘হোম’-এ। মাঝেমধ্যে হোম থেকে তাদের পালিয়ে যাওয়ার খবরও পাওয়া যায়। কিন্তু এ দিন তারা আনন্দের স্বাদ চেটেপুটে উপভোগ করল। পৌঁছে গিয়েছিল হাজারদুয়ারি মিউজিয়াম ও প্যালেসে। |
মুর্শিদাবাদের পুলিশ হুমায়ুন কবীর বলেন, “সব স্তরের মানুষ নববর্ষ উদযাপন করে। কেবল হোমের অনাথ ও দুঃস্থ আবাসিকরা থাকে পাঁচিল ঘেরা এক ঘেয়ে বন্দি জীবনে। তাই খোলা আকাশের নীচে বছরে একটি দিন ওদের আনন্দ করে কাটানোর জন্য এই ব্যবস্থা।” ভোরে বহরমপুর থেকে পুলিশের গাড়িতে করেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয় লালবাগে। ভরতপুর থানার বিনুদিয়া গ্রামে বাড়ি বছর তেরোর জাভেদ আলি মা-বাবাকে চোখে দেখেনি। জাভেদ বলে, “জীবনে এত মজা আগে খুব কমই হয়েছে।”
ফক্সেস কুটীরের মঞ্চে বালকবালিকারা মুক্ত বিহঙ্গের মতো নাচ-গান-কবিতায় নিজেদের ভরিয়ে তোলে। সেখানে তাদের ‘শুভ নববর্ষ’ জানালেন বহরমপুরের বিডিও বর্ণমালা রায়, মুর্শিদাবাদের ইতিহাস গবেষক রামপ্রসাদ পাল, লালবাগের পুরপ্রধান শম্ভুনাথ ঘোষ ও সিংঘী হাইস্কুলের শিক্ষক তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি মহম্মদ আলি ও বিশিষ্টজনেরা। |
সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী বীরভূমের রিঙ্কি মণ্ডল, দশম শ্রেণির ছাত্রী রানাঘাটের সীমা মণ্ডল, প্রথম শ্রেণির ছাত্রী নবগ্রামের বিছোড় গ্রামের ঋতা সোরেনরা সমস্বরে বলে, “সত্যিই আজ আমাদের শুভ নববর্ষ।” উত্তরপ্রদেশের জামিল শেখ অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তার সংযোজন, “এসপি সাহেব আমাদের প্রত্যেককে একটি করে ব্ল্যাঙ্কেট দিয়েছেন।” |