বর্ষশেষের রাত। হাড় হিম করা ঠান্ডায় পথঘাট সুনসান। আচমকা একটা আওয়াজ নিশ্চয় হয়েছিল। কিন্তু তা কানে পৌঁছয়নি কারও। মোটরবাইকটা পড়েছিল বড়ঞা-বেলগ্রাম রাজ্য সড়কের একপাশে। বছর পঁচিশের মির আওসাফ আলি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়েছিলেন মোটরবাইক থেকে কিছুটা দূরে। সামনে একটা কুকুর এসে গিয়েছিল। তাকে পাশ কাটাতে গিয়েই বিপত্তি ঘটে। দুর্ঘটনার পরে রাস্তার এক পাশেই পড়েছিলেন তিনি। এ ভাবেই কেটে গিয়েছিল বেশ কিছুটা সময়। তারপরেই ওই যুবককে দেখতে পান বড়ঞা থানার পুলিশ।
শেষ পর্যন্ত পুলিশকর্মীরাই গুরুতর জখম ওই যুবককে বড়ঞা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে ওই যুবক এ দিন বলেন, “পুলিশ সম্পর্কে এতদিন যে ধারণাটা ছিল, তা এ বার বদলে গেল। ওই রাতে উনারা সাহায্য না করলে আমার যে কী হত, ভাবলেই শিউরে উঠছি। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়ে ওই পুলিশকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে আসব”
মঙ্গলবার রাতে কী ঘটেছিল? পুলিশ জানিয়েছে, পাঁচথুপির বাসিন্দা মির আওসাফ রাত এগারোটা নাগাদ এক বন্ধুকে বড়ঞায় পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। স্থানীয় বড়ঞা ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সামনে দুর্ঘটনা ঘটে। শীতের রাতে ওই সড়ক ছিল একেবারেই ফাঁকা। আশপাশের দোকানও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বহু আগে। ঘটনাস্থল থেকে বড়ঞা থানার দূরত্ব বড় জোর তিনশো মিটার। রাতে ওই থানার এক হোমগার্ড রাস্তায় বেরিয়ে ওই যুবককে পড়ে থাকতে দেখেন। যোগেশ সাহা নামে ওই হোমগার্ড দ্রুত থানায় গিয়ে খবর দেন অন্য সহকর্মীদের। তাঁরা এসে ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, যোগেশবাবু থানায় গিয়ে ঘটনার কথা বলতেই তাঁর সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন দু’জন কনস্টেবল ও একজন ভিলেজ পুলিশ। তাঁরা ওই যুবকের মোবাইল থেকে বাড়ির ফোন নম্বর নিয়ে বাড়িতে ফোন করে বিষয়টি জানান। তারপর সময় নষ্ট না করে একটি অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে জখম ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন বড়ঞা থানার ওই পুলিশকর্মীরাই।
পেশায় চাষি ওই যুবকের দাদা মির আপতাপ আলি বলেন, “শীতের রাতে এমনিতেই রাস্তায় লোকজন কম থাকে। দুর্ঘটনায় ভাই যে ভাবে জখম হয়েছে, তাতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হলে মারাত্মক কিছু ঘটতে পারত। ওই পুলিশকর্মীরা যদি এ ভাবে ভাইয়ের পাশে না দাঁড়াতেন, তা হলে ভাইকে হয়তো আর ফিরেই পেতাম না।” ওই যুবক এখন বিপন্মুক্ত বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
ওই চার পুলিশকর্মী অবশ্য এটার মধ্যে বিরাট কিছু দেখছেন না। তাঁদের বক্তব্য, “আমাদের কর্তব্যটুকু করেছি মাত্র। এটা নিয়ে এত হইচই করার কিছু নেই।” বড়ঞার ওসি দেবাশিস সরকার বলেন, “বিপদের সময় মানুষের পাশে থাকা পুলিশের কাজ। ওই পুলিশকর্মীরাও সেটাই করেছেন।” বড়ঞা থানার পুলিশকর্মীদের এমন কাজের কথা শুনে গর্বিত মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, “ওই পুলিশকর্মীরা যা করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ওঁদের পুরস্কৃত করা হবে।” |