|
|
|
|
বার্ধক্য ভাতার টাকা পড়ে, ফিরে যাচ্ছেন প্রাপকেরা
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বেশ কিছু দিন ধরেই লালগড় গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব মঙ্গলা চালক। বার্ধক্য ভাতা চেয়ে দরবার করছেন। কিন্তু জুটছে কেবল আশ্বাস। বৈততা গ্রামের মঙ্গল সরেন আবার দুই ছেলেকে পড়াতে হিমশিম খাচ্ছেন। সরকারি প্রকল্পে তাঁর ঠাঁই হয়নি। অসহায় এই মানুষগুলি বলছেন, “কত বার বলব। পার্টিবাবুরা তো জানে আমার অবস্থা। নেই জমি, কোনও মতে মজুর খেটে সংসার চলে। তবু না করলে কী আর করব।”
পরিসংখ্যান বলছে, টাকা রয়েছে, কিন্তু উপভোক্তা নেই! তাই টাকা এসে পড়ে থাকে। অথচ অভিযোগ হল, প্রশাসনিক উদাসীনতায় মঙ্গলা চালক, মঙ্গল সরেনদের বার্ধক্য ভাতার তালিকায় ঠাঁই হয়নি। নিয়মানুযায়ী বার্ধক্য ভাতার আওতায় আসতে বিপিএল পরিবার এবং ৬০ বছরের বেশি বয়স হওয়া আবশ্যক। তা হলেই তফসিলি উপজাতিভুক্ত বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা মাসে এক হাজার টাকা ভাতা পাবেন।
পিছিয়ে পড়া পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। ২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, জেলার প্রায় ৬০ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে ১৪.৬০ শতাংশ তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের। তারপরেও কেন ভাতা পাওয়া যায় না? অভিযোগ, মূলত প্রশাসনিক উদাসীনতা ও স্বজনপোষণের জন্য ষাটোর্ধ্ব তফসিলি বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বঞ্চিত হচ্ছেন। জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ অবশ্য এর জন্য দায়ী করেছেন পূর্বতন বাম সরকারকে। তাঁর কথায়, “টাকা থাকা সত্ত্বেও গরিব মানুষদের ওরা (বামফ্রন্ট সরকার) সেই টাকা দেয়নি। এখন দ্রুত গতিতে উপভোক্তা তালিকা তৈরি করা হবে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় তফসিলি উপজাতির ৩১,২৮২ জনের বার্ধক্য ভাতা মঞ্জুর করেছে সরকার। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতগুলি ভাতার ওই তালিকা তৈরি করে প্রথমে পঞ্চায়েত সমিতি, তারপর জেলায় পাঠায়। সেই অনুযায়ী, ভাতা মঞ্জুর করে জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। এর জন্য আলাদা করে আবেদন করতে হয় না। ফলে এই তালিকা তৈরিতে আর পাঁচটা প্রকল্পের মতো স্বজনপোষণ-সহ নানা অভিযোগ থাকে। পাশাপাশি ওই তালিকা ফি বছর সংশোধন হয় না বলেও অভিযোগ। তার ফলে নতুন নাম সেই তালিকায় উঠতে যেমন সময় লাগে তেমনই দীর্ঘসূত্রতা থাকে পুরানো নাম বাদ যাওয়ার ক্ষেত্রেও। ফলে বরাদ্দ অর্থ সম্পূর্ণ খরচ করা যাচ্ছে না। ফলে দাবি উঠছে ‘রিজার্ভ লিস্ট’ আরও ভালভাবে দেখভাল করার। চলতি আর্থিক বছরে বার্ধক্য ভাতার তালিকায় উপভোক্তার সংখ্যা ৩০,৩৫২ জন। অর্থাৎ ৮৯৪ জনের নাম তালিকায় না থাকায় সেই অর্থ উপভোক্তাদের দেওয়া যাবে না।
জেলার জন্য মঞ্জুর হওয়া ভাতা ব্লক স্তরে বণ্টনেও গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, ডেবরার মতো শস্যশ্যামলা ও ব্যবসায় সমৃদ্ধ ব্লকে উপভোক্তা বণ্টন করা হয়েছে ২৫৯১ জন। সেখানে বিনপুর ১ ব্লকে অর্থাৎ লালগড়ে ১৮৩৮ জন, বিনপুর ২ ব্লক অর্থাৎ বেলপাহাড়ির মতো তফসিলি উপজাতি অধ্যুষিত, যে ব্লকের আমলাশোলে অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল সেখানে ১৮১০ জন উপভোক্তার কোটা নির্দিষ্ট করা হয়। এমনকী ডেবরায় প্রাপ্য কোটা পূরণ করা যায়নি। ২৫৯১ জনের মধ্যে ২৩৯৬ জনকে তালিকাভুক্ত করা গেলেও ১৯৫ জনের ভাতা পড়ে থাকছে। গোপীবল্লভপুর ২ ব্লকে ৮০৪ জনের কোটা থাকলেও পড়ে আছে ৩৩ জন ভাতা প্রাপকের টাকা।
কেমন এমন অবস্থা? প্রশাসনিক কর্তাদের ব্যাখ্যা, ওই তালিকা বহু আগে তৈরি হয়েছিল। তারপর উপভোক্তাদের মৃত্যু হলে অন্য উপভোক্তার নাম ঢোকাতে হয়। আর এই কাজটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি হয়ে জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে আসে। এ ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতের সক্রিয় ভূমিকা না থাকায় এমন ঘটছে। উপভোক্তা থাকলেও, অর্থ থাকলেও কেবলমাত্র তালিকায় নাম না ঢোকানোর জন্য তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বার এ বিষয়ে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিকে বিষয়টি দেখার জন্য জানিয়েছেন সভাধিপতি। আপাতত, চলতি বছরে উপভোক্তার যে সংখ্যা (৩০ হাজার ৩৫২) সেই মতোই অর্থ বরাদ্দ করেছে জেলা। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ততিন মাসে প্রত্যেকের নামে ৩ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়েছে। জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ আধিকারিক রাহুল নাথ বলেন, “উপভোক্তাদের নামের তালিকা ধরে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সকলের ভাতার টাকা বণ্টনের জন্য ব্লকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। উপভোক্তারা শীঘ্রই ওই টাকা পেয়ে যাবেন।” |
|
|
|
|
|