|
|
|
|
শৌচালয় নেই পূর্বের অর্ধেক অঙ্গনওয়াড়িতে
সুব্রত গুহ • কাঁথি |
আর মাত্র ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত ‘নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত’ হলে গোটা জেলা নির্মল জেলার তকমা পাবে। নতুন বছর ২০১৪-এ ওই লক্ষ্যে পৌঁছতে শুরু হয়েছে জোরদার প্রস্তুতিও। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বাস্তব চিত্রটা কিন্তু অন্য। গোটা জেলা প্রকৃত অর্থে ‘নির্মল’ হতে যে এখনও বহুদূর, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে জেলার সুসংহত শিশুবিকাশ কেন্দ্র বা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির বেহাল অবস্থা।
পূর্ব মেদিনীপুরে মোট অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আছে ৫৯৬৯টি। তার মধ্যে ৩২৮৭টি কেন্দ্রের নিজস্ব কোনও শৌচালয় নেই। অর্থাৎ, প্রায় ৫৫ শতাংশ। ওই কেন্দ্রগুলির শিশু ও প্রসূতি-সহ কর্মী ও সহায়িকাদের শৌচকর্মের জন্য একমাত্র ভরসা আশেপাশের বাড়ি অথবা মাঠ-ঘাট। এর মধ্যে ২১২৫টি কেন্দ্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়েই চলে অঙ্গনওয়াড়িগুলি। অভিযোগ, প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের শৌচাগার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পড়ুয়া-কর্মীদের ব্যবহারের অনুমতি দেন না। আর বাকি ১১৬২টি কেন্দ্রের এখনও নিজস্ব কোনও শৌচালয়ই তৈরি হয়নি।
তবে, শুধু শৌচালয় নয়, জেলার ১১৬০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশু ও প্রসূতিদের পানীয় জলেরও সুবিধাটুকু নেই। বোতলে করে নিজেদের বাড়ি থেকেই পানীয় জল বয়ে নিয়ে যেতে হয় তাদের। |
দইসাই পশ্চিম অঙ্গনওয়াড়ি। —নিজস্ব চিত্র। |
কাঁথির দইসাই পশ্চিম ঘোড়াইপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা রিনা বারুই বলেন, “আমাদের অসুবিধার কথা আর কাকে বলব! নেই স্থায়ী শৌচালয়। নেই জলের ভাল বন্দোবস্ত।” অভিভাবক ষষ্ঠী ঘোড়াইয়ের কথায়, “আমার ছেলে তো স্কুলে জল নিয়ে যায়। কেন্দ্রে যে জলে রান্না হয় দেখেছি, তা তো পুকুরের জলের চেয়েও খারাপ।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৫৯৬৯টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ১১৮৬টি কেন্দ্রের নিজস্ব ঘর থাকলেও বাকি ৪৭৮৩টি কেন্দ্রের নিজস্ব কোনও ঘর নেই। ভাড়া বাড়িতে চলে ৬২৮টি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘর ও বারান্দায় চলে ২১২৫টি, সরকারি বাড়িতে চলে ৪৩১টি, ব্যক্তিগত বাড়ি বা ক্লাব প্রতিষ্ঠানে চলে ১৪৫৩টি। আর খোলা আকাশের নীচে চলে ১৪৬টি কেন্দ্র। বিদ্যুতের কোনও ব্যবস্থাই নেই এমন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৭৫২টি। জেলার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির এমন দুরাবস্থার কথা মানছেন, জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন। রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিকে তাদের শৌচালয় ব্যবহার করতে না দেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।’’এই নিয়ে তিনি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক দীনবন্ধু নন্দীগ্রামী ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি গোপালচন্দ্র সাহুর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানান। তাঁর কথায়, “সম্প্রতি জেলা পর্যায়ের এক বৈঠকে জেলার শৌচালয়হীন দু’হাজারটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শৌচালয় তৈরির জন্য গড়ে ৮ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ কিন্তু, আট হাজার টাকাতে কী শৌচালয় তৈরি সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। |
|
|
|
|
|