|
|
|
|
ছাত্রভোটের মনোনয়ন এ বার অনলাইনে
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার অধীনে থাকা কলেজগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দিন ঘোষণা করল কর্তৃপক্ষ। আগামী ২৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ এবং ২৮ জানুয়ারি কলেজগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। ইতিমধ্যেই ওই নির্দেশিকা কলেজে কলেজে পৌঁছেছে। সেখানে জানানো হয়েছে, কী ভাবে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া এগোবে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ বিভাগের প্রধান জয়ন্তকিশোর নন্দী বলেন, “এ বার অনলাইনে মনোনয়ন তোলা যাবে। তবে তা জমা দিতে হবে প্রার্থীকেই।” তিনি জানান, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে সব রকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
এ বার একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত কলেজে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। রাজ্য সরকারের প্রস্তাব ছিল, অশান্তি এড়াতে অনলাইনে মনোনয়ন এর ব্যবস্থা করা। সেই মতো বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোগী হয়। অবশ্য অনলাইনে শুধু মনোনয়ন পত্র তোলা যাবে। জমা দেওয়া যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট কলেজে গিয়ে তা জমা দিতে হবে প্রার্থীকেই। প্রত্যাহারের ক্ষেত্রেও প্রার্থীকে উপস্থিত হতে হবে।
কী ভাবে এগোবে নির্বাচন প্রক্রিয়া? বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দুই মেদিনীপুরে ৪৫টি কলেজে রয়েছে। জানা গিয়েছে, কলেজগুলোয় ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে ৯ জানুয়ারি। তালিকা নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে ১০ এবং ১১ জানুয়ারি তা জানানো যাবে। ১৩ জানুয়ারি ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করবেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে ১৪ জানুয়ারি। অন্য দিকে, মনোনয়ন তোলা এবং জমা দেওয়ার জন্য দু’টি দিন নির্দিষ্ট হয়েছে, ১৫ এবং ১৬ জানুয়ারি। পরের দিন অর্থাৎ, ১৭ জানুয়ারি তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। ১৮ জানুয়ারি মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের দিন নির্দিষ্ট হয়েছে। এরপরই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে অশান্তির ঘটনা নতুন নয়। ফি-বছর এমন ঘটনা ঘটে। এক সময়ে দুই মেদিনীপুরের অধিকাংশ কলেজে এসএফআইয়েরই ‘একাধিপত্য’ ছিল। ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর থেকে তমলুক, হলদিয়াজেলার বিভিন্ন প্রান্তে সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের সংগঠন ছিল মজবুত। পরে ছবিটা বদলায়। ক্রমশ ওই সমস্ত এলাকায় প্রভাব বাড়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি)। তবে অশান্তি কমেনি। এক সময়ে সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠত, এখন সেই সব অভিযোগ আরও বেশি করে উঠছে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে। গত বছর নির্বাচন হয়নি। তার আগের বছর বিরোধী প্রার্থী না-থাকার সুযোগে দুই মেদিনীপুরের বেশ কয়েক’টি কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে টিএমসিপি। সেগুলির অধিকাংশতে বিরোধীদের উপস্থিতি ছিল সামান্য। তা ছাড়া ‘সন্ত্রাসে’র আবহে পড়ুয়াদের মধ্যে নির্বাচনে যোগ দেওয়ার প্রবণতাও কমেছে বলে শিক্ষক তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।
পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে অনলাইন মনোনয়ন চালুর দাবি উঠেছিল। এ বার সেই প্রক্রিয়া শুরুও হচ্ছে। তবে, এতে অশান্তি কতটা এড়ানো যাবে তা নিয়ে সংশয় থাকছেই। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অনলাইনে শুধু মনোনয়নপত্র তোলাই যাবে। তা জমা দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ, মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে একাংশ প্রার্থী বাধার মুখে পড়তে পারেন, এমন সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পারদ চড়ছে। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডার বক্তব্য: এখন ছাত্র সংসদে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। জয় করার বদলে ছাত্র সংসদ দখল করা হয়। সর্বত্র দখলদারির রাজনীতি চলছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, “এখন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ যে আচরণ করছে, আগে এসএফআইও তা করত না। যারা নিজেদের বড় সংগঠন বলে দাবি করে তাদের লক্ষ্যই হল যে ভাবে হোক ছাত্র সংসদ দখল করা।” তাঁর প্রস্তাব, “কলেজে অশান্তি এড়াতে হলে আগে বহিরাগতদের ঢোকা বন্ধ করতে হবে।”
যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, “আমরাও চাই, কলেজে বহিরাগতদের ঢোকা বন্ধ হোক। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।” তাঁর অভিযোগ, “বাম আমলে বিরোধীদের মনোনয়নই তুলতে দেওয়া হত না। নির্বাচনে যোগ দেওয়া তো দূরের কথা!” |
|
|
|
|
|