রজার বিনি নির্বাচকদের কমিটিতে না থাকলে স্টুয়ার্ট বিনি নিউজিল্যান্ডগামী ভারতীয় দলে সুযোগ পেতেন? এই বিতর্কে এখন সরগরম ভারতীয় ক্রিকেট মহল। ১৯৮৩-র বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের পেস বোলার বিনির সতীর্থরাও এই প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন। তাঁদের অনেকে আবার প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচকও। দলকে প্রায় শূন্য থেকে রঞ্জির শেষ আটে পৌঁছে দেওয়া বাংলার অধিনায়ক লক্ষীরতন শুক্লকে ভারতীয় দলে ফেরানোর পক্ষে অনেকেই। উঠে এসেছে গৌতম গম্ভীরের নামও। কিন্তু স্টুয়ার্ট বিনিকে এই মুহূর্তে ভারতীয় দলে হজম করার লোক তেমন খুঁজে পাওয়া গেল না।
আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরে যে তিনিও ধোনির দলের সঙ্গে যাবেন, তা ভাবতে পারেননি স্টুয়ার্ট নিজেও। বুধবার বছরের প্রথম সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে ফোনে বলেন, “আশা করিনি এই সুযোগটা আসবে। জানতাম, এক দিন না এক দিন ডাক আসবেই। কিন্তু তা যে এই সফরেই, তা ভাবিনি।” স্টুয়ার্ট নিজেই যেখানে আশায় ছিলেন না, তা হলে অন্যরা কী বলবেন?
সোজা কথার মানুষ কীর্তি আজাদ তো বলেই দিচ্ছেন, “পরিষ্কার বোঝাই যাচ্ছে, কার জন্য স্টুয়ার্ট দলে এল। চলতি রঞ্জি ট্রফিতে পারফরম্যান্সে যে পঞ্চাশের মধ্যেও নেই, তাকে ভারতীয় দলে আনতে বড় খুঁটি লাগে। ওর খুঁটিটা কে, তা আলাদা করে বোঝাতে হবে? আপনাদের লক্ষ্মীরতন শুক্লকে এ রকম কোনও খুঁটি ধরতে বলুন। তা হলে দলে জায়গা পাবে। ভারতীয় ক্রিকেটে এখন এটাই রীতি।” |
বিতর্কের কেন্দ্রে জুনিয়র বিনি। |
ইতিহাস বলছে, ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এর আগে কখনও কোনও নির্বাচকের কার্যকালে তাঁর পুত্র ভারতীয় সিনিয়র বা ‘এ’ দলে সুযোগ পাননি, যা এ বারই প্রথম হল। প্রাক্তন উইকেটকিপার সৈয়দ কিরমানি, যিনি এক সময় জাতীয় নির্বাচকও ছিলেন, তিনি বলেন, “রজারের জন্যই স্টুয়ার্টের দলে আসা কি না, এই প্রশ্ন ওঠার কারণ আছে। অলরাউন্ডারই যদি দলে নিতে হত, তা হলে লক্ষ্মীরতন শুক্লকে ডাকাই ভাল ছিল। স্টুয়ার্টের চেয়ে লক্ষ্মী ভাল ফর্মে, অভিজ্ঞতাও বেশি। স্টুয়ার্টকে পরেও ডাকা যেত। ওর এখনও সময় আছে। সে জন্যই এমন প্রশ্ন উঠছে।”
স্টুয়ার্টকে নিয়ে দিনভর সারা দেশের আনাচে কানাচে ওঠা প্রশ্ন সামলাতে আসরে স্বয়ং বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল। বুধবার তিনি বলেন, “স্টুয়ার্ট বিনিকে দলে নেওয়ার প্রশ্নে সব নির্বাচকই একমত হয়েছেন। ওকে নিয়ে কারও কোনও দ্বিমত ছিল না।” তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ চেতন চৌহান। প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনারের বক্তব্য, “কাউকে দলে রাখার ‘নির্দেশ’ এলে তাতে নির্বাচকদের সম্মতি দিতেই হয়। শ্রীকান্তের মতো বৈঠক থেকে বেরিয়ে দল নির্বাচনের ব্যাখ্যা এরাই বা দেবে না কেন? গৌতম গম্ভীর বাইরে, স্টুয়ার্ট বিনি দলে! আমাদের ওপেনারদের এমন কিছু পারফরম্যান্স নেই।”
ভারতীয় দলের প্রাক্তন পেসার ও প্রাক্তন নির্বাচক মদনলালও বিস্মিত। বললেন, “স্টুয়ার্ট বিনি কেন, তা আমার মাথায় আসছে না। এই দলে ওর জায়গা হওয়ার কথা নয়।” রজার বিনির প্রভাবে বা কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থার কর্তাদের খুশি রাখতে? উত্তরে মদনলাল বলেন, “ভারতীয় ক্রিকেটে যা চলছে, কিছুই অবিশ্বাস্য নয়।” যাঁকে নিয়ে এই বিতর্ক, সেই স্টুয়ার্টের ধারণা, “ভাল পারফরম্যান্সের জন্যই নিশ্চয়ই ডাক পেলাম। বিশেষ করে আইপিএলের পারফরম্যান্সের জন্য বোধহয়।”
কিন্তু আইপিএলে ১৬ ইনিংসে ২৯৩, ১৪৭.২৩-এর স্ট্রাইক রেট এমন কী বিশেষ পারফরম্যান্স, যেখানে সেরা স্ট্রাইক রেটের মালিকদের তালিকায় তিনি ১৮ নম্বরে ও গড়ের দিক থেকে কুড়ি নম্বরে?
|
“গত কয়েক বছর ধরেই টানা ভাল পারফর্ম করে যাচ্ছি। বোর্ডের বর্ষসেরা অলরাউন্ডার হয়েছি। তবু আমাকে ডাকা হয় না। আমি মাঝে মাঝে ঈশ্বরকে বলি, আর কী করলে সুযোগ পাব। ভারতীয় ক্রিকেটে আবার ঈশ্বর এখন নির্বাচকরা। আমি তাঁদেরও প্রশ্নটা করতে চাই। সাবা করিমের সঙ্গে দেখা হলে জিজ্ঞেস করব, আর কী করলে আমাকে তোমরা নেবে? নাকি আমি যা-ই করি, নেওয়া হবে না? বলব, আমাকে পরিষ্কার করে বলে দিতে যে, ওরা আমাকে নিয়ে কী ভাবে। তা হলে যা-ই হোক, ভারতীয় দলে খেলার ইচ্ছেটা আর কখনও হবে না।”
লক্ষ্মীরতন শুক্ল |
|