‘রামনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের কথা ভাবিনি’
হারতে বসা একটা ম্যাচ জিতিয়ে টিমকে কোয়ার্টার ফাইনালে তুলেছেন এই ঘণ্টাকয়েক আগে। গ্রুপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ শেষ করেছেন স্বপ্নের বোলিং হিসেব নিয়ে। দু’ইনিংস মিলিয়ে দশ উইকেট, যার মধ্যে সাতটা এসেছে বুধবার। এসেছে এমন পরিস্থিতিতে, যেখানে টিমের হার ছিল স্রেফ কয়েকটা ঘণ্টার ব্যাপার। বাংলার রঞ্জি স্বপ্ন শেষ করে দিতে বিপক্ষের হাতে ছিল গোটা দুটো দিন, দরকার একশোরও কম রান।
আর এই অবস্থা থেকে বাংলার কোয়ার্টার ফাইনাল প্রায় নিশ্চিত করে ওঠা সৌরাশিস লাহিড়ীর গলায় নেই ব্যক্তিগত উচ্ছ্বাসের ছিটেফোঁটা। বরং রয়েছে টিমের সাফল্যে আনন্দ। রয়েছে টিমকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার গভীর সংকল্প। আর কিছুটা হলেও রয়েছে টানা দু’বছর টিমের বাইরে থাকার চাপা দুঃখ।
“ওই সময়টা সত্যিই খুব কঠিন ছিল। এমন অবস্থা ছিল যে, প্র্যাকটিস করার জন্য মাঠ পেতাম না। ইন্ডোরে যে প্র্যাকটিস বা জিম করব, তারও উপায় ছিল না। বাংলা স্কোয়াডেই যে আমার নামটা ছিল না!” বলতে বলতে যেন ফিরে যান অতীতের সেই অন্ধগলিতে। খানিকটা স্বগতোক্তির মতো বলে ফেলেন, “সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছিল কীসে জানেন? যে বাংলা ড্রেসিংরুমে আমি পনেরোটা বছর কাটিয়েছিলাম, তখন ওই ড্রেসিংরুমেই আমি আগন্তুক হয়ে গেলাম! খুব একা হয়ে পড়েছিলাম।” দেড় দশক ধরে বাংলার জার্সি পরা এমন অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল যে, হঠাৎ সেটা কেড়ে নেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন সৌরাশিস। বুঝে উঠতে পারতেন না, এত বছর বাংলার হয়ে খেলার পর কী ভাবে ক্লাব ক্রিকেটের পারফরম্যান্স তাঁর প্রত্যাবর্তনের মাপকাঠি হতে পারে।
হতাশার এই অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার রাস্তায় তাঁর সঙ্গী ছিলেন বাবা-মা, ছিলেন স্ত্রী, ছিল তাঁর নিজস্ব ক্রিকেট-বোধও। “বাড়ির লোকেরা আমাকে বোঝাত যে, সব স্পোর্টসম্যানের জীবনেই খারাপ সময় আসে। বোঝাত, লম্বা কেরিয়ারে এ রকম চড়াই-উতরাই আসবেই। ওদের ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা আমার নেই। লক্ষ্মী, পাজি-র (অশোক মলহোত্র) কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। আমাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য। আমার উপর ভরসা করার জন্য,” বলছিলেন সৌরাশিস।
সৌরাশিসের বাদ পড়ার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যাঁর ছিল, বাংলার তখনকার কোচ ডব্লিউ ভি রামন এ দিন ছিলেন শত্রু শিবিরে। রামন তখন সাফ বলে দিয়েছিলেন, সৌরাশিস লাহিড়ীকে তাঁর দরকার নেই। বলে দিয়েছিলেন, থার্টি-প্লাস ক্রিকেটারের জায়গা নেই তাঁর টিমে। তাঁকে অকাল বাণপ্রস্থে পাঠানোর সেই খলনায়কের টিমের বিরুদ্ধে কি বাড়তি মোটিভেশন নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন? ভেবেছিলেন, এই ম্যাচে ভাল কিছু করতে পারলে এই লোকটাকে যোগ্য উত্তর দেওয়া যাবে? স্বভাবসিদ্ধ শান্ত ভঙ্গিতে সৌরাশিসের জবাব, “হয়তো তখন রামনের পরিকল্পনায় আমার জায়গা ছিল না, তাই আমাকে টিমে রাখা হয়নি। এখন আর এটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আর সত্যি বলতে কী, রামনকে হারাব বলে কিন্তু আমি খেলিনি। আর তাই রামনকে হারালাম ভেবে বাড়তি কোনও আনন্দ নেই। আমরা তামিলনাড়ুকে হারিয়েছি। ওদের মতো শক্তিশালী টিমকে এ ভাবে হারাতে পারাটা বাংলা ক্রিকেটে একটা বিশাল পদক্ষেপ। এটা ভেবেই সবচেয়ে বেশি আনন্দ হচ্ছে।”
মঙ্গলবার যে অবস্থায় শেষ করেছিল তামিলনাড়ু, তাতে বাংলার সবচেয়ে বড় সমর্থকও হয়তো লক্ষ্মীর টিমের উপর বাজি ধরতেন না। এ দিন মাঠে নামার সময় মনের অবস্থাটা কী রকম ছিল সৌরাশিসের? “বিশ্বাস করুন, বাংলা স্কোয়াডের এক জনও ভাবিনি যে এই ম্যাচটা আমরা হারব। নিজেদের উপর পুরো বিশ্বাস ছিল। আর একটা সত্যি কথা বলব? কাল রাতে স্ত্রী আর মায়ের সঙ্গে যখন ফোনে কথা বলছিলাম, তখনই ওদের বলেছিলাম যে আমরা ম্যাচটা জিতব। বলেছিলাম, আমি সকালে বল করব আর উইকেট নেব। বিশ্বাস করতে পারছি না যে, ঠিক সেটাই হল!” কী স্ট্র্যাটেজি নিয়ে বল করতে এসেছিলেন ম্যাচের মাহেন্দ্রক্ষণে? “স্ট্র্যাটেজি কিছু ছিল না। শুধু নিজেকে বলেছিলাম, এটা আমার জীবনের ম্যাচ। আমার জীবন নির্ভর করে আছে এই ম্যাচটার উপর।”
বত্রিশ বছরের অফস্পিনার নতুন জীবন তো পেলেনই। পাশাপাশি তাঁর টিমকেও উপহার দিলেন সঞ্জীবনী মন্ত্র। তরুণ টিমকে দিলেন নকআউটের রোদ-ঝলমলে আশীর্বাদ সৌর আশিস!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.