গত দু’বছরে শিকারিদের অত্যাচার আর বন্যার দাপটে টোকে গেকো এবং হগ ডিয়ারের সংখ্যায় বড় কোপ পড়েছে। তার জেরেই ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-এ সংশোধনী এনে তাদের নিরাপত্তা জোরদার করল কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। সংশোধনী অনুযায়ী, হগ ডিয়ার এখন থেকে প্রথম তফসিলভুক্ত প্রাণী হিসেবে গণ্য হবে। চতুর্থ তফসিলের অন্তর্গত হল টোকে গেকো।
অসমের মধ্যে কাজিরাঙায় সবচেয়ে বেশি হগ ডিয়ারের দেখা মেলে। কাজিরাঙার ডিএফও এস কে শীলশর্মা জানান, সেখানে প্রায় ৫০০০ হগ ডিয়ার রয়েছে। অসমের অন্য জঙ্গলে হগ ডিয়ারের দেখা তেমন মেলে না। কাজিরাঙায় বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণও হল হগ ডিয়ারের সংখ্যাধিক্য। তবে হগ ডিয়ার কাজিরাঙায় প্রচুর থাকলেও দেশের অন্যত্র তেমন ভাবে এদের পাওয়া যায় না। তবে হগ ডিয়ারের কোনও সুমারি হয়নি। ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার ডিন বিনোদবিহারী মাথুর বলেন, “হগ ডিয়ারে সংখ্যা নির্দিষ্ট ভাবে বলা যাবে না। একবার মাত্র এদের আবাসস্থলের প্রকৃতি ও বিভিন্নতা নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। অসম বাদে দেশের অন্যত্র হগ ডিয়ারের আবাস কার্যত বিপন্ন। তাদের সংখ্যাও অনেক কমে এসেছে।” কাজিরাঙায় হগ ডিয়ারের সবচেয়ে বড় শত্রু বন্যা। গত বছরের বন্যায় ছ’শোরও বেশি হগ ডিয়ারের মৃত্যু হয়েছিল। আইইউসিএন-এর তালিকায় এই প্রজাতির হরিণ অতি বিপন্ন তালিকাভুক্ত। |
পাশাপাশি, গত বছর দু’য়েকের মধ্যে আন্তর্জাতিক চোরাবাজারে টোকে গেকোর দর অভাবনীয় বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন অরণ্যে লাল বুটিওয়ালা বড় টিকটিকির আকারের এই সরীসৃপ প্রচুর পাওয়া যায়। টোকে গেকো হত্যার ঘটনাও আগে সামনে আসেনি। কিন্তু চিন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গন্ডারের খড়্গের মতোই এখন ক্যান্সার, যৌন রোগ, এড্স প্রতিরোধের ওষুধ তৈরির জন্য টোকে গেকোর চাহিদা বাড়ছে। একটি এক ফুটের গেকো মায়ানমারের কারবারিরা ১০ থেকে ২০ লক্ষ টাকায় কিনছে, জানাজানি হতে দু’বছরে উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন জঙ্গল থেকে হাজার-হাজার টোকে গেকো সাবাড় হয়ে গিয়েছে। টোকে গেকো উদ্ধারের ঘটনাও আকছার ঘটছে। কিন্তু পুলিশের আক্ষেপ ছিল, তফসিলভুক্ত প্রাণী না হওয়ায় এই সরীসৃপ পাচারের জন্য তেমন শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না। কার্যত সে দিকে লক্ষ্য রেখে নয়া সংশোধনীতে টোকে গেকোকে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের চতুর্থ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু অসমের বনকর্তারা এই সিদ্ধান্তে খুশি নন। রাজ্যের বনপাল সি কে ভোবরা বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম টোকে গেকোকে প্রথম বা দ্বিতীয় তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করা হোক। তা হলে অসমের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংশোধিত আইনে তা জামিন অযোগ্য হবে, শাস্তিও বাড়বে। কিন্তু এটি চতুর্থ তফসিলের অন্তর্গত হওয়ায় ধরা পড়া ব্যক্তিরা সহজেই পার পেয়ে যাবে। আমরা গেকো ও আরও বেশ কিছু পাখিকে প্রথম বা দ্বিতীয় তফসিলভুক্ত করার জন্য কেন্দ্রের কাছে ফের আবেদন জানাচ্ছি।” |