উল্টে ফেলা হল পিকনিকের খাবার,
প্রহৃত বিজেপি পরিবারের কিশোরীও
ছরের প্রথম দিনটায় কয়েক জন কিশোর-কিশোরী নিজেরাই রান্না-বান্না চড়িয়ে পিকনিক করছিল বাড়ির পাশের মাঠে। সেখানে হাজির হন তৃণমূলের কয়েক জন নেতা-কর্মী। অভিযোগ, রান্না করা খাবার উল্টে ফেলে মারধর করা হয় বছর সতেরোর এক কিশোরীকে। তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিলেন কাকা-জ্যাঠারা। তাঁরাও প্রহৃত হন। চার জনকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে।
বুধবার ঘটনাটি ঘটে গোঘাটের রতনপুরে। প্রহৃত সকলে বিজেপি পরিবারের। জখম কিশোরীর বাবা সুকুমার সাঁতরা বিধানসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থীও ছিলেন। তাঁর দাবি, এলাকায় প্রভাব বাড়াতে চাইছে বিজেপি। সে কারণেই হামলা। তৃণমূল নেতৃত্ব সে কথা মানতে চাননি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সাঁতরা বাড়ির ছেলেমেয়েরা যেখানে পিকনিক করছিল, সেখানে বিজেপির কিছু পতাকা লাগানো ছিল। এ দিন ছেলেমেয়েরা জাতীয় পতাকাও তোলে। কয়েক হাত দূরত্বে তৃণমূলও পতাকা তুলবে বলে আগে থেকেই বেদি তৈরি করে রেখেছিল। প্রহৃত কিশোরী পূজার বক্তব্য, “আমরা ছোটরা পিকনিক করছিলাম। ভাত-তরকারি রান্না হয়ে গিয়েছিল। উনুনে মাংস হচ্ছিল। সে সময়ে তৃণমূলের শম্ভু সাঁতরা, তাঁর স্ত্রী পঞ্চায়েতের উপপ্রধান টগরী সাঁতরা-সহ কয়েক জন এসে জানতে চায়, আমরা বিজেপির পতাকা তুলেছি কেন। আমরা বলেছিলাম, শুধু জাতীয় পতাকা তুলেছি। বিজেপির পতাকা আগে থেকেই ছিল।”
পূজার দাবি, এ সব কথায় কান না দিয়ে রান্না-বান্না উল্টে ফেলে তৃণমূলের লোকজন। উনুন ভেঙে দেয়। ওই কিশোরীকে বাঁশের মুগুর দিয়ে পেটানো হয়। সে সময়ে পূজার বাবা বাজারে গিয়েছিলেন। পূজার জ্যাঠা-কাকারা প্রতিবাদ করতে এলে তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। চিকিৎসাধীন তারাপদ সাঁতরা, কালীপদ সাঁতরা এবং স্বপন সাঁতরার দাবি, “বিজেপি করার জন্যই মারধর করা হয়েছে আমাদের।” সুকুমারবাবুর অভিযোগ, মাসকয়েক ধরে এলাকায় বিজেপির সংগঠন মজবুত করার চেষ্টা করছেন তিনি। সে জন্যই হামলা চালিয়ে তাঁদের নির্মূল করতে চাইছে তৃণমূল। তাঁর সাবমার্সিবল পাম্প তৃণমূলের লোকজন বন্ধ করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন এই বিজেপি নেতা। দলের জেলা নেতা অসিত কুণ্ডু বলেন, “তৃণমূল সংযত না হলে আমাদের লোকেরাও আর মুখ বুজে থাকবে না।”
অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শম্ভু সাঁতরার অবশ্য দাবি, “আমাদের দলীয় পতাকা তোলার জায়গার কাছেই বিজেপির পতাকা তোলাকে কেন্দ্র করে বচসা হয়েছে। মারধর বা পিকনিক ভণ্ডুল করার মতো কিছু ঘটেনি। শম্ভুবাবুর স্ত্রী গৌরহাটি ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান টগরীদেবী জানান, তিনি ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে ছিলেন। আরামবাগের বিধায়ক তৃণমূলের কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা অবশ্য জানিয়েছেন, শান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। রতনপুরের ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। কেউ অপরাধ করলে বিচারের ক্ষেত্রে দল দেখা হবে না।
অন্য একটি ঘটনায়, তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসেও ঠেকানো গেল না গোষ্ঠীকোন্দল। দু’পক্ষের মারপিট বাধল গোঘাটে। জখম ৮ জনের চিকিৎসা হচ্ছে আরামবাগ হাসপাতালে। ১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
গোটা আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাতে বেশ কিছু দিন ধরেই হিমশিম খাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার, তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসে দলের নেতা আতাউল হকের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল বেরোয় গোঘাটের পশ্চিমপাড়ার বিটহাউস-সংলগ্ন রাস্তায়। দলের যুবনেতা ফরিদ খানের অনুগামীরাও এ দিন সকালে পৃথক ভাবে দিনটি পালন করেছিলেন। পরে তাঁদের লোকজন পিকনিকে মেতেছিলেন রাস্তার ধারের মাঠে। সে সময়ে দু’পক্ষের মারপিট বেধে যায়। লাঠি-কুড়ুল-টাঙির আঘাতে দুই গোষ্ঠীর ৮ জন জখম হন। এঁদের মধ্যে ফরিদগোষ্ঠীর মুজিবর মোল্লার অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্থানীয় অনুপনগরের বাসিন্দা ওই যুবকের পা ভেঙেছে। ভারি কিছু দিয়ে তাঁর মাথায় কোপ মারাও হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। অন্য দিকে, আতাউল হকের দুই ছেলে আসানুল এবং আমিরুলেরও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত এবং আঘাত আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
ফরিদ খানের অভিযোগ, “আমদের দলের কিছু ছেলে সকালে প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করার পরে পিকনিক করছিল রাস্তার গায়ে মাঠে। আতাউলের নেতৃত্বে কিছু দুষ্কৃতীকে নিয়ে সাইকেল মিছিল হচ্ছিল। সেই মিছিল থেকে আমাদের ছেলেদের উপরে কুড়ুল-টাঙ্গি নিয়ে হামলা হয়।” আতাউল হকের আবার দাবি, “এটা কোনও গোষ্ঠীসংঘর্ষ নয়। আমাদের মিছিলের শেষভাগে কুড়ুল-টাঙ্গি নিয়ে হামলা করেছিল সিপিএমের লোক। প্রাণে মেরে ফেলার চক্রান্ত করেছিল আমাকেও। আমাদের লোকেরা তারই প্রতিবাদ করেছে।” এই ঘটনায় তাঁদের দলের বিরুদ্ধে আঙুল ওঠায় বিস্মিত সিপিএমের গোঘাট জোনাল কমিটির সম্পাদক অরুণ পাত্র। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “মন্তব্যের প্রয়োজন নেই। মানুষ সবই দেখছেন। তাঁরাই বুঝবেন।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.