নেপালে বেড়াতে গিয়ে পাহাড় থেকে নদীতে গাড়ি পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল একই পরিবারের ৭ জনের। তাঁরা সকলেই হাওড়ার শিবপুরের বাসিন্দা। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন পরিবারের গৃহকর্তা ও কর্ত্রী, দুই মেয়ে ও তাঁদের তিন সন্তান। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন পরিবারের আরও তিন জন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ নেপালের তানাহুন জেলায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম বিনয়কুমার তিওয়ারি (৫৮), কমলাবতী তিওয়ারি (৫৫), নীলম ত্রিপাঠী (৩৮), পুনম ত্রিপাঠী (৩৫), নেহা ত্রিপাঠী (২০), হেমন্ত ত্রিপাঠী (১৫) এবং শ্রেয়সী ত্রিপাঠী (৫)। গত ২৫ ডিসেম্বর তাঁরা নেপালে বেড়াতে যান।
হাওড়া সিটি পুলিশ এবং ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার পোখরা থেকে ১০ জনের এই দলটি একটি জিপে করে কাঠমাণ্ডুর দিকে রওনা দিয়েছিল। পথে তানাহুন জেলার বন্দিপুর গ্রামের কাছে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৩০০ মিটার নীচে মারসিয়াংডি নদীতে পড়ে যায়। কোনও রকমে গাড়ি থেকে লাফিয়ে বেঁচে যান চালক। রাতেই স্থানীয় গ্রামবাসী ও প্রশাসনের চেষ্টায় খাদ ও নদী থেকে ১০ জনকে উদ্ধার করে স্থানীয় উদয়পুরের লক্ষ্মী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রথমেই ৬ জনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। বুধবার সকালে মারা যায় পরিবারের সব থেকে ছোট সদস্য শ্রেয়সী। দুর্ঘটনায় অল্পবিস্তর আহত হন রবীন তিওয়ারি, সত্যেন্দ্র দুবে এবং তাঁর ১০ বছরের ছেলে হানি দুবে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তিন জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ দিন শিবপুরের ওই আবাসনে গিয়ে দেখা যায়, তিওয়ারিদের দোতলার ফ্ল্যাটে ভিড় করেছেন আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা। ওই পরিবার সূত্রে খবর, গৃহকর্তা বিনয়বাবু স্থানীয় একটি স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক ছিলেন। তাঁর একটি ছেলে ও চার মেয়ে। ছেলে নবনীত এবং তাঁর স্ত্রী এ বার বেড়াতে যাননি। তাই তাঁরা বাড়িতেই ছিলেন।
বিনয়বাবুর ভাইপো সন্দীপ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, গভীর রাতে শিবপুর থানার পুলিশ এসে প্রথম এই দুর্ঘটনার খবর দেয়। বুধবার সকালের ফ্লাইটে কাঠমাণ্ডু রওনা হন নবনীত এবং তাঁর এক আত্মীয়।
সন্দীপবাবু বলেন, “প্রতি বছর কাকা-কাকিমা সপরিবারে তীর্থস্থানে বেড়াতে যেতেন। এ বার কাঠমাণ্ডু গিয়েছিলেন পশুপতিনাথ মন্দিরে পুজো দিতে। সব শেষ হয়ে গেল।”
খবর পেয়ে ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন মধ্য হাওড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়, মেয়র রথীন চক্রবর্তী, স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর শৈলেশ রাই প্রমুখ। অরূপবাবু জানান, ময়না-তদন্তের পরে দেহগুলি যাতে দ্রুত রাজ্যে ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে নেপাল সরকারের সঙ্গে কথা বলে সব রকম সাহায্যের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিবারের যে দু’জন বিকেলে কাঠমাণ্ডু গিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। |