রাত দেড়টা। সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরের পানশালায় সোফায় লুটিয়ে পড়েছিলেন তরুণী। বারবার ওঠার চেষ্টা করেও পড়ে যাচ্ছিলেন। সঙ্গীর অবস্থাও প্রায় একই। সেই সময়েই এগিয়ে এলেন দুই মহিলা। সোফায় এলিয়ে পড়া তরুণীকে কিছুটা সুস্থ করে ধীরে ধীরে বার করে নিয়ে গেলেন তাঁরাই।
রাত ২টো ১০। পাঁচ নম্বর সেক্টরেরই আর এক পানশালার গেটের মুখে জটলা। জোর বচসা চলছে দু’দল যুবক-যুবতীর মধ্যে। ছেলেদের সামলাতে হাজির হলেন কয়েক জন বাউন্সার। সঙ্গে দু’জন মহিলাও।
ত্রাতা কিংবা মধ্যস্থতাকারী— দুই ভূমিকাতেই হাজির হওয়া এই মহিলারা আসলে বাউন্সার। মঙ্গলবার বর্ষবরণের রাতে সল্টলেক-নিউ টাউনে নিরাপত্তার চেনা ছবিতে ওঁরাই এ বারের চমক।
একটি পানশালার ম্যানেজার একটি পানশালার ম্যানেজার সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “বর্ষবরণের উৎসবে এখন অনেক বেশি সংখ্যায় মহিলারা যোগ দিচ্ছেন। গোলমাল হলে অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের সামলাতে সমস্যা হয়। সে জন্যই এ বার পুরুষদের পাশাপাশি মহিলা বাউন্সার রাখার পরিকল্পনা করেছিলাম।” পানশালা কিংবা উৎসবস্থলগুলিতে এই মহিলা বাউন্সারদের উপস্থিতি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা বলেই মনে করছেন বিধাননগরের পুলিশের একাংশও।
বছর শেষের রাতে ওই পানশালায় গিয়েছিলেন কাঁকুড়গাছির জুঁই মজুমদার। বললেন, “বাইরে মহিলা পুলিশ থাকলেও পানশালার ভিতরে এ বার মহিলা বাউন্সার থাকায় আমাদের খুব সুবিধা হয়েছে। খানিকটা স্বস্তিও পেয়েছি। এ বার থেকে নিয়মিত ওঁদের রাখা হলে ভাল হয়।”
সর্বত্র ছবিটা অবশ্য এ রকম নয়। ভিআইপি রোডের ধারে একাধিক পানশালায় এ সব ব্যবস্থার বালাই ছিল না। যুবক-যুবতীদের হুল্লোড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু সে অনুযায়ী বাউন্সারদের উপস্থিতি কিংবা পুলিশি তৎপরতা দেখা যায়নি। তবে মোটের উপর শান্তিতেই বর্ষবরণে মেতেছেন বিধাননগর কমিশনারেট এলাকার ন’টি থানা এলাকার অসংখ্য মানুষ। |
ভিআইপি রোড, রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা নিউ টাউন ও সল্টলেকের বিভিন্ন রাস্তায় অবশ্য জারি ছিল মোটরবাইক বাহিনীর দাপট। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, রাতভর কড়া পুলিশি নজরদারি থাকলেও বাইকবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে তৎপরতা দেখা যায়নি। অভিযোগ অস্বীকার করে বিধাননগর পুলিশ জানিয়েছে, নজরদারি জোরদার করা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে সল্টলেকে। ই এম বাইপাসের কাছে সল্টলেকের নবপল্লিতে এক নির্মীয়মাণ পানশালায় গোলমাল বাধে। একটি অংশ তৈরি হয়ে যাওয়ায় সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ।
ঘটনায় ওই পানশালার কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ নাগ এবং ওই পানশালার অনুষ্ঠানের এক আয়োজক আমন জায়সবালকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, বর্ষবরণ উপলক্ষে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা। আড়াইশো টাকা করে প্রায় তিন হাজার পাস বিক্রি করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। কিন্তু অভিযোগ, ওই পানশালাটিতে পর্যাপ্ত জায়গার অভাব থাকায় অনেকেই ঢুকতে পারেননি। খাবারও পাননি অনেকেই। ফলে অনেকে পাসের টাকা ফেরত চাইতে শুরু হয় বচসা। তা থেকেই গোলমাল বাধে। পুলিশ সূত্রে খবর, পুরোপুরি তৈরি না হওয়া পানশালায় এই অনুষ্ঠানের খবরই ছিল না পুলিশের কাছে। ন্যূনতম অনুমতি না নিয়েই এই অনুষ্ঠান চলছিল। বুধবার ধৃত কর্মকর্তা ও আয়োজককে আদালতে তোলা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গের মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। ধৃতদের এক জনের জেল ও অন্য জনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে। ওই রাতে পাঁচ নম্বর সেক্টরের একটি বিনোদন পার্কেও গোলমাল হয়েছে। |