|
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ |
নতুন বছরে কোন দিকে বাজার?
বিশ্ব জুড়ে এত ধুমধামের বর্ষবরণ। ২০১৪-কে স্বাগত জানিয়ে আলোর
এই রোশনাই পণ্য বাজারে বছরভর স্থায়ী হবে তো? বললেন অরিন্দম সাহা। |
|
শেয়ার বাজারের মতোই গত বছর পণ্য বাজারের ক্ষেত্রেও সারা বছরই নিয়মিত ওঠা-পড়া দেখতে পেয়েছি আমরা। বিশেষত বছরের মাঝে ডলারের তুলনায় টাকার দামের লাগাতার পতন ভারতে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়াতে সাহায্য করেছে। আবার টাকার দামে কিছুটা সংশোধন আসার পর তা নেমেও এসেছে। এই অবস্থায় নতুন বছরে পা দেওয়ার পর সোনা, রুপো, তামা, অশোধিত তেলের মতো চারটি পণ্যের দাম কোন দিকে যেতে পারে, আসুন তা নিয়েই কথা বলি। |
সোনা |
কেমন গেল ২০১৩
বাজার ও লগ্নিকারীদের কিছুটা অবাক করেই ২০১৩-এ পড়েছে সোনার দর। অর্থাৎ বছরের শুরুতে সোনার যে-দর ছিল, বছর শেষে তা নেমে এসেছে। গত ১০ বছরে এই প্রথম যা ঘটল। যার পিছনে ছিল মূলত দু’টি কারণ
১) বছরের মাঝে সাইপ্রাস ৪০ কোটি ইউরোর ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করে। যে জন্য ইউরোপের এই দেশটি সোনা বিক্রি করবে বলে জানায়। এর ফলে বাজারে হলদে ধাতুটির জোগান বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
২) মার্কিন মুলুকের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা জোরালো হওয়ার কারণে লগ্নিকারীরা ফের সেখানকার শেয়ার বাজারে টাকা ঢালতে থাকেন। ফলে লগ্নির গন্তব্য হিসেবে সোনার কদর কমতে থাকে। এই কারণেই দেশে সাধারণ বাজারে পাকা সোনার দাম এক সময়ে ২৬ হাজারের নীচে নেমে গিয়েছিল। একই প্রভাব পড়ে পণ্য বাজারের ক্ষেত্রেও। |
|
কেমন যাবে ২০১৪
• নতুন বছর সবেমাত্র শুরু হয়েছে। মার্কিন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা ফের জোরালো হয়েছে গত কয়েক মাসে। ফলে এই বছর লগ্নি হিসেবে সোনা নিজের আকর্ষণ আরও হারাতে পারে। ফলে যে-সব লগ্নিকারী এই বছরে সোনা বিক্রি করে মুনাফা করবেন বলে মনে করেছিলেন, তাঁরা কিছুটা হলেও হতাশ হতে পারেন।
• তবে আশার আলোও রয়েছে। কেন্দ্র যদি বিদেশি মুদ্রার লেনদেন ঘাটতি কমাতে ফের সোনা আমদানির উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তা হলে বাজারে সোনার জোগান কমবে। সে ক্ষেত্রে দেশে তার দাম বাড়তে পারে। লগ্নিকারীদের সেই সুযোগের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। তখন হাতে থাকা সোনা বিক্রি করতে পারেন।
• বিশ্ব বাজারের চাহিদার দিকে লক্ষ রেখে সোনা উত্তোলনকারী সংস্থাগুলি যদি খননের পরিমাণ কমায়, সে ক্ষেত্রে দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
• লগ্নিকারীদের অবশ্য হতাশ হওয়ার কারণ নেই। কারণ সাধারণত দেখা গিয়েছে দীর্ঘ মেয়াদে সোনার দাম প্রায় সব সময়ই ঊর্ধ্বমুখী। ফলে এই বছরে দাম কম থাকার সময়ে সোনা কিনে রাখতে পারেন। পরে দর বাড়লে তা বিক্রি করে লাভ করার সুযোগ থাকবে। |
রুপো |
কেমন গেল ২০১৩
সাধারণ ভাবে রুপোর দাম সোনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে বাড়ে-কমে। গত বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
কেমন যাবে ২০১৪
• এ বছরও রুপোর দামে খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে মনে করা হচ্ছে না।
• যেহেতু গয়না ছাড়াও বিভিন্ন শিল্পে রুপো ব্যবহার হয়, সে ক্ষেত্রে ধাতুটির দাম খুব সামান্য হলেও বাড়তে পারে।
• তবে এই দর বৃদ্ধি কখনওই ১০ শতাংশের বেশি হবে না বলেই তাঁদের ধারণা। তবে সব মিলিয়ে সোনার চেয়ে বেশি হারে বাড়তে পারে রুপোর দাম। ফলে বেশি দিন ধরে লগ্নির ক্ষেত্রে রুপোও লাভজনক হতে পারে। |
অশোধিত তেল |
কেমন গেল ২০১৩
পণ্য বাজারে লগ্নিকারীদের অন্যতম গন্তব্য অশোধিত তেল। অশোধিত তেলের দরের উপর দেশে পেট্রোল-ডিজেলের মতো পণ্যের দাম নির্ভর করে এবং তার উপর মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি অনেকটাই নির্ভরশীল। সে জন্য সাধারণ লগ্নিকারীরা ছাড়াও, বিভিন্ন তেল সংস্থা ও কেন্দ্র এর দামের উপর নজর রাখে। ২০১৩ জুড়েই এর দরকে ওঠা-নামা করতে দেখেছি।
কেমন যাবে ২০১৪
• অন্য পণ্যের মতো অশোধিত তেলের দামও চাহিদা ও জোগানের উপর নির্ভর করে। যে-কারণে মার্কিন অর্থনীতি পুরোপুরি ঘুরে না-দাঁড়ানো পর্যন্ত তার চাহিদা সে রকম ভাবে বাড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে জোগানে ঘাটতি দেখা যাবে না। ফলে পণ্য বাজার-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার দামও খুব একটা বাড়বে না বলেই ধারণা।
• সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় প্রকাশ, এক মাসের গড় হিসেবে বিশ্বে অশোধিত তেলের উৎপাদন ২০১২-র তুলনায় বেড়েছে ২০%। যা কিনা এই মুহূর্তে বিশ্বে মোট চাহিদা মেটানোর পক্ষে যথেষ্ট। ফলে আগামী দিনে আমেরিকা ও ইউরোপের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল না-হলে, পণ্যটির দামেও স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে। |
তামা |
কেমন গেল ২০১৩
গত বছরে তামার ক্ষেত্রে পণ্য বাজারে ক্রমাগত উত্থান দেখা গিয়েছে। লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জে তামার জোগান কমেছে। চিনে বেড়েছে তার চাহিদা। ফলে সব মিলিয়ে বিশ্ব বাজারে মূল ধাতুটির দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। যে-কারণে আগাম পণ্যের বাজারেও ধাতুটির দাম ঊর্ধ্বমুখী।
কেমন যাবে ২০১৪
• ২০১৩-র দৌড় নতুন বছরেও বজায় থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতির হাল ভাল হলে বিভিন্ন শিল্পে তামার চাহিদা বাড়বে। সে ক্ষেত্রে এর দাম আরও বাড়তে পারে।
• ভারতে ডলারের দামে স্থিতাবস্থা বজায় থাকলে এমসিএক্স, এন সি ডি ই এক্স-এর মতো পণ্য বাজারে ধাতুটির দাম বাড়তে পারে। ফলে সুযোগ বুঝে লগ্নি করতে পারলে পণ্য বাজারে তামা থেকে মুনাফার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। |
দাম কম, তা-ও মুনাফা |
পণ্যের দাম কম থাকার সুযোগ নিয়ে লগ্নি করতে পারলে মুনাফা করা অসম্ভব নয়। তবে তা হতে হবে দীর্ঘ মেয়াদে।
• আগাম পণ্য লেনদেনের বাজারে সোনা, রুপো তো বটেই, টাকা লাগানো যেতে পারে তামা বা অশোধিত তেলের মতো পণ্যেও। দাম কম থাকার সময়ে পণ্য বেচার জন্য চুক্তি করে রাখলে, পরে দাম বাড়লে তা বিক্রির সুযোগ অবশ্যই রয়েছে।
• দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নির লক্ষ্যে সাধারণ বাজারে সোনা বা রুপো কিনতে পারেন।
• লগ্নি করতে পারেন কাগুজে সোনায়। বেছে নিতে পারেন বিভিন্ন সংস্থার গোল্ড ইটিএফ ফান্ড। |
লগ্নিকারীদের কর্তব্য |
আপাতত যা অবস্থা, তাতে পণ্য বাজারে লগ্নিকারীদের নিয়মিত কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে—
• ডলারে টাকার দরের উত্থান-পতন। অনেক সময়েই দেখা যায়, বিদেশে কোনও পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য ভাবে কমলেও, দেশে ডলারে টাকার দামের পতন হওয়ার কারণে এখানে সেই একই পণ্যের দাম ততটা কমে না। বিশেষত যে-সব পণ্য আমদানি করতে হয়, তাদের ক্ষেত্রে ডলার ও টাকার দরের ওঠা-পড়া নিয়মিত পর্যালোচনা করতে হবে।
• বেশ কয়েক মাস আগেও, মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক বাজার থেকে বন্ড কেনা বন্ধ করবে বলে জানানোয়, ভারতে শেয়ার বাজার পড়েছিল। পাশাপাশি, টাকার দাম কমে যাওয়ায় পেট্রোপণ্য-সহ নানা পণ্যের দামও বেড়েছিল। ফলে আগামী দিনেও কোনও পণ্যে লগ্নির ক্ষেত্রে আমেরিকার আর্থিক গতিবিধি কোন দিকে যাচ্ছে, সে দিকে চোখ রাখুন।
• বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চিনের শিল্প বৃদ্ধি কী রকম হচ্ছে, সে দিকে লক্ষ রাখলেও, বিশ্ব অর্থনীতি সম্পর্কে একটা আঁচ পাওয়া সম্ভব। |
লেখক পণ্য বাজার বিশেষজ্ঞ (মতামত ব্যক্তিগত) |
|