হুমকি বা ভয় দেখিয়ে নয়। নরম গলায় বিপদের কথা বোঝাতেই রাতারাতি পাল্টে গেল পাড়া। ‘হুক’ করে বিদ্যুৎ টানা আর নয়, টাকা জমা পড়ল বৈধ সংযোগ নেওয়ার জন্য।
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগমের উদ্যোগে এমনই পরিবর্তন এসেছে বীরভূমের সিউড়ি ২ ব্লকের তাপাইপুর -দাসপাড়ায়।
২৬টি পরিবারের বাস ওই পাড়াতে। বাসিন্দাদের অনেকেই আদিবাসী। রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পে ন’মাস আগে পাড়ার ছ’টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ যায়। প্রাপক তালিকায় নাম না থাকায় গ্রামের কিছু এপিএল এবং বিপিএল পরিবার ছিল অন্ধকারেই। এলাকার শিবা দাস, বংশী সরেন, পূর্ণিমা দাস, সোম মুর্মুদের দাবি, “বৈধ সংযোগ দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ দফতরে বহু বার বলেছি। তবে কাজ হয়নি।” |
বাড়িতে বসেছে মিটার। সিউড়ির তাপাইপুর -দাসপাড়ায়। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত। |
সেই কাজই হল, তবে অন্য ভাবে। সোমবার প্রশাসনিক বৈঠকে বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের সঙ্গে জেলায় যান বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান। বৈঠকের পরে বিদ্যুদয়নের কাজ কেমন চলছে তা দেখতে দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বেরোন তিনি। প্রশাসন সূত্রের খবর, সিউড়ি -বোলপুর রাস্তার ধারের ছোট গ্রাম তাপাইপুর -দাসপাড়ায় ঢুকে হুকিংয়ের বহর দেখে অবাক হয়ে যান ওই বিদ্যুৎ -কর্তা। সরাসরি বাসিন্দাদের কাছে জানতে চান, “আপনারা হুক করে বাড়িতে আলো জ্বালাচ্ছেন কেন ! এতে তো বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে ! ” সমস্বরে দাবি করা হয়, “মিটার বসিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ দফতরকে বলেছি। তার পরেও বিদ্যুৎ আসেনি। আমাদের উপায় ছিল না ! ”
নারায়ণস্বরূপ নিগম তখন এলাকাবাসীর কাছে জানতে চান, বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা হলে, তা নিতে তাঁরা আগ্রহী কি না। সম্মতি পেতেই সেখানে হাজির বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার জেলা আধিকারিকদের তিনি দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন। সংযোগ পেতে গেলে বিপিএলদের কোনও খরচ লাগবে না এবং এপিএলদের মাত্র ৪৩৭ টাকা লাগবে এ কথাও জানান।
মঙ্গলবার সকালে পাড়ার ১২টি বাড়িতে মিটার বসে যায়। পাড়ার বাকি আটটি এপিএল পরিবারও বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরকে জানিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব তারাও সংযোগ নেবে।
বিদ্যুৎ চুরি রুখতে যাওয়া বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে জনতার খণ্ডযুদ্ধ এ রাজ্যে নতুন নয়। ২০১১ -র ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে বিদ্যুৎ দফতরের এমনই এক অভিযানে পুলিশ গুলি চালানোয় প্রাণ যায় দু’জনের। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা সূত্রের খবর, তার পর থেকে বিরোধের রাস্তা ছেড়ে, আধিকারিকেরা বোঝানোর পথে হাঁটছেন। খোদ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান বলছেন, “বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে জানি। তবে বৈধ বিদ্যুৎ নেওয়ার জন্য আমরা বাসিন্দাদের বোঝাব। প্রয়োজনে আরও বেশি করে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে শিবির করা হবে।” তাপাইপুর -দাসপাড়ার একাধিক বাসিন্দা বলেন, “এত সহজে ও অল্প টাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায়, ওই সাহেব পাড়ায় না এলে জানতেই পারতাম না।”
তবে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ডিভিশনাল ম্যানেজার (সিউড়ি ) কৃষ্ণকান্ত মিশ্র বলেছেন, “এর আগে ওই পাড়ার কেউ আমাদের কাছে বৈধ সংযোগ চেয়ে আবেদন করেননি। এক -একটি শিবির থেকে দিনে গড়ে ১০০ -১৫০টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। ওঁদেরও দেওয়া হত।”
এই চাপান -উতোর থেকে সরে সদ্য বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া তাপাইপুর -দাসপাড়ার স্কুলপড়ুয়া, গৃহবধূরা বলছেন, “এ বার আলো জ্বালাব। কিন্তু কোনও অপরাধ বোধ থাকবে না।” |