চাষিদের ক্রেডিট কার্ড ও নথিপত্র নিয়ে, তাঁদের নামে বর্ধমান গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়ার একটি চক্রকে হাতেনাতে ধরেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে ওই প্রতারণা কান্ডে জড়িত অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে জামালপুর থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, চক্রটি এতদিন বিভিন্ন চাষির কাছ থেকে ব্যাঙ্ক ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে নথিপত্র আদায় করতো। ব্যাঙ্ক ওই চাষির নামে ঋণ মঞ্জুর করলেও, ঋণের টাকা হাতে পেতেন না চাষি। মাঝপথে তা নিয়ে নিত ওই চক্র। শেষে চাষি ঋণখেলাপি হয়ে পড়লে ব্যাঙ্কের অফিসারেরা তাঁর বাড়িতে গিয়ে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ করলে চাষি জানতে পারতেন তার নামে বিপুল ঋণ নেওয়া হয়েছে।
বর্ধমানের এসপি সৈয়দ মহম্ম হোসেন মির্জা বলেন, “ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের যোগসাজসে একটি চক্র চাষিদের কিষান ক্রেডিট কার্ডের মাধম্যে ওই ঋণ নিত। ফরিদপুরের ডাঙা গ্রামের আখতার আলি নামে এক যুবক জামালপুর থানায় এই ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ আপাতত এমন সাত চাষির নাম পেয়েছে, যাঁদের নামে এভাবে মোট ৮ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার ঋণ নেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের জামালপুর শাখা থেকে। ব্যাঙ্কের দুই দালাল সঞ্জয় মিত্র ও সুমিত আদক এবং ব্যাঙ্কের ঝাড়ুদার প্রদীপ পাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত ব্যাঙ্কের এক ফিল্ড অফিসার-সহ আরও দুজনকে খোঁজা হচ্ছে।” |
অভিযোগকারী আখতার আলির দাবি, তিনি ওই ব্যাঙ্কের শাখা থেকে আগে একবার ঋণ নিয়ে তা শোধ করেন। পরে ফের ঋণের দরকার হলে তিনি ওই দুই দালালের হাতে নিজের ক্রেডিট কার্ড, জমি ও বাড়ির দলিল তুলে দেন। ওই দু’জন তাঁকে আশ্বস্ত করেন, তিনি ঋণ পাবেন। পরে তাঁরা তাঁকে জানান, ব্যাঙ্ক ঋণ দিতে নারাজ। কিন্তু জমা দেওয়া দলিল তাঁরা তাঁকে ফেরত দেননি। মাত্র কয়েকদিন আগে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের রিকভারি দল তাঁর খোঁজে আসে। ওই দলের সদস্যেরা তাঁকে জানান, তাঁর নামে ১ লক্ষ ৯১ হাজার ও ৭৯ হাজার টাকার দু’টি ঋণ অনাদায়ি হয়ে পড়ে রয়েছে। এরপরেই তিনি জামালপুর থানায় ওই দুই দালাল সঞ্জয় ও সুমিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বর্ধমান অঞ্চল অফিস সূত্রে বলা হয়েছে, ব্যাঙ্কের তরফেও ঘটনাটি নিয়ে পৃথক তদন্ত শুরু হয়েছে। ব্যাঙ্কের পদস্থ কর্তারা ঘনঘন ওই শাখায় যাচ্ছেন। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পুলিশ শাখা প্রবন্ধক অসিত চট্টোপাধ্যায় ও সহ-শাখা প্রবন্ধক চৈতন্য যশকে দফায় দফায় জেরা করেছে। দু’জনকেই জেলার বাইরে যেতে না বলা হয়েছে। ওই দুই আধিকারিক অবশ্য ঘটনাটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাননি। বুধবার ধৃতদের আদালতে তুলে পাঁচদিনে জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। পুলিশের আশা, এদের জেরা করে ব্যাঙ্কের কয়েকজনের এই চক্রে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলবে। |