কাজ শুরুর দু’বছরের মধ্যে প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। অথচ, ছ’বছর কেটে গেলেও শেষ হল না কাটোয়ার ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের’ কাজ। এমনকী যেটুকু হয়েছে তাও পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে পুরসভা। সম্প্রতি কাটোয়ার পুরপ্রধান শুভ্রা রায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে চিঠি দিয়ে ওই প্রকল্পে কী কী সমস্যা আছে, তাও জানিয়েছেন। পুরসভার দাবি, প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হচ্ছে না বলে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেরও অনুমোদন মিলছে না।
অথচ, তিন বছর আগেই কাটোয়ার এই প্রকল্পটির কাজ ‘শেষ’ হয়ে গিয়েছে বলে খাতায় কলমে দাবি করেছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। বিষয়টি নিয়ে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগও করেছিলেন কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। জবাবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কর্তারা জানিয়েছিলেন, ওই প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তাই ‘কাজ শেষ’ বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু বাকি পাঁচ শতাংশর কাজ এখনও কেন শেষ হল না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুরপ্রধান তাঁর চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, প্রকল্প চত্বরে পাঁচিল ও আলো লাগানোর কাজ অসম্পূর্ণ। ফলে প্রকল্প এলাকার ভিতর দিনদিন অসামাজিক কাজকর্ম বাড়ছে। অন্যদিকে, নিম্নমানের কাজ হওয়ার জন্য এলাকায় দূষণ বাড়ছে। অথচ, দূষণরোধের লক্ষ্যেই প্রকল্পটি নিয়েছিল কাটোয়া পুরসভা।
২০০৩ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্রকল্পে’ শহরের নর্দমার জল পরিশোধন করে ভাগীরথীতে ফেলার অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। দায়িত্ব পায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। ভাগীরথী অজয় নদ লাগোয়া (কাটোয়া পুরসভার অতিথিশালা শ্রাবণীর পিছনে) ৮ একর জায়গা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হাতে তুলে দেয় কাটোয়া পুরসভা। ১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকার প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালে। প্রথম পর্যায়ে কাটোয়া শহরের ১, ২, ৩, ৪, ১৫ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডকে এই পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওই ওয়ার্ডগুলির নোংরা জল দু’টি বড় নর্দমা ও একটি ভূগর্ভস্থ নালার মধ্য দিয়ে পরিশোধন প্রকল্পে পড়বে। সেখান থেকে শোধিত জল ভাগীরথীতে ফেলা হবে।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার মূল ভবনের পিছন দিক দিয়ে এবং গোয়ালপাড়া ঘাটের কাছ দিয়ে নর্দমার জল ভূগর্ভস্থ নালার মধ্য দিয়ে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে তিনটি ধাপে জল শোধন করে ভাগীরথীতে ফেলা হচ্ছে। আগে ওই এলাকার নর্দমার জল সরাসরি ভাগীরথীতে গিয়ে পড়ত। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দাবি, শোধনের পরে নর্দমার জলের দূষণমাত্রা অনেকটাই কমেছে। তারপরে তা ভাগীরথীতে ফেলা হচ্ছে। তবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দাবির সঙ্গে একমত নয় কাটোয়া পুরসভা। তাদের অভিযোগ, জল শোধন ঠিকঠাক হচ্ছে না বলেই এলাকা দূষিত হচ্ছে। পুরসভার দাবি, গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়ে সমস্যাগুলো মেটানোর জন্য বলা হয়েছে। এমনকী ১০ ডিসেম্বর (মেমো নং-১০৭৫/ ইঞ্জি) পুরপ্রধান যে চিঠি দিয়েছিলেন তার কোনও জবাবও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর দেয়নি। কাটোয়ার বিধায়ক তথা কাউন্সিলর রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “অসম্পূর্ণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট হস্তান্তর করার চেষ্টা করেছিল পিএচই। এসডিও (কাটোয়া) এ নিয়ে বৈঠকও করেছিলেন। আমরা কাজ সম্পূর্ণ করে নিয়মমাফিক দফতরের মধ্যে হস্তান্তর করার কথা বলেছি।” এই বৈঠকের পরেও বছর পার হতে চললেও দাবিগুলি পূরণ না হওয়ায় ফের চিঠি দিয়েছেন পুরপ্রধান শুভ্রা রায়।
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর কাটোয়া পুরসভার অভিযোগ মেনেও নিয়েছে। দফতরের বাস্তুকারেরাই জানাচ্ছেন, নোংরা জল শোধনের সময়ে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। তাঁদের দাবি, সাধারণত এই ধরণের প্রকল্প শহরের বাইরে হয়। তবে দুর্গন্ধ নিয়ন্ত্রণের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। একই সঙ্গে জানা গিয়েছে, জল শোধনের জন্য খাল তৈরির কাজ এখনও বাকি রয়েছে। বছর দু’য়েক আগে বর্ষায় নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রকল্পের কাজ এখনও সংস্কার করতে পারেনি পিএইচই। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না কেন? দফতরের কাটোয়া সহকারী বাস্তুকার অশ্রুকুমার রায় বলেন, “আমাদের হাতে টাকা নেই। তাই বাকি কাজ শেষ করতে পারছি না। দফতর ফের প্রজেক্ট রিপোর্ট চেয়েছিল। আমরা তা পাঠিয়ে দিয়েছি। প্রজেক্ট অনুমোদন হয়ে এলেই আমরা কাজ শুরু করে দেব।”
কবে অনুমোদন পাওয়া যাবে? উত্তর নেই। ততদিন প্রকল্প এলাকার চারপাশের বাসিন্দাদের ভবিতব্য বোধহয় দূষণই।
|
কোথায় খামতি |
• তিন বছর আগে এই প্রকল্পটির কাজ শেষ বলে খাতায় কলমে দাবি করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর।
• তবে সীমানা প্রাচীর ও আলো লাগানোর কাজ এখনও অসম্পূর্ণ। বাকি খাল তৈরির কাজও।
• ফলে দিন দিন বাড়ছে অসামাজিক কাজকর্ম।
• নর্দমার জল ঠিকমতো পরিশোধন না হওয়ায় দুর্গন্ধে দূষণ ছড়াচ্ছে।
• টাকা না থাকায় জল শোধন প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। |
|