বর্ষশেষের অনুভব বাঁধা পড়ল জন্মদিনের সুতোয়
দু’দিকে বিনুনি করে চুল বাঁধতে ভালবাসে কোয়েল। সোনালির ইচ্ছে করে নদীর পাশের বাঁধ দিয়ে হাঁটতে। বাংলা কবিতা পড়তে পেলে আর কিছু চায় না রূপবন্তী।
আবার, শ্রেয়সী নিজের মনেই থাকতে ভালবাসে।
এদের পাঁচ জনেরই জন্মদিন ৩১ ডিসেম্বর। ঠিকানা-ও এক। তারা থাকে জলপাইগুড়ি শহরের করলা নদীর বাঁধ ঘেষা ‘অনুভব’ হোমে। হোমের কর্ণধার দীপশ্রী রায় বলেন, “এই কিশোরীদের নানা জায়গা থেকে নানা সময়ে উদ্ধার করে হোমে পাঠানো হয়েছে। এদের অনেকের জন্মদিন কবে, তা আমরা নির্দিষ্ট ভাবে জানি না। তাই হোমের মেয়েদের জন্মদিন ৩১ ডিসেম্বর পালন করা হয়।”
জলপাইগুড়ির অনুভব হোমে আবাসিকদের জন্মদিন পালন। ছবি: সন্দীপ পাল।
অনাথ, ভবঘুরে বা নির্যাতিতা শিশু কিশোরীদের থাকার এই সরকারি হোমে তাই মঙ্গলবার সকাল থেকেই সাজসজ্জার তোড়জোড় শুরু হয়। রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয়েছে ঘর। আনা হয়েছে কেক। বড় কড়াইতে শুরু হয়ে যায় পায়েস রান্নাও।
এ বছরই হোমে প্রথম এসেছে আয়ুষি। মাস ছয়েক আগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতঘুরে তার ঠাঁই হয় অনুভবে। আবার কোয়েল ২০০৫ সালে হোম প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই অনুভবে রয়েছে। কোয়েল জানায়, আয়ুষি প্রথম খুব মন খারাপ করে থাকত। লুকিয়ে কাঁদত। তার কথায়, “কয়েকদিন আগে বড়দিনের রাতে ওকে শহরের আলো দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। একটু খুশি হয়েছিল। আজকে হোমেই সাজসজ্জা দেখে ও কিন্তু খুব খুশি। সকালে ওকে ডেকে বলেছি আজ ওর জন্মদিন।” আনন্দের কথাতেও বিষাদের ছাপ কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যায়। কোয়েল বলে, “স্কুলের বন্ধুরা জানে আমার জন্মদিনও ৩১ ডিসেম্বর। আসল জন্মদিনটা মনে নেই।” হোম সূত্রে খবর, বেশিরভাগ আবাসিক হারিয়ে গিয়ে হোমে এসেছে। বাড়ির ঠিকানার সঙ্গে জন্মদিনও তাদের স্মৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছে।
বিস্ফোরণের আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি। তবে তার মধ্যেই ইংরেজি বর্ষশেষের দিনে শহরের কয়েকটি জায়গায় দেখা যাচ্ছে আলোর সাজও। নিজেদের মতো করে সেই উৎসবে সামিল হয়েছে সোনালি, শ্রেয়সীরাও। সকলে মিলে কেক কেটে উৎসবের শুরু। এর পরে নিজেদের তৈরি কার্ড নিজেদেরই দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময়। সকলকে বসিয়ে পায়েস খাইয়ে দিলেন দীপশ্রীদেবী। বিকেলে রবীন্দ্রনাথের ‘সামান্য ক্ষতি’ নাটকে অভিনয় করলেন আবাসিকেরাই। তারপরে তোড়া নামের একটি নৃত্যনাট্য। তোড়া-র রচয়িতা দীপশ্রীদেবী নিজেই।
এই দিনটিতে কখনও হারিয়ে যাওয়া বাড়ির কথা মনে পড়ে। সোনালির যেমন কেবল মনে রয়েছে, তার বাড়ি কোনও একটি চা বাগান। নিজেই ছবি এঁকে কার্ড তৈরি করে সকলকে দিয়েছে সোনালি। কোনও কার্ডে পাহাড়, কোথাও নদী, আবার কোনও কার্ডে ধান খেতের ছবি। সোনালির বিছানার পাশের দেওয়ালে লাগিয়ে রাখা একটি কার্ডে মোমবাতির ছবি। নিজেই সেই ছবি এঁকে রং পেন্সিল দিয়ে নীচে লিখে রেখেছে, শুভ জন্মদিন, ৩১ ডিসেম্বর।
বছরভর তাই বর্ষশেষের দিনটার জন্য অপেক্ষা করে এই কিশোরীরা।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.