শুশুনিয়া পাহাড়ের নীচে পিকনিক করতে এসেছিলেন লোকজন। দূর থেকে ধামসা মাদলের বোল শুনেই তাঁদের অনেকে ভিড় জমালেন শিউলিবোনা গ্রামে। সেখানে তখন চলছে আদিবাসী নৃত্য।
শময়িতা মঠের উদ্যোগে মঙ্গলবার থেকে শুশুনিয়া পাহাড় লাগোয়া শিউলিবোনা গ্রামে শুরু হল দু’দিনের খেরওয়াল তুখৈ (গ্রামীন মেলা)। গত ১৮ বছর ধরে এখানকার বাসিন্দা ৭০টি আদিবাসী পরিবারের কাছে এই মেলাই বছরের সেরা আকর্ষণ। এই সময়ে তাঁদের ঘরে ঘরে আত্মীয়রা আসেন। দু’দিন ধরে মেলায় আগত জনসাধারণের জন্য খাওয়াদাওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে মঠের তরফে। সেই সঙ্গে রয়েছে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। স্থানীয় আদিবাসী শিল্পীদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকার শিল্পীরা এখানে তাঁদের নিজস্ব পরাম্পরায় নাচ প্রদর্শন করতে আসেন।
শময়িতা মঠের সম্পাদক ঋষিঋদ্ধা অনাহতা বলেন, “এই মেলায় শিউলিবোনার মানুষ যেমন আনন্দিত হন, তেমনই পর্যটকেরাও মেলাটা উপভোগ করেন। হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় এখানে। সকলের সামনে আদিবাসী শিল্প সংস্কৃতিকে তুলে ধরাই আমাদের এই মেলার মূল লক্ষ্য।” শময়িতা মঠ এই মেলার মূল উদ্যোক্তা হলেও গ্রামবাসীরাও এই মেলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে পড়েছেন। এত বছর ধরে গ্রামের ফাঁকা মাঠে অস্থায়ী মঞ্চ গড়েই মেলার অনুষ্ঠান হত। সম্প্রতি গ্রামের বাসিন্দা আলোকনাথ হেমব্রম মেলার মঞ্চ গড়ার জন্য কিছুটা জায়গা মঠ কর্তৃপক্ষকে দান করেছেন। সেখানেই স্থায়ী মঞ্চ গড়ার কাজ শুরু করেছে শময়িতা মঠ কর্তৃপক্ষ। আলোকনাথবাবু বলেন, “এই মেলাই আমাদের গ্রামের সবচেয়ে বড় উৎসব। মেলার দু’দিন মানুষের সমাগমে পুরো গ্রাম গমগম করে। স্থায়ী মঞ্চ না থাকায় অনুষ্ঠান করতে সমস্যা হচ্ছিল। তাই মঞ্চের জন্য জমি দান করেছি।” গ্রামের বাসিন্দা নরেন্দ্রনাথ সোরেন, রাবণ হাঁসদা বলেন, “এই মেলা আমাদের গ্রামের উৎসব। দূর-দূরান্ত থেকে আমাদের আত্মীয়েরা এই সময় আমাদের বাড়িতে আসেন। দু’দিন ধরে সবাইকে নিয়ে আনন্দে মেতে উঠি।”
শুধু গ্রামবাসীদের কাছেই নয়, জেলার অন্য এলাকার মানুষদের কাছে এই আদিবাসী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বছরের অন্যতম বড় আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। এ দিন মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন বড়জোড়ার শুভময় ঘোষাল, বিষ্ণুপুরের তারাপদ রক্ষিতরা। তাঁদের কথায়, “শুশুনিয়ায় শুনলাম শিউলিবোনায় মেলা বসেছে। তাই দেখতে এলাম। আদিবাসী নৃত্যানুষ্ঠান দেখে মনে হচ্ছে, এখানে না এলে পরে আফশোস করতে হত।” কলকাতার বাগবাজার থেকে সপরিবারে বিষ্ণুপুর বেড়াতে এসেছিলেন চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়। শুশুনিয়া পাহাড় দেখতে এসেছিলেন তাঁরা। মেলা দেখে তাঁরা বলেন, “হঠাৎ ধামসা মাদলের শব্দ কানে এল। খুঁজতে খুঁজতে এসে দেখি এখানে তো আদিবাসী নাচ-গানের পুরো দস্তুর মেলা বসে গিয়েছে। মন ভরে গেল।’’ |