তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের ‘ওয়াটার করিডর’-এর কাজ করানোর সময় ডিভিসি-র ইঞ্জিনিয়ারদের উপরে হামলার ঘটনায় পুলিশ যে কড়া পদক্ষেপ করবে, সেই ইঙ্গিত মিলেছিল ঘটনার পরেই। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্ত পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনকে ধরল পুলিশ।
সোমবার বিকালে নিতুড়িয়া থানার রায়বাঁধ এলাকায় ‘ওয়াটার করিডর’-এর মাটি কাটার সময়ে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা কাজে বাধা দেন। ডিভিসি-র অভিযোগ, ওই গ্রামবাসীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে কাজের তদারকি করা ডিভিসি-র দুই ইঞ্জিনিয়ার এবং মাটি কাটার যন্ত্রের অপারেটার আহত হন। আহতদের মঙ্গলবার আসানসোলে একটি বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে কিছু পরীক্ষা করানো হয়েছে।
সোমবারের হামলার ঘটনায় ডিভিসি কর্তৃপক্ষ নিতুড়িয়া থানায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন ‘ওয়াটার করিডর’-এর কাজে বাধা দেওয়া ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’-র অন্যতম সদস্য মাগারাম মণ্ডল। অন্য দুই ধৃত হলেন লধাই মাহাতো ও ছুনকু মাঝি। তিন জনই রায়বাঁধের বাসিন্দা। সরকারি কাজে বাধা দেওয়া-সহ একাধিক ধারায় ধৃতদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এ দিন রঘুনাথপুর আদালত ধৃতদের ছ’দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেয়। ঘটনা হল, এই প্রথম ডিভিসি-র প্রকল্পে কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের জেল হাজত হল। রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তদন্তে জানা গিয়েছে, ধৃতেরা ইঞ্জিনিয়ারদের উপরে হামলার ঘটনায় জড়িত ছিলেন।”
বস্তুত, হামলার পরেই রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো জানিয়েছিলেন, ডিভিসি অনিচ্ছুক জমি-মালিকদের জমিতে কাজ করছে না। ফলে, যাঁরা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সোমবার গভীর রাতেই রায়বাঁধ থেকে ধরা হয় লধাই ও ছুনকুকে। মঙ্গলবার সকালে রঘুনাথপুরে এসেছিলেন জমিরক্ষা কমিটির সক্রিয় সদস্য মাগারাম মণ্ডল। সেখানেই তাঁকে গ্রেফতার করে রঘুনাথপুর থানার পুলিশ। মাগারামবাবুর অবশ্য দাবি, “ঘটনার সময়ে আমরা কেউই সেখানে ছিলাম না। যে সমস্ত জমি মালিক এখনও ক্ষতিপূরনের চেক বা টাকা নেননি, তাঁদেরই একাংশ ওয়াটার করিডরের কাজের বিরোধিতা করেছিলেন। পাথর ছোড়ার ঘটনাও ঘটেনি। কিন্তু, ডিভিসি কর্তৃপক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। আর পুলিশও ঘটনার তদন্ত না করে স্রেফ অভিযোগের ভিত্তিতে রাতে বাড়িতে ঢুকে নির্দোষ ব্যক্তিদের গ্রেফতার করেছে।” অভিযোগে তাঁর নামও রয়েছে জেনেই তিনি এ দিন রঘুনাথপুরে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে এসেছিলেন বলে দাবি করেছেন মাগারামবাবু। যদিও পুলিশের দাবি, রঘুনাথপুরের বাজার এলাকা থেকে তাঁকে ধরা হয়েছে।
এ দিন অবশ্য পাইপলাইন পাতার জন্য মাটি কাটার কাজ মোটামুটি নির্বিঘ্নেই করেছে বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা। ঘন্টাখানেক কাজ হওয়ার পরে জনা দশেক গ্রামবাসী এসে বলেন, তাঁরা এখনও জমির ক্ষতিপূরণ পাননি। ফলে এই জমিতে কাজ করা যাবে না। কিন্তু, সক্রিয়ভাবে কাজে বাধা দেওয়ার পথে তাঁরা হাঁটেননি। খবর পেয়ে ডিভিসি-র কিছু আধিকারিক এসে ওই গ্রামবাসীদের জানিয়ে দেন, ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে আলোচনায় বসা হবে। কাজ বন্ধ করা হবে না। ডিভিসি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মিত্র বলেন, “প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ করে আমাদের হাতে দিয়েছে। আমরা আইন অনুযায়ী আমাদের দখলে থাকা জমিতেই পাইপ পাতার কাজ করছি।”
|