বিক্ষোভ-অবস্থান অনেক বার হয়েছে। এ বার পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে ইঞ্জিনিয়ারদের উপরে হামলা হল। সোমবার বিকেলের এই ঘটনা নতুন করে আশঙ্কায় ফেলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ওই সংস্থাকে।
এ দিন বিকেলে নিতুড়িয়া ব্লকের রায়বাঁধ গ্রামের অদূরে ওয়াটার করিডরের (প্রকল্পে জল আনার পাইপলাইন বসানো) জন্য মাটি কাটার কাজ চলছিল। ঠিকাদার সংস্থার ওই কাজের তদারকি করছিলেন ডিভিসি-র দুই ইঞ্জিনিয়ার। অভিযোগ, সেই সময় কিছু স্থানীয় বাসিন্দা সেখানে জড়ো হয়ে কাজ অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি তোলেন। ওই গ্রামবাসীরা বলতে থাকেন, যে জমিতে ওয়াটার করিডরের কাজ হচ্ছে, তার ক্ষতিপূরণ এখনও নেননি অনেক জমি-মালিক। এই অবস্থায় কেন ডিভিসি সেখানে কাজ করছে? ডিভিসি-র এক পদস্থ কর্তা বলেন, “আচমকাই ওই পুরুষ-মহিলারা আমাদের ইঞ্জিনিয়ার এবং মাটি কাটার যন্ত্র লক্ষ করে পাছক ছুড়তে শুরু করে। পাথরের ঘায়ে দুই ইঞ্জিনিয়ারের পাশাপাশি চোট পান মাটি কাটার যন্ত্রের অপারেটর।” খবর পেয়ে ডিভিসি-র আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করেন। প্রকল্পের মধ্যে থাকা ডিভিসি-র চিকিৎসাকেন্দ্রে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। কারও চোট গুরুতর নয় বলেই সংস্থা সূত্রের খবর।
ওই ঘটনায় নিতুড়িয়া থানায় পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে পাঁচ গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। বস্তুত, ওয়াটার করিডরের কাজে প্রথম থেকেই বাধা দিয়ে আসছে অনিচ্ছুক জমি-মালিকদের একাংশকে নিয়ে গড়ে ওঠা ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’। জমি-জট কাটাতে জেলা প্রশাসন তো বটেই, এমনকী মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি জট কাটতে শুরু করেছে। অনেক অনিচ্ছুক জমি-মালিক ক্ষতিপূরণের টাকা ও চেক নিতেও শুরু করেছেন। এরই মধ্যে এ দিনের হামলার ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে ডিভিসি-র। ‘জমিরক্ষা সংগ্রাম কমিটি’-র নেতা সুবীর মণ্ডলের দাবি, “আমাদের সংগঠনের কেউ এই হামলার সঙ্গে জড়িত নন। তবে, স্থানীয় জমি-মালিক, যাঁরা এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা বা চেক নিতে অস্বীকার করেছেন, তাঁদের জমিতে ডিভিসি জোর করে কাজ করাতেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।” পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো অবশ্য বলেছেন, “এই প্রকল্প গোটা রাজ্যের পক্ষেই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া, ডিভিসি অনিচ্ছুকদের জমিতে কাজ করছে না। এই অবস্থায় কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিলে পুলিশ-প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে।” অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনই ওই প্রকল্পে জমিহারাদের কাজে নিয়োগের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবিতে রঘুনাথপুরে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে বিক্ষোভ অবস্থান করেছে জমিহারাদের অন্য সংগঠন ‘ল্যান্ডলুজারস অ্যাসোসিয়শন’। তাদের অভিযোগ, যে-সব জমিহারা প্রকল্পে অস্থায়ী কাজ পেয়েছন, তাঁদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। ডিভিসি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। |