মোটর বাইক চোর সন্দেহে মারধর করা হচ্ছিল একই পরিবারের চার জনকে। চুরির অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতারও করে তাঁদের। যদিও পরে বাইকের মালিকের বাড়ি থেকেই ‘চোরাই’ গাড়িটি উদ্ধার হয়েছে বলে জানান তদন্তকারীরা।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক ইন্ধন থাকতে পারে বলে অনুমান। সোমবার ঘটনাস্থল হুগলির জাঙ্গিপাড়ার ফুরফুরাশরিফ। তৃণমূল শিবিরের খবর, ফুরফুরায় তৃণমূল দু’টি গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এক দিকে আছেন দলের প্রভাবশালী নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির এক শীর্ষকর্তা। বিরুদ্ধ গোষ্ঠীতে আছেন দলের অন্য এক নেতা। তিনিই কৌশলে ওই প্রভাবশালী নেতার দলবলের বিরুদ্ধে (যে যুবকের বিরুদ্ধে বাইক চুরির অভিযোগ তোলা হয় তিনি ওই গোষ্ঠীর সমর্থক বলে পরিচিত) লোকজনকে খেপিয়ে তোলেন বলে অভিযোগ। ঘটনার সময় ওই নেতা নিজে অবশ্য সেখানে ছিলেন না।
জাঙ্গিপাড়া ব্লক তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “গোষ্ঠী রাজনীতির কারণেই গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফুরফুরা পঞ্চায়েতে আমাদের দল হেরে গিয়েছিল। সঙ্ঘবদ্ধ হওয়া দূরের কথা, আবার অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটল। অনেকেরই এতে মদত আছে।” জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, “পরিস্থিতির দিকে আমরা নজর রাখছি। দলের কেউ বিশৃঙ্খলা করলে, বরদাস্ত করা হবে না। মারধরের ঘটনা দলীয় স্তরে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোষ প্রমাণিত হলে দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
এ দিকে, গণপ্রহারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় পুলিশকর্মীদের। মারধর খেয়েছেন তাঁরা। ভাঙচুর চলে পুলিশের গাড়িতে। গাড়ির চালককেও বেধড়ক মারধর করা হয়। এসডিপিও (শ্রীরামপুর) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ জানিয়েছে, ফুরফুরা থেকে কয়েক দিন ধরে পুলিশের কাছে মৌখিক অভিযোগ আসছিল, এলাকায় চোরের উপদ্রব হচ্ছে। যদিও নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের হয়নি।
সোমবার বিকেলে এলাকার এক যুবকের বিরুদ্ধে একটি মোটরবাইক চুরির অভিযোগ তোলে কিছু লোক। এর পরেই ওই যুবকের বাবা, দুই ভাই এবং অন্য এক ব্যক্তিকে ধরে পেটাতে শুরু করে একদল গ্রামবাসী। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
খবর পেয়ে জাঙ্গিপাড়ার একটি টহলদারি ভ্যান ঘটনাস্থলে যায়। অভিযোগ, পুলিশ ওই চারজনকে উদ্ধার করার চেষ্টা করতেই হামলাকারীরা তাঁদের ছেড়ে পুলিশের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশ সূত্রের খবর, গাড়িটির চালক জয়ন্ত পাত্রকে লাঠিপেটা করা হয়। তাঁর ডান হাতের একটি আঙুল ভেঙে গিয়েছে। আঙুলের কিছুটা অংশ কেটেও যায়। দুই কনস্টেবলকেও মারধর করা হয়। প্রাণে বাঁচতে দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ঢুকে পড়েন তাঁরা। বাঁশের ঘায়ে পুলিশের গাড়ির কাচ ভাঙে।
গোলমালের খবর পেয়ে সার্কেল ইনস্পেক্টর দাউদ মনসুর মহম্মদ এবং জাঙ্গিপাড়ার ওসি স্বপন ঠাকুর বাহিনী নিয়ে আসেন। শ্রীরামপুর পুলিশ লাইন থেকেও অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো হয়। জখমদের উদ্ধার করা হয়। জয়ন্তবাবুর অস্ত্রোপচার করাতে হবে। |