সম্পাদকীয় ২...
চিরতার জল
রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী কিছু স্পষ্ট কথা বলিয়াছেন। যথা পশ্চিমবঙ্গে পর্যটনের প্রাথমিক পরিকাঠামোটুকুও সবল নয়, পর্যটন কেন্দ্রের কর্তা ও কর্মীদের কাজের দক্ষতা এবং মানসিকতা হতাশাজনক, গোটা পর্যটন ব্যাপারটিই অবহেলিত। সকলই সত্য। তবে বহিরঙ্গের সত্য। একটি গভীরতর সত্য তিনি বলেন নাই। তাঁহার দোষ নাই, সেই সত্যটি সচরাচর কেহই বলেন না। তাহা এই যে, পশ্চিমবঙ্গে পর্যটনের সম্ভাবনা নিতান্ত সীমিত। বঙ্গবাসী এমন দেশটি কোথাও খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না ভাবিয়া পুলক বোধ করিতে পারেন, কিন্তু তাহাতে দেশভক্তি যতটা, সত্য তাহা অপেক্ষা অনেক কম। সর্বপ্রকার চেষ্টা করিলেও এই রাজ্যকে যথার্থ উচ্চ মানের পর্যটনের মানচিত্রে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য করিয়া তোলা কার্যত অসম্ভব। তাহার কারণ, ভূগোল তাহাকে মারিয়া রাখিয়াছে।
বস্তুত, পর্যটনের স্বাভাবিক সম্ভাবনার বিচারে এই রাজ্যটি প্রায় সব দিক দিয়াই দরিদ্র। তাইল্যান্ড বা বালি দূরস্থান, দিঘা বা মন্দারমণির পক্ষে গোয়া হওয়াও অসম্ভব, কারণ পশ্চিমবঙ্গে কোনও ভদ্রস্থ বেলাভূমিই নাই। পঙ্কিল সমুদ্রতটে ভাঙা-ঢেউয়ের ধাক্কায় সর্বাঙ্গে বালুকা মাখিয়া আম আদমি নিজগুণে সমুদ্রস্নানের আনন্দ উপভোগ করিতে পারেন, কিন্তু পিটুলিগোলা দুধ নয়। এ রাজ্যের পাহাড় চরিত্রে দুর্বল, অস্থির, ধস-প্রবণ। এই প্রাকৃতিক সত্যটি অস্বীকার করিয়া যথেচ্ছ নির্মাণের পরিণাম কী হইতে পারে, উত্তরাখণ্ড তাহা দেখিয়াছে। দার্জিলিং সুইজারল্যান্ড হইবে না, হইতে পারে না, কারণ হিমালয় আল্পস নহে। পরিবেশের কারণেই সুন্দরবনেও বড় মাপের পর্যটন কেন্দ্র গড়িয়া তোলা সম্ভব নয়, উচিতও নয়। হয়তো বিষ্ণুপুর বা চন্দ্রকেতুগড়ের মতো স্থানে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী পর্যটনের সম্ভাবনা আছে, কিন্তু তাহার জন্য যে চিন্তা, পরিকল্পনা এবং উদ্যোগ দরকার, তাহার স্বপ্ন দেখিবার সামর্থ্যও আপাতত পশ্চিমবঙ্গের নাই। সুতরাং কেন পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনের রাজধানী হইল না ভাবিয়া আক্ষেপ করিবার কোনও অর্থ নাই। তবে কি পর্যটন মন্ত্রী যে ত্রুটিগুলির কথা বলিয়াছেন, সেগুলি অবান্তর? তাহা দূর করিবার কোনও প্রয়োজন নাই? অবশ্যই আছে। পশ্চিমবঙ্গের রাস্তাঘাট উন্নত করা অবশ্যই জরুরি। পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে সুস্থ এবং ভদ্রজনোচিত পরিকাঠামো অবশ্যই কাম্য। পর্যটন কর্মীদের কাজের অভ্যাস অকল্পনীয় রকমের খারাপ, এমনকী ন্যূনতম পরিচ্ছন্নতার বোধটুকুও বহু ক্ষেত্রে তাঁহাদের মধ্যে নাই, ইহার প্রতিকার অবশ্যই দরকার। কিন্তু ইহা কেবল দিঘা বা দার্জিলিঙের সমস্যা নয়। সর্ব ক্ষেত্রেই এই রাজ্যের চিন্তা, অভ্যাস ও কাজের মান অনেক নীচে নামিয়া গিয়াছে। সমাজ নষ্ট হইলে রিসর্ট বাঁচে না। মন্ত্রিবর অবশ্যই যথাসাধ্য চেষ্টা করুন, তাহাই তাঁহার কাজ। তবে সেই কাজে অগ্রগতির জন্য কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্তও জরুরি। যে ভাবে পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে যথেচ্ছ নির্মাণ চলিতেছে, যে পরিমাণ জনসমাগমের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হইয়াছে ও হইতেছে, বহু ক্ষেত্রে পরিবেশ বিধির ন্যূনতম শর্তও অকাতরে লঙ্ঘিত হইতেছে, তাহাতে উন্নত পর্যটন দূরে থাকুক, কোনও সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখাই অসম্ভব। স্বর্গ রচনার খোয়াব দেখিবেন না, নরক যাহাতে নরকতর না হয়, তাহার জন্য চেষ্টা করিলেই ঢের হইবে। বছরের শুরুতে অপ্রিয় সত্য শুনিতে অধিকতর অপ্রিয় ঠেকিতে পারে, কিন্তু চিরতার জল প্রত্যুষেই পান করা ভাল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.