সম্পাদকীয় ১...
চেনা পথের পথিক
রাজনীতির চেনা ছকেই পা ফেলিয়াছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। নির্বাচনের পূর্বে তাঁহার প্রতিশ্রুতি ছিল, তিনি ক্ষমতায় আসিলে প্রত্যেক বাড়িতে দৈনিক ৭০০ লিটার জল বিনামূল্যে দিবেন। তিনি কথা রাখিয়াছেন। তাঁহার মধ্যবিত্ত সমর্থকরা উল্লসিত হইবেন। কিন্তু, দিল্লিতে যাঁহারা প্রকৃত ‘আম আদমি’, তাঁহাদের কয় শতাংশের বাড়িতে পুরসভার জলের লাইন পৌঁছাইয়াছে? আর পাঁচটি শহরের ন্যায় দিল্লিতেও তাঁহাদের নির্বিকল্প ভরসা রাস্তার বারোয়ারি কল। কাজেই, কেজরিওয়ালের বদান্যতা তাঁহাদের জীবনকে স্পর্শ করিবে না। তাঁহাদের নাম করিয়া মধ্যবিত্ত তোষণ নিতান্তই প্রবঞ্চনা হইল মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলি ঠিক যে প্রবঞ্চনাতে সিদ্ধহস্ত। অপর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অর্থাত্‌ বিদ্যুতের মাসুল হ্রাস কেজরিওয়াল রক্ষা করিয়াছেন। মধ্যবিত্তের মনোরঞ্জনের পথে আরও এক ধাপ। যে দেশের মহানগরীগুলিতেও গরিব মানুষকে হয় অন্ধকারে থাকিতে হয়, নয় চোরা পথে বিদ্যুতের সংযোগ টানিতে হয়, সেখানে তাঁহাদের উপকার করিবার ছলে বিদ্যুতের মাসুল কমানোকে নির্মম রসিকতা বলিলে অত্যুক্তি হয় না। হয় কেজরিওয়াল (এবং দেশের অন্যান্য রাজনীতিকরাও, আম আদমির দুঃখে যাঁহারা বিনিদ্র রজনী কাটান বলিয়া শোনা যায়) স্বীকার করিয়া লউন, আম আদমি তাঁহাদের বিজ্ঞাপনমাত্র, নচেত্‌ এই মধ্যবিত্ত তোষণের পথটি পরিত্যাগ করুন।
রাজনীতির স্রোতে আম আদমি কথাটি অনেকখানি পথ ভাসিয়া আসিয়াছে। এখন তাহার অর্থ দাঁড়াইয়াছে মধ্যবিত্ত। ভারতের চিরসুবিধাভোগী শ্রেণি। সব রাজনৈতিক দলই এই শ্রেণিটিকে চোখে হারায়, কারণ এক দিকে ইহা এক বিপুল ভোটব্যাঙ্ক, আর অন্য দিকে এই শ্রেণির জনমত গঠনের ক্ষমতা অনস্বীকার্য। কাজেই, নির্বাচনী ময়দানে তাহা দেবতুল্য। অতএব, প্রত্যেক বত্‌সর বাজেট পেশ করিবার সময় অর্থমন্ত্রীরা এই শ্রেণির জন্য রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি, গাড়ির তেলের ভর্তুকির ন্যায় হরেক নৈবেদ্য সাজাইয়া রাখেন। রেলমন্ত্রীরা রেলের ভাড়া অপরিবর্তিত রাখেন, রাজ্য সরকার মুরগির মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণ করিয়া দেয়। ‘আম আদমি’র নামে মধ্যবিত্তের উদ্দেশে এমন খয়রাতি বণ্টন অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ হইতে ভুল তো বটেই, কাজটি নৈতিকতার পরীক্ষাতেও পাশ করে না। কেজরিওয়াল ‘রাজনীতি’ করিতে আসিয়াছেন, কাজেই খেলার নিয়মটি দ্রুত রপ্ত করিয়া নেওয়া তাঁহার পক্ষে আবশ্যিক বইকী। দৃশ্যত তিনি সফল। গাঁধী একদা বলিয়াছিলেন, এই দেশে প্রত্যেকের প্রয়োজন মিটাইবার মতো সম্পদ আছে, কিন্তু লোভ মিটাইবার মতো নহে। তাঁহার মৃত্যুর পর প্রায় সাত দশক কাটিয়া গিয়াছে, দেশের সম্পদও অপ্রত্যাশিত রকম বাড়িয়াছে। কিন্তু, কথাটি এখনও সত্য। মধ্যবিত্তের যতটুকু প্রয়োজন, তাহা মিটাইবার যোগ্যতা এবং সম্পদ তাঁহাদেরই আছে। তাহাদের লোভ পূরণ করিবার দায় সরকারের নহে। সরকার তাহার সীমিত সামর্থ্য প্রকৃত আম আদমির জন্য ব্যয় করুক। করিবার মতো অনেক কাজই আছে। এমনকী, কেজরিওয়ালও চাহিলে বেশ কিছু কাজ করিতে পারেন। কিন্তু, শুধু খয়রাতির খেলায় মাতিলে কী হয়, তাহার মোক্ষম উদাহরণ ইউপিএ-র অর্থনীতি। বৃদ্ধির কথা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হওয়ায় অর্থনীতির উপকার তো হয় নাই বটেই, গরিবেরও কোনও লাভ হয় নাই। কাজেই, সত্যই যদি আম আদমির কথা কেহ ভাবিতে চাহেন, তাঁহার প্রধান কতর্ব্য অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পথে সহায়ক ভূমিকা পালন। যে নীতি আর্থিক বৃদ্ধির পথে প্রতিকূল হইবে, তাহার পুনর্বিবেচনা জরুরি। খুচরা ব্যবসায়ে বিদেশি বিনিয়োগের ন্যায় প্রশ্নে কেজরিওয়াল যে অবস্থান লইয়াছেন, এই বার তাহা ফিরিয়া দেখিতে হইবে। যত দিন ক্ষমতা অলীক দূরত্বে ছিল, নানান বিপ্লবে গা ভাসাইতে বাধা ছিল না। কিন্তু এখন তাঁহার দায়িত্ব অনেক। তাহা ভুলিলে চলিবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.