দুপুর থেকেই মহানগর মাতল বর্ষশেষের আনন্দে
ভিড়ের দিকে হুঁশ ছিল না। হাত ধরাধরি করে হেঁটে যাচ্ছিলেন পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাথ দিয়ে। মুগ্ধ চোখে এক বার রাস্তার নিওন আলো, আর এক বার নিজেদের দিকে চেয়ে দেখছিলেন তাঁরা।
বছর শেষের পার্ক স্ট্রিট সাক্ষী হয়ে রইল এমনই কয়েক হাজার ভালোবাসার দৃশ্যের। সাদা আর খাকি পোশাকের অগুনতি পুলিশ ভিড় সামলাতে সামলাতে মুচকি হেসে দেখে নিচ্ছিলেন আলোর রোশনাইয়ে হারিয়ে যাওয়া এই যুবক-যুবতীদের।
পুলিশি প্রহরার ঘেরাটোপে পার্ক স্ট্রিট এলাকা। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।
“গত বছরেও এত আলো ছিল না,” বলছিলেন এক পুলিশ-বন্ধু। পার্ক হোটেল থেকে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের দিকে হাঁটলে গত বছরেও ভিড় পাতলা হয়ে আসছিল কয়েক পা পরেই। কিন্তু এ বার অ্যালেন পার্ক পর্যম্ত উপচে পড়া ভিড়। সেখানেও আলোর রোশনাই। তাই পার্ক স্ট্রিটের পশ্চিম দিক থেকে ভিড়টা ক্যামাক স্ট্রিট পর্যন্ত পৌঁছে ঢুকে পড়ছিল অ্যালেন পার্কে। বড় বড় কাগজের চশমা, টুপি, হাজারো খেলনা, বেলুন নিয়ে ফেরিওয়ালার ভিড় সেখানে।
অ্যালেন পার্কেই দেখা সেঁজুতি খাঁড়ার সঙ্গে। জনা ছয়েক বন্ধু একসঙ্গে হুল্লোড়ে মশগুল। ছবি তুলছেন। সঙ্গে অনর্গল হাসি। প্রত্যেকের মাথায় লাল আলোর শিং। এক বিশ্বকাপে যেমন ভুভুজেলা নিয়ে বিস্তর নাচানাচি হয়েছিল, এ বার পার্ক স্ট্রিটে তেমনই লাল রঙা আলোর শিং নিয়েই মাতামাতি।
ভিন্দেশে স্বাগত নতুন বছরকে। মঙ্গলবার, নিউ মার্কেট চত্বরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
সন্ধ্যা ৬টা-৭টা নাগাদ যে ভিড়টার দেখা মিলল, তাঁরা বেশির ভাগই স্কুল-কলেজের পড়ুয়া। দশটা-সাড়ে দশটার মধ্যেই যাঁদের বাড়ি ঢুকতেই হবে। একাদশ শ্রেণির শুভজিৎ সাহা সকাল থেকেই বেরিয়ে পড়েছেন দুই বন্ধু শুভময় ও আদিত্যর সঙ্গে। চিড়িয়াখানা-ডমিনোস-কেএফসি ঘুরে সন্ধ্যার পার্ক স্ট্রিটে নোঙর করেছিলেন। রাস্তা আলো করে হেসে বললেন, “মজা যা করার করে নিয়েছি। রাতে বাড়ির লোকেদের সঙ্গে আবার বেরোব। তখন হয়তো গাড়ি নিয়ে আরও এক বার পার্ক স্ট্রিট আসতে পারি।”
শুভময়দের সঙ্গে নিয়েই বেড়ে চলছিল বছর-শেষের সন্ধ্যার ভিড়। কখনও পার্ক স্ট্রিট তো কখনও ইকো পার্ক। কখনও বা নিকো পার্ক থেকে রবীন্দ্রতীর্থ, সায়েন্স সিটি। দুপুর-বিকেলে নিকো পার্কের ওয়াটার পার্কে কৃত্রিম সমুদ্রে ঢেউয়ের সঙ্গে খেলায় মেতেছেন তরুণ-তরুণীর দল। ছুটির আমেজ সর্বত্র। ওয়াটার পার্ক লাগোয়া জায়গায় তখনও চলছিল পার্টির তোড়জোড়।
বছরের শেষ মুহূর্তগুলো নিংড়ে উপভোগ করে নেবেন বলেই নিকো পার্কে ‘ভুতের ঘরের’ সামনে বসেছিলেন বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধা। বারাসত থেকে নাতি-নাতনিরা এসেছিলেন দিদিমাকে সঙ্গে নিয়ে। ভুতুড়ে অভিজ্ঞতায় তিনিও খুশি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সেজে ওঠা ইকো পার্কে এখন ভাসমান সুরেলা ঝর্না, মুখোশ উদ্যান-সহ নানা নতুন আকর্ষণ। সেখানেই দিনভর বেলুনে ঢুকে জলে ভেসে থাকার মজায় মেতেছেন অনেকেই। সন্ধ্যা নামতেই পার্ক জুড়ে এলইডি আলোয় মায়াবি হয়ে উঠল চারপাশ। পাশ থেকে এক জন বলে ফেললেন, “মনে হচ্ছে যেন বিদেশের কোনও পার্কে রয়েছি!”
আলোর টানেই ঢল নেমেছে পথে। তা না হলে পার্ক স্ট্রিটের রাস্তা দেখে অষ্টমীর সন্ধের কথা কেন মনে পড়ে যাবে? রাত বাড়তেই কেন ভিড়ের চাপে কমে যাবে মানুষের চলার গতি? সেই ভিড়ে মিলেমিশে যাবে ফেজ টুপি, সান্তা টুপি, আর অগুনতি কালো মাথা। মনে হতেই পারে পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাথ নয়, এ যেন কোনও ফ্যাশন শো-এর র্যাম্প। হরেক পোশাকে সেজে ক্যাট-ওয়াকে ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে ওঠা বাঙালি একটা বছর পেরিয়ে চলে যাচ্ছে আরও একটা বছরের দিকে।
বছর শেষের আনন্দ। মঙ্গলবার নিকো পার্কে। ছবি: শৌভিক দে।
শুধু বছর-শেষের দিনটাকেই স্মরণীয় করে রাখতে উত্তরপাড়ার ব্যবসায়ী নিখিল সাহা স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন পার্ক স্ট্রিটের অভিজাত রেস্তোরাঁয়। আলোর রোশনাইয়ের মাঝখান দিয়ে হেঁটে কন্টিনেন্টাল ভোজ সেরে ফিরে যাবেন বাড়ি। শুধু এক বার ছুঁয়ে যাওয়া পার্ক স্ট্রিট। শুধু এক বার উৎসবের আঁচটা চেটেপুটে নেওয়া।
রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভিড়। পুলিশ-বন্ধুর কথায়, “রাত তিনটে পর্যন্ত থাকতে হবে। তার পরে ঘরে ফিরতে শুরু করবেন মানুষ।” অরিন্দম-পরিণীতা অবশ্য সেই দলে নেই। বিয়ের এক বছরও পেরোয়নি। হাওড়ার কদমতলা থেকে এসে মোটরবাইক রেখেছেন চাঁদনিতে। সেখান থেকে মেট্রো। হাঁটতে হাঁটতে কোনও এক মোগলাই খানার দোকানে উঁকি মারবেন নব-দম্পতি। তার পরে রাত বারোটা বাজলেই নতুন বছরকে সঙ্গে করে ঘরে ফেরা।
আর ফেরার পথে রাতের ব্যাটন তুলে দিয়ে যাবেন সৌম্যব্রতর হাতে। রাত আটটার পরে দলবল নিয়ে তিনি তখন সবে ভিড় ঠেলে ঢুকছেন পার্ক স্ট্রিটে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও আরও রং মাখবে তাঁদের জীবন।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.