মিটল সরকারের অন্দরমহলের মতানৈক্য। অবশেষে বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের জন্য সল্টলেক সেক্টর ফাইভের নবদিগন্ত-র ধাঁচে তৈরি হচ্ছে টাউনশিপ অথরিটি বা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ। চলতি সপ্তাহের গোড়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
চর্মনগরী ও লাগোয়া তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক মিলিয়ে ১১০০ একরের এই বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের দৈনন্দিন সমস্যা মেটাতে এ ধরনের প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। ২০১১ সালে বর্তমান সরকার এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করলে তা সরকারের অন্দরমহলে মতানৈক্যের জেরে থমকে যায়। পুর দফতরের দাবি ছিল, এ বিষয়ে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হলে, তার ঘাড়ের উপর চেপে বসবে বাড়তি আর্থিক বোঝা। পার পেয়ে যাবে পরিকাঠামো গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কম দামে জমি পাওয়া নির্মাণ সংস্থাও। আবার উল্টো দিকে শিল্প দফতরের যুক্তি ছিল, বানতলার জন্য এই ‘অথরিটি’ গড়লে উপকৃত হবে সেখানকার শিল্পমহল।
প্রকৃতপক্ষে ২০০৯ সাল থেকেই ‘বানতলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি’ গড়ার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তার শুরু। অনেকটা সল্টলেক সেক্টর ফাইভের নবদিগন্ত-র ধাঁচে। বিগত সরকারের আমলে পরিকল্পনা তৈরি হয়েও নির্বাচনী আচরণবিধি বলবৎ হওয়ার কারণে তা আটকে যায়।
নানা টানাপোড়েনের মাঝে পড়ে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ আর বানতলার ভাগ্যে জোটেনি। সমস্যাও উত্তরোত্তর বেড়েছে। সমাধানসূত্র হিসেবে অবশ্য একাধিকবার এই বিশেষ কর্তৃপক্ষ তৈরির প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। অবশেষে চলতি সপ্তাহের গোড়ায় সচিব স্তরের এক বৈঠকে এই সমাধানসূত্রকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিল্প সচিব চঞ্চলমল বাচাওয়াত, পুর সচিব বি পি গোপালিকা, তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের সচিব সতীশ তিওয়ারি ও শিল্প অধিকর্তা রূপেন চৌধুরী। বৈঠকে হাজির ছিলেন বানতলা চর্মনগরী ও তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের নির্মাণ সংস্থার কর্ণধার জগমোহন ডালমিয়া ও অভিষেক ডালমিয়াও।
মূলত দূষণের সমস্যাই এই বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের বাড়বাড়ন্তের পথে বরাবর বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে জল, রাস্তা, আলো, নিকাশির মতো নাগরিক পরিষেবার অভাব। দূষণের ভুত বানতলা চর্মনগরীর লাগোয়া তথ্যপ্রযুক্তি প্রকল্পকে প্রথম দিন থেকেই তাড়া করে ফিরেছে। বছর দুয়েক আগে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প সংস্থাগুলি লগ্নি বাঁচানোর স্বার্থে বর্জ্য নিকাশি নালা পৃথক করে নেয় নিজেদের খরচেই। কিন্তু এ সব করেও সুরাহা হয়নি বলে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির অভিযোগ।
অন্য দিকে চর্মশিল্পের দাবি, প্রথমে বানতলার ওই স্থান চর্মশিল্পের জন্যই নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। তাই সেই অঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে কেন জমি দেওয়া হল, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ তারা। একই সঙ্গে তাদের অভিযোগ, অনিয়মিত জল সরবরাহের কারণে নিত্য সমস্যার মুখে পড়েন তাঁরা। ফলে বাধ্য হয়েই গভীর নলকূপ বসিয়ে জল তুলতে হয়। তবে দু’পক্ষেরই দাবি, নজরদারির জন্য কর্তৃপক্ষ থাকলে সমস্যা এত দূর গড়াতে পারত না।
গত পাঁচ বছর ধরে ফাইল-বন্দি এই পরিকল্পনা কবে বাস্তবায়িত হয়, এখন সেটাই দেখার।
|