বছর পার। কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান আর খুঁজে পেল না বাংলাদেশের দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। রাষ্ট্রপুঞ্জের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্ডেজ তারানকোর তৎপরতায় আওয়ামি লিগ ও বিএনপি-র মহাসচিবরা বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু দু’পক্ষের অনড় অবস্থানে তা ফলপ্রসূ হয়নি। এ বার নির্বাচনের দিন পাঁচেক আগে তাই নতুন করে দৌত্য শুরু করলেন ব্রিটেন ও আমেরিকার রাষ্ট্রদূতেরা।
৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। আর তার ফলে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে ইতিমধ্যেই এক জন করে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে গিয়েছেন। নির্বাচনেও শাসক দলের একতরফা জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু পশ্চিমি দেশগুলি মনে করছে, এই নির্বাচন বাংলাদেশে আরও অস্থিরতা ডেকে আনবে। কারণ নির্বাচনকে সাজানো আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে কাল থেকেই লাগাতার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের ডাক দিয়েছেন বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া। শেষ সময়ে সরকার যাতে এই নির্বাচন খারিজ করে বিরোধীদের সঙ্গে আরও আলোচনা করে নির্বাচনে তাদের সামিল করতে পারে, সে জন্যই তৎপর হয়েছেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন কাল খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলে এসেছিলেন। আজ তিনি শাসক দল আওয়ামি লিগের মহাসচিব আশরাফুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনাও এ দিন বিরোধী নেত্রীর বাড়িতে গিয়ে আলোচনা করেন। তার পরে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্কট মেটাতে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের পথ খোঁজাটাই জরুরি। সেই নির্বাচন হওয়া উচিত অবাধ ও নিরপেক্ষ।” মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, “গণতন্ত্রের মধ্যে সন্ত্রাস ও হিংসা কখনওই কাম্য নয়।” হিংসাত্মক ঘটনায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে বিএনপি-র বেশ কিছু নেতাকে সরকার গ্রেফতার করেছে। মার্কিন দূত তার সমালোচনা করে বলেছেন, “বিরোধীদের গ্রেফতার করে কণ্ঠরোধ করার চেষ্টাও গণতন্ত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।”
তবে শাসক আওয়ামি লিগ বলছে, অনেক সাধ্যসাধনা করেও বিরোধীপক্ষকে আলোচনায় বসানো যায়নি। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে তাদের আপত্তি। কিন্তু পাঁচ বছর সংসদ বয়কট করায় তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সুযোগও হাতছাড়া করেছে। তার পরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোন করে খালেদা জিয়াকে আলোচনায় ডাকেন। কিন্তু তাতেও সাড়া মেলেনি। ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার পরে নির্বাচন বাতিল করা হলে নির্বাচন কমিশনকে মামলার মুখে পড়তে হবে। তাই এখন আর তা করা সম্ভব নয়। আওয়ামি লিগের মহাসচিব আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, নির্বাচনে না-আসার দায় বিরোধী দলের। প্রধানমন্ত্রী কাল ঢাকায় প্রচারে নামছেন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ।
খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে নিরাপত্তা শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু গোটা দেশেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সর্বত্রই এখন আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব সামলাচ্ছে সেনারা।
|