খালেদার কাছে ব্রিটিশ দূত, উদ্বিগ্ন দিল্লিও

৩০ ডিসেম্বর
ঢাকায় সরকার-বিরোধী বিক্ষোভের দ্বিতীয় দিনে নিহত হলেন শাসক ও বিরোধী দলের দুই নেতা। কয়েক জন বিএনপি নেতা-নেত্রীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। আজ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতও।
৫ জানুয়ারির ভোটের আগে শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছিল বিএনপি-সহ ১৮ দলের জোট। হাসিনা সেই দাবি না মানায় শুরু হয় বিরোধ। গত কাল বিরোধীদের ঢাকা চলো কর্মসূচি ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানী। বিভিন্ন সরকারি দফতর অবরোধ করে নির্বাচন না হতে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তবে হাসিনা সরকারের কড়া মনোভাব বিএনপি-জামাতের কর্মসূচি অনেকটাই ভন্ডুল করে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত কয়েক দিন ধরেই ঢাকায় খালেদার বাড়ি ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তাবাহিনী। গত কাল খালেদাকে নয়া পল্টনের সভাস্থলে যেতে দেয়নি তারা। পরে সারা দেশ জুড়ে ধর্নার কর্মসূচি নেওয়ার কথা ঘোষণা করে বিএনপি। ওই ঘোষণা করে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে বেরোনোর মুখে গ্রেফতার করা হয় বিএনপি-র এক শীর্ষ নেতা হাফিজুদ্দিন আহমেদকে। তাঁকে আজ দু’দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আজ খালেদার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পান দলের তিন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সামশের মবিন চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, সাবিউদ্দিন আহমেদ। কিন্তু নেত্রীর বাড়ি থেকে বেরনো মাত্র সামশেরকে গ্রেফতার করা হয়। আজ সকালে খালেদার বাড়ির সামনে থেকে আটক করা হয় দলের তিন নেত্রীকেও। পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
একান্ত আলোচনায় বিএনপি নেতাদের অনেকেই স্বীকার করছেন, হাসিনা সরকারের কড়া পদক্ষেপের ফলে তাঁদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। ভয়ে অনেক নেতাই গা ঢাকা দিয়েছেন। হাসিনা সরকার বাস, ট্রেন, ফেরি পরিষেবা বন্ধ করে রাজধানীকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলায় ঢাকায় পৌঁছতেই পারেননি বহু বিরোধী সমর্থক। ফলে, সরকারের পতন পর্যন্ত ঢাকায় আন্দোলন করার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে। দেশ জুড়ে অবরোধ কর্মসূচিও কতটা সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিরোধী জোটের মধ্যেও।
তবে এই কর্মসূচি ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থামার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই ধারণা সংশ্লিষ্ট সব শিবিরের। আজও বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা হয়েছে দেশে। সিরাজগঞ্জে আওয়ামি লিগের এক নেতাকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। সাতক্ষীরায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন এক বিরোধী নেতা। ঢাকায় পুলিশ-বিরোধী সংঘর্ষের সময়ে আহত হয়েছেন এক স্থানীয় বাসিন্দা। সুপ্রিম কোর্টে শাসক-বিরোধী সংঘর্ষ হয়েছে। যশোরে আওয়ামি লিগ সাংসদের বাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছে বোমা।
হাসিনা সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে অন্তত কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ গভীর সঙ্কটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা আন্তর্জাতিক শিবিরের। ইতিমধ্যেই দু’পক্ষকে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর ‘পরামর্শ’ দিয়েছে আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়ার বেশ কিছু দেশ। আগে মতভেদ মেটাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের মধ্যস্থতায় যুযুধান দুই শিবিরের বৈঠকও হয়েছিল। তবে তাতে কোনও ফল হয়নি। আজ খালেদার সঙ্গে দেখা করতে গুলশনে তাঁর বাড়িতে যান ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন। আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু জানায়নি হাইকমিশন বা খালেদা শিবির। তবে গিবসন দু’পক্ষের আরও কয়েক জন নেতার সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছে হাইকমিশন।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বভাবতই উদ্বিগ্ন ভারত। আজ বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেন, “ভারত বাংলাদেশে কোনও পক্ষকে সমর্থন করতে রাজি নয়। তবে সে দেশের পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। কারণ, কী পথে এগোনো হবে তা নিয়ে সরকার ও বিরোধীরা একমত হতে পারেনি।” খুরশিদের মতে, “গণতন্ত্রকে সফল করতে গেলে হিংসা রুখতে হবে।”
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ঢাকায় দ্রুত সরকার গঠিত হোক, এটাই চায় নয়াদিল্লি। কারণ, বেশি দিন এই ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা চললে অনেকে ভারতে চলে আসতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। তা একেবারেই কাম্য নয় নয়াদিল্লির। নিজেদের উদ্বেগের কথা হাসিনা সরকারকে জানিয়েও দিয়েছে ভারত।
আমেরিকা-সহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের আলোচনা হয়েছে। আজ খুরশিদ বলেন,“বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে আমাদের মতভেদ আছে। আশা করব আমেরিকা নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দেবে।”
কোন পথে এগোয় মুজিবের দেশ, দেখতে আগ্রহী সকলেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.