তারকা হোটেল, মাল্টিপ্লেক্স থেকে বড় বড় শপিংমলদুই শহরে অভাব নেই কিছুরই। তবে সপ্তাহান্তে রাতভোর পার্টির অভ্যাস এখনও গড়ে ওঠেনি আসানসোল বা দুর্গাপুরে। ব্যতিক্রম শুধু বর্ষশেষের রাত ও বর্ষবরণের ভোর। তাই ২০১৩-কে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এই দুই শিল্প শহরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই রঙিন পার্টিতে মেতে উঠল নানা হোটেল ও ক্লাব।
হালফিলের হিন্দি-ইংরেজি গান, রঙিন আলোর মাঝে ডিস্ক জকির বেঁধে দেওয়া সুরে তাল মেলানো, র্যাম্পে মডেলদের ‘ক্যাট ওয়াক’ নানা হোটেল-ক্লাবে ছিল এমনই বিভিন্ন আয়োজন। অনেক জায়গায় ছিল বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাও। পার্টিতে এসে বিশেষ পুরস্কার জিতে ফিরলেন অনেকে। অনুষ্ঠান শুরু হল রাত ৮টা নাগাদ। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছে পার্টি। রাত ১২টায় বেলুন উড়িয়ে, আতসবাজি ফাটিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত। খাওয়া-দাওয়া সেরে ভোর নাগাদ বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা নিয়েই এসেছিলেন অনেকে।
|
|
|
রানিগঞ্জের তারবাংলায় এক ক্লাবে
সকাল থেকেই শুরু উৎসবের প্রস্তুতি। |
দুর্গাপুরের হোটেলে সন্ধ্যা থেকে
শুরু হল গান-বাজনা। |
|
পার্টিতে যোগ দেওয়ার টিকিট জোগাড় করতে উৎসাহীরা উঠেপড়ে লেগেছিলেন অনেক আগে থেকেই। শেষ মুহূর্তে টিকিটের খোঁজ করতে গিয়ে হতাশ হয়েছেন অনেকেই। বিভিন্ন হোটেলের দোরে দোরে ঘুরেও প্রবেশপত্র মেলেনি। বান্ধবীকে নিয়ে সিটি সেন্টারে একটি হোটেলের পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন এক কর্পোরেট সংস্থার কর্মী সৌরভ সরকার। তিনি বলেন, “এক সপ্তাহ আগে টিকিট জোগাড় করেছি। তাই অসুবিধায় পড়তে হয়নি।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট কলেজের শিক্ষক বলেন, “আগে থেকে উদ্যোগী হইনি। তাই পার্টিতে ঢোকা আর হল না। দেখি, কী করা যায়!”
২০০৫ সাল থেকে বর্ষবরণের পার্টির আয়োজন করে আসছে সিটি সেন্টারের ক্ষুদিরাম সরণির নানা হোটেল। এমনই একটি হোটেলের কর্ণধার কবি দত্ত জানান, কখনও ব্রাজিলের সাম্বা, কখনও রাশিয়ান ব্যালে কখনও আবার কখনও মুম্বইয়ের নর্তকীরা মন কেড়েছেন অনুরাগীদের। এ বার এসেছিলেন ইংল্যান্ড থেকে অনুষ্ঠান করতে দল এসেছে। পাশে আর একটি বড় হোটেল। সেখানে এ বার আকর্ষণ ছিল ভাংড়া। |
|
|
আসর জমাতে
হাজির ইংল্যান্ডের
তরুণী। |
বেশ কয়েক দিন ধরে প্রস্তুতির পরে
নতুন বছরের ঠিক দু’দিন আগে থেকে
চিত্তরঞ্জনে ফের চালু হল টয় ট্রেন। |
|
সিটি সেন্টার ও বিধাননগর এলাকার নানা মাঝারি-ছোট হোটেলগুলিতেও আয়োজন ছিল দেদার। বিভিন্ন কর্পোরেট ক্লাবও নিজেদের মতো করে বর্ষবরণ উদ্যাপনের ব্যবস্থা করেছিল। তবে পার্কগুলিতে গত বছরের মতো পার্টির আয়োজন দেখা যায়নি এবার।
আসানসোলের নানা এলাকায় মঙ্গলবার বিকেল থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল অনুষ্ঠান। শহরের বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবে ছিল নাচগান ও পানভোজনের আয়োজন। আগে এই সব পার্টিতে শুধু ক্লাবের সদস্যদেরই প্রবেশাধিকার ছিল। এ বার অবশ্য ক্লাব সদস্যদের সঙ্গী হয়ে বহিরাগতেরাও ঢোকার সুযোগ পেয়েছেন। একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অধীনস্থ ক্লাবগুলিতেও এ বার এমন হয়েছে। শহরের বড় বড় হোটেলেও বর্ষবরণের পার্টির আয়োজন ছিল। টিকিট কেটে ঢুকে সেই সব পার্টি উপভোগ করেছেন শহরবাসী।
শহরের অন্যতম অভিজাত আসানসোল ক্লাবের সম্পাদক সতপাল সিংহ জানান, এ বার একটু অন্যরকম ভাবে অনুষ্ঠান করলেন তাঁরা। ডিজে নিয়ে এসে পার্টির পাশাপাশি ছিল ধ্রুপদী গানের আসর। যার যেমন পছন্দ, সেই অনুযায়ী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। বার্নপুর ইস্কো পরিচালনাধীন বার্নপুর ক্লাবেও এ বার অন্যরকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সংস্থার জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার জানান, এ বারই প্রথম ডিজে এবং ডিস্কো থেক-এর আয়োজন করা হয়েছিল। ক্লাব সদস্যদের পাশাপাশি বাইরের অনেকেও অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ পান। কুলটি ক্লাবেও বসেছিল বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আসর। সংস্থার ডিজিএম কৃষ্ণকান্ত তিওয়ারি জানিয়েছেন, ক্লাব সদস্যদের পাশাপাশি বাইরের অনেকেও নিমন্ত্রিত ছিলেন। চিত্তরঞ্জন রেল কারখানাতেও বর্ষবরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল।
উৎসবের রাত নির্বিঘ্নে পার করতে পুলিশ বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছিল। পার্টি ও ভিড়ের মধ্যে মিশে ছিলেন মহিলা পুলিশকর্মীরা। পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে বড় বড় হোটেলগুলির সামনেও।
আলোয় সেজে, সুরের ছন্দে তাল মিলিয়েই ২০১৪-কে স্বাগত জানাল শিল্পাঞ্চল। |
ছবিগুলি তুলেছেন বিকাশ মশান, ওমপ্রকাশ সিংহ ও শৈলেন সরকার। |