পরিত্যক্ত ব্যাগকে ঘিরে বোমাতঙ্কের জেরে প্রায় ৮ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকল ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে। সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ আপার চালসায় জাতীয় সড়কের ধারে একটি খাকি রঙের ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে বোমাতঙ্ক ছড়ায়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পুলিশ এসে ব্যাগটিকে বালির বস্তা দিয়ে ঘিরে ফেলে। দুপুর দেড়টা নাগাদ জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে পুলিশ। চালসা রেল স্টেশন লাগোয়া ওই এলাকার পাশেই সার দিয়ে ১৫টি বাড়ি রয়েছে। নিরাপত্তার কারণে পুলিশ ওই ১৫টি বাড়ির বাসিন্দাদেরও বাড়ি থেকে বের করে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে যায়। কাছেই এসএসবির ছাউনি থাকায়, সেখান থেকে এসএসবির জওয়ানেরা প্রশিক্ষিত কুকুর এনে ব্যাগটিকে পরীক্ষা করায়। এসএসবির তরফে ব্যাগে বোমা নেই বলে পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া হলেও, মেটাল ডিক্টেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করে ব্যাগের ভিতরে ধাতব কিছু রয়েছে বলে জানানো হয়। |
পরিত্যক্ত ব্যাগটি পরীক্ষা করে দেখছেন এসএসবি জওয়ানেরা।
সোমবার চালসায় দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি। |
আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির বিস্ফোরণ কাণ্ডের পরে পুলিশ ঝুঁকি নিতে চায়নি। শিলিগুড়ি থেকে সিআইডির বম্ব স্কোয়াডের কর্মীরা চালসায় এসে পৌঁছোলেও তাঁদের কাছে রিয়েল টাইম ভিউ সিস্টেম, ডিপ সার্চ মেটাল ডিটেক্টররে মতো আধুনিক যন্ত্র না থাকায় ফের শিলিগুড়ির থেকে রেল পুলিশের থেকে ওই যন্ত্রগুলি নিয়ে আসা হয়। তারপরেও বোমার কোনও খোঁজ না মেলায়, নাইট্রেক্সের সাহায্যে দু’বার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাগটিকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়।
এ দিন দুপুরেই চালসায় পৌঁছে যান জলপাইগুড়ির রেঞ্জের ডিআইজি জাভেদ শামিম এবং জেলার পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি। ডিআইজি বলেন, “আমরা কোনরকম ঝুকি নিতে চাইনি। বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতেই সেবকের কাছে মংপং থেকে সব গাড়ি আটকে দেওয়া হয়।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিত্যক্ত ব্যাগ থেকে থালা-বাসন, কম্বল, ছোটদের সোয়েটার, জামা-কাপাড় উদ্ধার করা হয়েছে। এদিন বোমাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় বাসিন্দাদের ভিড় উপচে পড়ে। যান চলাচল আটকে দেওয়ায় সেবক সেতুতেও যানজটেরও সৃষ্টি হয়। এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় অত্যাধুনিক যন্ত্র শিলিগুড়ি থেকে চালসায় এসে পৌঁছোয়। রাত ৯টায় পুলিশের তরফে বিস্ফোরণের পরে জাতীয় সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ব্যাগ থেকে বোমা উদ্ধার হয়নি জেনে হাততালি দিয়ে ওঠেন জড়ো হওয়া বাসিন্দারা।
ব্যাগটি যেখান থেকে উদ্ধার হয়, তাঁর পেছনেই সন্ধ্যা বাগচী, রতন ভৌমিকদের বাড়ি। তাঁদের কথায়, “দিনভর ওই ব্যাগের জন্যে খাওয়া হয়। জলপাইগুড়ির বিস্ফোরণের পরে আতঙ্ক আরও বেড়ে গিয়েছিল।’’ দীর্ঘক্ষণ জাতীয় সড়ক আটকে থাকায় নাকাল হতে হয় পর্যটকদেরও। কলকাতা থেকে সপরিবারে ডুয়ার্স ঘুরে শিলিগুড়ি যাচ্ছিলেন প্রদীপ আচার্য। তিনি বলেন, “আমাদের ঘুরপথে যেতে বলা হলেও রাস্তা না চেনায় বাধ্য হয়েই দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।” |