শীতে পিকনিকের আসর জমজমাট বকখালিতে। কিন্তু রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় এই পিকনিক স্পটের পরিকাঠামো ও পরিষেবা নিয়ে পর্যটকের প্রচুর ক্ষোভ। সকলেরই দাবি, অবিলম্বে শৌচালয়ের সংখ্যা বাড়ানো ও পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করার। পুলিশি নজরদারি, সমুদ্রে নামার রাস্তায় সতর্কতামূলক বোর্ড বসানোর দাবিও উঠেছে।
সমুদ্র সৈকত লাগোয়া বকখালির জঙ্গল ঘেরা মাঠ চড়ুইভাতির জন্য পর্যটকদের খুবই প্রিয়। নামখানা পঞ্চায়েত সমিতি পরিচালিত ওই পর্যটন কেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য একটি করে শৌচালয় এবং পানীয় জলের জন্য দু’টি গভীর নলকূপ রয়েছে। তা ছাড়াও, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করে। কিন্তু শীতের মরসুমে ছুটির দিনগুলিতে যত দল এখানে পিকনিক করতে আসে, তার তুলনায় এই ব্যবস্থা সামান্যই বলে অভিযোগ। পিকনিক করতে আসা লোকজনের বক্তব্য, পর্যাপ্ত শৌচালয় না থাকায় মহিলা ও শিশুরা সমস্যায় পড়ছে। জলের অভাবে রান্না ব্যাহত হয়। এ ছাড়া, কাছাকাছি এটিএমের অভাবও রয়েছে। |
বকখালি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের শ্রীমন্ত মালি বলেন, “বকখালিতে শৌচালয়ের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পানীয় জলের সমস্যাও মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। সমুদ্রে যাওয়ার জন্য একটি রাস্তা তৈরির ব্যাপারে আলোচনা চলছে। অন্যান্য সমস্যারও সমাধান করা হবে।” গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান বঙ্কিম হাজরা বলেন, “বকখালিতে শৌচালয় নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে ৫ লক্ষ টাকা অনুমোদিত হয়েছে। শীঘ্রই কাজ হবে। অন্য সমসাগুলি ধীরে ধীরে মেটানো হবে।”
বেড়াতে আসা মানুষজন বকখালিতে সমুদ্রে নামেন। অসর্তকতায় দুর্ঘটনাও ঘটে। তা এড়ানোর জন্য সমুদ্রে নামার পথে সতর্কতামূলক বোর্ড বসানোর দাবি তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তা ছাড়া, সৈকত থেকে সমুদ্রের ১০০ মিটার দূরে একটি চরও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করেন স্থানীয়েরা। তাঁরা জানান, ভাটার সময়ে চর জেগে উঠলে অনেক পর্যটকই হেঁটে সেখানে যান। কিন্তু জোয়ার চলে এলে চর ডুবে যায়। ফিরতে অনেকে সমস্যায় পড়তে হয়। চর কাটা দরকার, মনে করেন তাঁরা।
সৈকতে পর্যটকদের ছবি তোলেন কল্লোল জানা। তিনি বলেন, “চোখের সামনে কত দুর্ঘটনা দেখেছি। কয়েক বার তো সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে কয়েক জনকে উদ্ধারও করেছি। সমুদ্রের স্রোত কতটা বিপজ্জনক, না বোঝায় দুর্ঘটনা ঘটে। এ জন্য প্রচার বাড়ানো দরকার।” সৈকতের ব্যবসায়ীদের মত, “সমুদ্রের ওই চরটা কাটার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে দুর্ঘটনা হতেই থাকবে। ছুটির দিনে সৈকতে নজরদারি বাড়ালে দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে।”
বকখালি বাসস্ট্যান্ডের কাছেই পুলিশ ও পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে সমুদ্রে নামার বিধিনিষেধ সংক্রান্ত বোর্ড লাগানো হয়েছে। তেমন কোনও বোর্ড অবশ্য সৈকতে চোখে পড়ে না। শ্রীমন্তবাবু জানান, সতর্কতামূলক বোর্ড সৈকতে কয়েকবার লাগানো হলেও হাওয়ায় উড়ে যায়। আর লাগানো হয়নি। তাঁর দাবি, “হোটেল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে যে, তাঁরা যেন পর্যটকদের সমুদ্রে নামার বিপদগুলি জানিয়ে দেন। স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে এবং মাইকে প্রচার করে দুর্ঘটনা এড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।” পুলিশের দাবি, পর্যটকদেরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে। |