|
|
|
|
শালবনিতে কম্বল বিলিয়ে আমলাশোল ঘুরলেন মুকুল
কিংশুক গুপ্ত • আমলাশোল
বরুণ দে • শালবনি |
জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখ বেলপাহাড়ির আমলাশোল গ্রামে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে সোমবার আমলাশোল ঘুরে গেলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। এ দিন শালবনি থানার গাড়রায় পুলিশের একটি জনসংযোগ কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার পরে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ আমলাশোলে পৌঁছন মুকুলবাবু। প্রায় আধ ঘণ্টা সেখানে ছিলেন তিনি। মুকুলবাবুর সঙ্গে ছিলেন দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ, প্রদ্যোৎ ঘোষ প্রমুখ। ছিলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত, ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) অজয় নন্দ, ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত এসপি ভারতী ঘোষ। |
|
শালবনিতে কম্বল বিতরণ। |
এ দিন বেলপাহাড়ি থেকে আমলাশোল পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে পুলিশি নিরাপত্তা চোখে পড়ার মতো ছিল। আমলাশোল গ্রামের স্থানীয় প্রাথমিক স্কুল মাঠে দাঁড়িয়ে ২০০৪ সালের জুনে আনাহারে ৫ আদিবাসীর মৃত্যুর ঘটনার পরে প্রথমবার আমলাশোলে আসার স্মৃতিচারণ করেন মুকুলবাবু। দলীয় নেতা ও পুলিশের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে সেখানে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করেন তিনি। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, আমলাশোলে মুখ্যমন্ত্রী এসে কোথায়, কী ভাবে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন। স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গেও কথা বলেন মুকুলবাবু। বাসিন্দারা মুকুলবাবুর কাছে মোবাইল ফোনের টাওয়ার, হাইস্কুল, হাসপাতাল ও কলেজের দাবি জানান। মুকুলবাবু গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করে বলেন, “শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী আমলাশোলে আসছেন। তিনি আপনাদের সব কথা শুনবেন।”
আমলাশোলে আসার কারণ জানতে চাওয়া হলে মুকুলবাবু বলেন, “সহকর্মী ও দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে এলাকা ঘুরে দেখলাম। এই এলাকার উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কী-কী বার্তা পৌঁছতে হবে, সেজন্য সাধারণ মানুষ ও দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। মুখ্যমন্ত্রী আমলাশোল, কাঁকড়াঝোরের মতো গ্রামগুলির উন্নয়নে বিশেষভাবে আগ্রহী। সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রী নিজেও এই এলাকায় আসবেন।” মুকুলবাবু জানান, ২০০৪ সালে আনাহারে মৃত্যুর ঘটনা জানার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমলাশোলে ছুটে এসেছিলেন। তখন তিনি ছিলেন বাংলার ‘জননেত্রী’। এখন তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলাশোলে সফর গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, স্বাধীনতার ৬৬ বছর পরে এই প্রথমবার রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী আমলাশোলে আসছেন। মুকুলবাবুর দাবি, “বাম জমানায় আমলাশোলের বাসিন্দারা অনাহারে মারা গিয়েছিলেন। আর এখন রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে আমলাশোল অনেকটা পাল্টেছে।” |
|
আমলাশোলে মুকুল রায়। সোমবার বিকেলে। |
এরপরই মুকুলবাবু স্মরণ করিয়ে দেন, “আগে এই সব এলাকায় কোনও উন্নয়ন হয়নি। অনুন্নয়নই উগ্রপন্থা সৃষ্টির মূল কারণ।” বেলপাহাড়ি ব্লক যুব তৃণমূলের সভানেত্রী অনুশ্রী করকে দেখিয়ে মুকুলবাবু বলেন, “আগে আমরা এই সব এলাকায় সাংগঠনিক কাজকর্ম করতে পারতাম না। অনুশ্রীদেবীর স্বামী ও দেওরকে একই দিনে উগ্রপন্থীরা খুন করেছিল।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফের ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে মাওবাদীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। মাওবাদী-ধাত্রীভূমিতে এসে রাজ্য প্রশাসনের তরফে সুনির্দিষ্ট বার্তা দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গে কেএলও, দক্ষিণবঙ্গে মাওবাদী। কীভাবে মোকাবিলা সম্ভব? মুকুলবাবুর জবাব, “বাংলায় কোনও উগ্রপন্থা বা বিচ্ছিন্নতাবাদের জায়গা নেই। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দু’ভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।” বস্তুত, এ দিন শালবনিতে পুলিশের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির ছিল প্রশাসনিক মোকাবিলারই অঙ্গ। সঙ্গে গরিব মানুষদের কম্বল-ত্রিপল বিতরণও করা হয়। লালগড়, শালবনি ও মেদিনীপুর কোতয়ালি-জঙ্গলমহলের এই তিন থানা এলাকার ৬১টি গ্রামের মানুষ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে মুকুল রায় বলেন, “আড়াই বছর হল বাংলায় একটা নতুন সরকার তৈরি হয়েছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি চাইছেন, সমাজকে যারা রক্ষা করে, সেই পুলিশের সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হোক। পুলিশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তৈরি হলে বিপথগামী উগ্রপন্থাকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে। পাশাপাশি, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ভাল হলে আর ভুল বোঝাবুঝিও থাকবে না।” শিবিরে কয়েকশো মানুষ এসেছিলেন। সেই ভিড়েই মিশে ছিলেন জনসাধারণের কমিটির একদা মুখপাত্র অসিত মাহাতো এবং তাঁর স্ত্রী অনিকা মাহাতো। অসিতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে। তিনি এখন জামিনে মুক্ত। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনা মামলায় তাঁর নামে চার্জশিট পেশের অনুমতি চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেছিল সিবিআই। সম্প্রতি সেই অনুমতি মিলেছে। তিনি কেন এসেছেন শিবিরে? কমিটির একদা মুখপাত্র বলেন, “পুলিশের এই উদ্যোগ খুব ভাল। আগের কথা আর মনে করতে চাই না। সমাজের মূলস্রোতে থাকতে চাই।” অনিকাদেবী শিবিরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। তাঁর কথায়, “তিন-চারটে বছর যে কী ভাবে কেটেছে, বলে বোঝাতে পারব না। এখন সব ঠিকঠাকই আছে।”
|
ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
|
|
|
|
|