সম্পাদকীয় ২...
ভারত-তীর্থ
ম আদমি-র বৎসর বলিয়া বিলীয়মান বৎসরটিকে আখ্যা দিবার যে প্রবণতা দৃশ্যমান, তাহাকে সম্পূর্ণ সত্যানুগ বলা চলে না। আম আদমি পার্টির সৌজন্যে এই মুহূর্তে ভারতে যে রাজনৈতিক বিস্ময়-নাট্য সংঘটিত হইতেছে, তাহার মধ্যে ‘আম আদমি’ অর্থাৎ সর্ব-সাধারণ্যের কোনও নূতন রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি হইবার নবোদ্ভূত ইঙ্গিত নাই। অরাজনৈতিক পরিসর হইতে তৈরি হইয়া উঠিলেও শেষ বিচারে এই নূতন দলের সংজ্ঞার্থ নিশ্চিত ভাবেই ‘রাজনৈতিক’, এবং সেই অর্থে সমাজগত ভাবে ‘আংশিক’। যে মুহূর্ত হইতে দল হিসাবে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তাঁহার সঙ্গীরা আত্মপ্রকাশ করিয়াছেন, সেই মুহূর্তেই তাঁহাদের আম আদমি-র প্রতিনিধিত্ব ঘুচিয়াছে, সর্বসাধারণের পক্ষে কথা বলিবার অধিকার গিয়াছে, কেননা গণতন্ত্রে কোনও দলেরই ‘সর্ব’সাধারণের পক্ষ হইয়া কথা বলিবার অধিকার নাই, সমাজের একটি বিশেষ অংশের হইয়াই সে কথা বলিতে পারে। বস্তুত সকল রাজনৈতিক দলই আম আদমি-র পক্ষে কথা বলিবার বাসনা পোষণ করে: কেজরিওয়ালের ‘আপ’-ও তাই। সুতরাং আম আদমি-র প্রতিনিধিত্ব করিবার কৃতিত্বে তাঁহাকে ভূষিত করিবার মধ্যে যাথার্থ্যতার অপেক্ষা আবেগপ্রবণতাই অধিক। কেজরিওয়ালের কৃতিত্ব বরং অন্যত্র। তাহা হইল, চালু রাজনীতির বাহির হইতে কী ভাবে সেই রাজনীতির অন্দরে প্রবেশ করিতে হয়, তাহার পথ বাতলানো। যে রাজনীতির প্রতি তীব্র বিদ্বেষ দিয়া তিনি যাত্রা শুরু করিয়াছিলেন, একটুও না হড়কাইয়া সেই রাজনীতির মঞ্চে আসিয়া কী ভাবে অবতীর্ণ হইতে হয় এবং শিখরে আরোহণ করিতে হয়, তাহা দেখাইবার কৃতিত্ব তাঁহার।
এবং ভারতীয় গণতন্ত্রের। ২০১৩ সাল যদি কাহারও জয়টীকার বৎসব বলিয়া দাবি করিতে হয়, তাহা ভারতের এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার। যে ব্যবস্থা দেখাইয়া দেয়, কী ভাবে তাহার প্রতি আঘাত ক্রমে এই ব্যবস্থারই অঙ্গীভূত ও অন্তর্লীন হইয়া যাইতে পারে। কী ভাবে প্রবল প্রতিস্পর্ধীকেও গ্রহণ করিয়া তাহাকে একটি নূতন পরিসর খুলিয়া দেওয়া যায়। বিশ্বের বহু জায়গায় সম্প্রতি নাগরিক সমাজের আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করিয়াছে। কিন্তু ভারতের মতো আর কোথাও এই আন্দোলন নূতন রাজনৈতিক মঞ্চ নির্মাণ করিতে পারে নাই। ভারতের গণতন্ত্র প্রমাণ করিতে পারিয়াছে যে, তাহার এক আশ্চর্য ঐশ্বর্য রহিয়াছে, বহু প্রকার বিরুদ্ধতাকে এক অসাধারণ নমনীয়তা ও গ্রহিষ্ণুতার সঙ্গে আত্মগত করিতে পারিবার ঐশ্বর্য। ভারততীর্থের গণতান্ত্রিক ‘ব্যবস্থা’র প্রতি বিদ্বেষ, এমনকী হিংসা, পোষণ করিয়া যিনি বা যাঁহারা আক্রমণ শানান, তাঁহাদেরও ভারতীয় গণতন্ত্র ক্রমে স্থান করিয়া দেয়। মাওবাদী উগ্রতা যে ‘তন্ত্র’-র স্পর্শে প্রশমিত হয়, ‘আপ’মার্কা প্রতিস্পর্ধাও তাহারই অন্দরে প্রত্যয়ী পদক্ষেপ করে, এমনকী প্রথম আবির্ভাবেই জয়টীকায় শোভিত হয়। এই অসাধারণ গ্রহিষ্ণু রাজনীতি ভারতের অত্যন্ত মূল্যবান ও দুর্লভ অর্জন: এশিয়ার প্রেক্ষিতে অনন্য তো বটেই, পশ্চিমি বিশ্বেও দৃষ্টান্ত হিসাবে সতত সুলভ নহে।
নবপ্রসূত এই রাজনৈতিক পরিসর কতখানি সুব্যবহৃত হইবে, সুশাসনের স্বাক্ষর রাখিবে, প্রত্যাশার অঙ্ক পুরাইবে, এ সব গাণিতিক আলোচনা নূতন বৎসরের জন্য তোলা থাকুক। গতপ্রায় বৎসরটি বরং এই দুষ্প্রাপ্য গৌরবোজ্জ্বলতায় বিদীপ্ত হউক। এই বৎসরের অভিজ্ঞতার উপর ভর করিয়া নাগরিক সমাজের সহিত রাজনীতির সম্পর্ক-তত্ত্বের প্রেক্ষিতে সবচেয়ে গুরুতর জানলাটি তবে ভারতই খুলিতে পারিল!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.