কলকাতা এ বার সেজে উঠবে এলইডি আলোয়। এমনটাই ইচ্ছা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর তা পালন করতে তৎপরতা শুরু হয়েছে পুরসভায়।
তবে শুধুমাত্র এই ধরনের আলোর উজ্জ্বলতা বেশি বলেই নয়, বর্তমানে শহরের রাস্তায় যে সব সোডিয়াম ভেপার, মেটাল হ্যালাইড আলো জ্বলে তার থেকে বিদ্যুতের বিলও কম হবে এলইডিতে। এমনই মনে করছেন পুর-কর্তারা। আর হাতে কলমে তার হিসেব যাচাই করতে রাসবিহারী-বাইপাস কানেক্টরের বাতিস্তম্ভে পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে লাগানো হবে ওই আলো। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই রাস্তার এক দিকে থাকবে পুরসভার বর্তমান বাতি (সোডিয়াম ভেপার)। আর উল্টো দিকের বাতিস্তম্ভে লাগানো হবে এলইডি। এক মাস ধরে আলো জ্বালিয়ে পরখ করা হবে কোন ধরনের বাতিতে বিদ্যুতের বিল বেশি হচ্ছে।” তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সংস্থা এনার্জি এফিসিয়েন্সি সার্ভিসেস লিমিটেড (ইইএসএল) ওই আলো লাগানোর ব্যাপারে পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারাই করবে পাইলট প্রোজেক্টটি। এক মাস তারা নিজেদের খরচে আলো দেবে সেখানে। ওই প্রকল্পের হিসেব পাওয়ার পরেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেয়র শোভনবাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রীকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতা শহরে ত্রিফলা বাতিস্তম্ভ ছাড়া প্রায় এক লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি বাতিস্তম্ভ রয়েছে। যে সব স্তম্ভের কোথাও ২৫০, কোথাও বা ৪০০ ওয়াটের সোডিয়াম ভেপার এবং মেটাল হ্যালাইড বাতি লাগানো আছে। মূলত বড় রাস্তায় ৪০০ ওয়াট বাতি লাগানো হয়। বর্তমানে ফি মাসে ৩০ কোটি টাকারও বেশি বিল মেটাতে হচ্ছে পুর-প্রশাসনকে।
পুরসভার আলো দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, ওই হিসেবে অবশ্য বাতি ছাড়াও শহরের জল সরবরাহ, নিকাশি ব্যবস্থার জন্য ব্যবহৃত শ’তিনেক পাম্পও রয়েছে। বিলের একটি বড় অংশের টাকা খরচ হয় পাম্পের জন্যও। তাঁর কথায়, “শহরের রাস্তায় থাকা বাতি জ্বালাতে যা বিল দিতে হয়, তার পরিমাণও অনেক। তাই বিলের ভার কমাতে বিদ্যুতের খরচ কমানো অত্যন্ত জরুরি।” তা না হলে বিদ্যুতের বিল মেটাতেই পুরসভার আর্থিক বাজেটের একটি বড় অংশ চলে যাবে বলে জানিয়েছেন ওই ইঞ্জিনিয়ার। সে কথা ভেবেই বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী বাতি ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।
কতটা বিদ্যুতের সাশ্রয় হতে পারে? পুরসভার আলো দফতরের এক আধিকারিক জানান, শহরের রাস্তায় লাগানো সোডিয়াম ভেপার ও মেটাল হ্যালাইড জ্বালাতে যা খরচ হয়, তার অর্ধেক খরচেই এলইডি আলো জ্বালানো যাবে। অর্থাৎ, এক ধাক্কায় বিদ্যুতের বিল বেশ কয়েক কোটি টাকা কমানো যাবে বলে মনে করছেন পুর-কর্তারা। যদিও ওই আলোর মেয়াদ ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। আর মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়ে ওই আলোর উজ্জ্বলতা ক্রমশ কমতে থাকে বলে জানিয়েছেন পুরসভারই এক বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার। পাইলট প্রোজেক্টে সে সব দিকেও নজর রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে।
উজ্জ্বলতার কথা ভেবে ইতিমধ্যেই রাজ্যের একাধিক স্থানে এলইডি বাতি ব্যবহার করেছে সরকার। বিশেষ করে নিউ টাউন সাজিয়ে তোলা হয়েছে ওই আলো দিয়েই। রাজারহাট-নিউ টাউনে ইকো ট্যুরিজিম পার্কেও লাগানো হয়েছে এলইডি আলো। যার তারিফ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।
তবে শহর জুড়ে এলইডি লাগানো হলে পুরনো বাতিগুলির কী হবে, তা নিয়ে চিন্তিত পুর-প্রশাসন। এ নিয়ে মেয়র বলেন, “পাইলট প্রোজেক্ট দেখার পরেই সে সব নিয়ে ভাবা হবে।” |