ঘন কুয়াশায় রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়ে কানে এসেছিল একটা ‘ঝপাৎ’ শব্দ। তার কিছুক্ষণ পরেই ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার। রাস্তার পাশে খালের ধারে যেতেই চোখে পড়ল একটা গাড়ি ক্রমশ জলের মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে। ভিতর থেকে হাত বাড়িয়ে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছেন দুই যুবক। সোমবার ভোর ছ’টা নাগাদ তিলজলা থানার বাসন্তী হাইওয়ের কয়লা ডিপো এলাকায় এমন দৃশ্য দেখে প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে গিয়েছিলেন চর্মনগরীর দিনমজুর বাপ্পা মোল্লা। তাঁর চেঁচামেচিতেই ছুটে আসেন স্থানীয় মানুষ।
পুলিশ জানায়, ঘন কুয়াশায় দিশা ঠিক করতে না-পেরে বাঁকের কাছে এসে নিয়ন্ত্রণ হারায় গাড়িটি। চার জন আরোহী নিয়ে পড়ে যায় ঘুসিঘাটা খালে। দুর্ঘটনার জেরে গাড়ির মধ্যেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় শেখর কর্মকার (৩০) নামে এক যুবকের। স্থানীয় বাসিন্দা ও ট্রাফিক পুলিশকর্মীরা বাকি তিন জনকে উদ্ধার করে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দেবব্রত বিশ্বাস (৩২) নামে আর এক যুবককে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। সুরজিৎ বসাক ও মনতোষ মণ্ডল নামে আরও দুই আরোহীকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। |
দুর্ঘটনার পরে সেই গাড়ি। সোমবার, বাসন্তী হাইওয়েতে।—নিজস্ব চিত্র। |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ও আহতেরা সকলেই উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের বাসিন্দা। তাঁদের এক আত্মীয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন। রাতে হাসপাতালেই ছিলেন চার জন। সকালে গাড়িতে বসিরহাট ফিরছিলেন। পথে বাসন্তী হাইওয়ের কয়লাডিপো এলাকায় একটি বাঁকের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালের জলে পড়ে যায় গাড়িটি।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, কুয়াশার মধ্যেই বেশ দ্রুত গতিতে গাড়িটি চলছিল। বাঁকের কাছে এসে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। কয়লা ডিপোর কিছুটা আগে ওই বাঁকটি খুবই বিপজ্জনক। সেই কারণে ওই বাঁকের প্রায় কুড়ি মিটার আগে রাস্তার দু’পাশে ‘সর্তকীকরণ’ বোর্ডও লাগানো হয়েছে। পুলিশের অনুমান, কুয়াশা থাকায় সম্ভবত বোর্ডটি নজরে পড়েনি চালকের। সেই কারণেই এই বিপত্তি। তদন্তকারী এক অফিসার জানান, মাঝেমধ্যেই ওই এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে। কয়েক দিন আগে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় খালে পড়ে গিয়েছিল। গত কয়েক মাসেও একাধিক গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালের জলে পড়ে গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই কারণে যান নিয়ন্ত্রণের জন্য ওই রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। |