বাড়তি ভাড়া থেকে যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অটোর দৌরাত্ম্য সমানে চলেছে। তার মোকাবিলায় এ বার ম্যাজিক গাড়ির জুজু দেখাচ্ছেন পরিবহণমন্ত্রী!
আগেও অনেক বার হুমকি-হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। বেপরোয়া অটোরিকশাকে শৃঙ্খলায় বাঁধতে ফের হুঁশিয়ারির রাস্তাই নিলেন তিনি। বাড়তি বলতে ভব্য হয়ে ওঠার জন্য বেঁধে দিলেন সময়সীমা। মন্ত্রী সোমবার জানান, ৭ জানুয়ারির মধ্যে সব অটোকেই চলতে হবে শৃঙ্খলার রাস্তায়। তা না-মানলে পাল্টা হিসেবে সরকার ম্যাজিক, আইরিশ, জিও-র মতো গাড়ি রাস্তায় নামানোর অনুমোদন দিয়ে দেবে।
হাজারো হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও কলকাতা জুড়ে অটোর বেয়াড়াপনা চলছেই। এ দিন পরিবহণ ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে তা মন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেন। তাঁর খেদ, অনেক বার অটোকে শৃঙ্খলা মানার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তারা অতিরিক্ত যাত্রী তোলা, কাটা রুটে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, বেশি ভাড়া নেওয়ার মতো বেআইনি কাজ করেই যাচ্ছে। সরাসরি অটোচালকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। তার মধ্যে নিজেদের শুধরে নিন। নইলে রাস্তায় ম্যাজিক, জিও, আইরিশের মতো গাড়ি নামিয়ে দেব। তখন যেন এসে অনুরোধ করবেন না!”
অনেক অটো বারবার দৌরাত্ম্য চালিয়েও ইউনিয়নের প্রশ্রয়ে পার পেয়ে যায় বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এ বার শক্ত হাতে তারও মোকাবিলা করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি জানিয়ে দেন, “নিয়ম ভাঙলে কোন ইউনিয়নের অটো, তা দেখা হবে না। ৭ তারিখের পরে আমরা পুলিশকে বলে দেব, কাটা রুটে অটো চালালে প্রয়োজনে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করুন।” কাটা রুট মানে সরকার নির্ধারিত রুট না-মেনে অটো নিয়ে ইচ্ছেমতো ঘোরা এবং মর্জিমাফিক ভাড়া দাবি করা।
অটোকে শৃঙ্খলায় বাঁধতে অতীতে মন্ত্রী যত বার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, প্রতি বারেই চালকেরা কিছু দিন নিয়ম মেনেছেন। তার পরে আবার যথারীতি বিশৃঙ্খলার রাস্তা বেছে নিয়েছে অটো। তাই পরিবহণমন্ত্রী নতুন করে হুঁশিয়ারি দিলেও তা কতটা কার্যকর হবে এবং কার্যকর হলেও তা কত দিন স্থায়ী হবে, তা নিয়ে সংশয়ে পরিবহণ দফতরের কর্তারাই। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি নেত্রী দোলা সেন মনে করেন, বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। কিন্তু অসম্ভব নয়। বাম জমানাকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “৩৪ বছরের পাপ পরিষ্কার করতে সময় লাগবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার জঙ্গলমহল ও পাহাড়ে প্রমাণ করেছে, প্রয়োজনে তারা প্রশাসক হিসেবে কতটা কড়া হতে পারে। তাই পরিবহণ দফতরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।”
পরিবহণমন্ত্রীর এই ঘোষণার পিছনে ‘অন্য ফন্দি’ রয়েছে বলে মনে করছেন বিরোধী দল সিপিএম সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন সিটুর নেতারা। সিটুর অটো ইউনিয়নের নেতা বাবুন ঘোষ বলেন, “সরকার অনেক দিন ধরেই ম্যাজিক গাড়ি নামানোর ফন্দি আঁটছে। মন্ত্রী সেটারই গান গেয়ে রাখলেন!” তাঁর অভিযোগ, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ম্যাজিক গাড়ি নামানোর তোড়জোড় করছে সরকার। আসলে সরকারের বদান্যতায় বাস তো উঠেই যেতে বসেছে। সরকার তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন এই সব ভাবছে বলে মন্তব্য করেন ওই সিটু নেতা।
|