গ্রামের মানুষের আর্থিক হাল ফেরাতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলাই যথেষ্ট নয়। তার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনও হওয়া চাই। আর সে জন্য গ্রাহকের রোজগারের ব্যবস্থা করা জরুরি। এই 3টি বিষয় মাথায় রেখেই গ্রামের বাজার ধরতে উদ্যোগী এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক।
এত দিন গ্রামে পরিষেবা দিত প্রধানত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। এ বার সেই উদ্যোগে সামিল বেসরকারি ব্যাঙ্কও। একই লক্ষ্যে গ্রামের পথে পাড়ি দিচ্ছে আইসিআইসিআই, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, ইয়েস ব্যাঙ্ক-সহ আরও কিছু বেসরকারি ব্যাঙ্ক।
দেশের যে-সব অঞ্চলে ব্যাঙ্ক পরিষেবা আদৌ নেই বা সামান্য রয়েছে, সেখানকার ৫ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক। সেই কারণে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের এমডি আদিত্য পুরী বলেন, “আমরা একটি ত্রিমুখী পরিকল্পানা তৈরি করেছি।”
পরিকল্পনাটি কী? প্রথমত, গ্রামের মানুষের মধ্যে ব্যাঙ্ক পরিষেবা গ্রহণের অভ্যাস সৃষ্টি করা। এর জন্য দেশের বিভিন্ন গ্রামে মাত্র দু’জন কর্মী নিয়ে অতি ক্ষুদ্র শাখা চালু করেছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক। দ্বিতীয়ত, খুচরো প্রায় সব রকম ঋণ মেলে। তৃতীয়ত, গ্রামের মানুষকে রোজগারের উপযুক্ত করে তোলার পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে বেসরকারি ক্ষেত্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাঙ্কটি। পুরী জানান, “লেনদেনহীন অ্যাকাউন্ট খুলে কোনও শাখাকে লাভজনক করে তোলা কঠিন। তাই ‘সাসটেনেব্ল লাইভলিহুড ইনিশিয়েটিভ (এসএলআই) শীর্ষক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।” এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটি ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোহার রাজ বলেন, “ওই প্রকল্পের মাধ্যমেই গ্রামের মানুষকে রোজগেরে করে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছি।” প্রকল্পের আওতায় প্রথমে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ধাঁচে মহিলাদের ছোট ছোট গোষ্ঠী তৈরি করা হয়। গোষ্ঠীর সদস্যদের যোগ্যতা দেখে ব্যবস্থা করা হয় হাতেকলমে প্রশিক্ষণের। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের ব্যবসার জন্য ঋণ দিয়ে নামানো হয় রোজগারের পথে।
বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কও স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে ঋণ দিচ্ছে। কিন্তু তারা সাধারণত ওই কাজ করে অ-সরকারি সংস্থা বা এনজিও-র মাধ্যমে। এইচডিএফসি তা করছে নিজস্ব কর্মীর মাধ্যমে। রাজ জানান, “এ জন্য ৭ হাজার অফিসার নিয়েছি। শীঘ্রই আরও হাজার তিনেক নিয়োগ করা হবে। তাঁরাই গ্রামে গিয়ে গোষ্ঠী তৈরি করেন। দক্ষতা যাচাই করার পর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি আমরাই। পশুপালন থেকে শুরু করে হস্ত-তাঁত বসানো, শাড়ি-জামাকাপড়ে নকশা করা ইত্যাদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।”
আপাতত ২৪টি রাজ্যে প্রায় ৮ হাজার গ্রামে প্রকল্পটি চালু করেছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক। ঋণ দিয়েছে ২৫০০ কোটি টাকারও বেশি। পশ্চিমবঙ্গে ৭টি জেলার ২৩০টি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার ব্যক্তি প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। রাজ্যে ঋণের অঙ্ক ৬৫ কোটি টাকা ছড়িয়েছে।
|