সারা পশ্চিমবাংলায় ১৭টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত ও বঞ্চিত জেলা হল দক্ষিণ দিনাজপুর। তিন দিক বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ঘেরা এই জেলার অবহেলার চূড়ান্ত নিদর্শন হল বালুরঘাট হাসপাতাল। হিলি থেকে হরিরামপুর পর্যন্ত ৮টি ব্লকের প্রায় ১৬ লক্ষ নাগরিকের বাঁচার একমাত্র ভরসা এই হাসপাতাল। জেলাবাসীদের দীর্ঘ দিনের দাবি সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত এই হাসপাতালে চালু হয়নি কেমোথেরাপি-সহ ক্যানসার ইউনিট এবং ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট। হাসপাতালে গরিব ও দুঃস্থ রোগীদের জন্য আউটডোরের চিকিত্সা ব্যবস্থা খুব খারাপ। ডাক্তাররা নিয়মিত বসেন না। স্যালাইন ছাড়া ওষুধ পাওয়া যায় না। হাসপাতালের নার্স, জিডিএ, ওয়ার্ডমাস্টার, আয়াদের ব্যবহার খুবই খারাপ। সর্বত্রই দুর্নীতি, অবহেলা, প্রচণ্ড দলবাজি। হাসপাতালে দুষ্টচক্র এমন সক্রিয় যে এডস পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্লাড টেস্ট ইউনিটটি জনসাধারণের জন্য চালু করা হয়নি।
ডাক্তারের অভাবে জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন কারণে একের পর এক ডাক্তার হাসপাতাল ছাড়লেও তাদের শূন্য স্থানে নতুন কোনও ডাক্তার আসেন না। চেস্ট ও মেডিসিন বিভাগের ডাক্তার উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যাওয়ার পর সেই বিভাগটি কার্যত বন্ধ রয়েছে। সাধারণ মেডিক্যাল বিভাগে ১৪টি ডাক্তারের পদ শূন্য রয়েছে। ফিজিসিয়ান বিভাগে রয়েছে পদ চারটি। রয়েছেন তিন জন ডাক্তার। রেডিওলজি এবম অ্যানাসথেটিস্ট সব বিভাগেই ডাক্তারের অভাব প্রকট। ২০১২-র নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বড় অপারেশন হয়েছে ৫টি। ২০১৩-এ ৩ মাস অপারেশন বন্ধ অ্যানাথেটিস্টের অভাবে। কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক নেই এই হাসপাতালে। কার্ডিওলজিস্ট, সার্জেন, চোখের রোগ বিশেষজ্ঞের প্রকট অভাব এখানে। এখানে ভর্তি হতে এলে ডাক্তা রোগীদের শিলিগুড়ি বা কলকাতা রেফার করে। বালুরঘাট সদর হাসপাতালে আয়ুর্বেদ ভবন (পঞ্চকর্ম চিকিত্সাকেন্দ্র) রয়েছে অথচ পরিষেবা পান না রোগীরা। বেশির ভাগ সময় বন্ধই থাকে আয়ুর্বেদ ভবন। হাসপাতালে হোমিওপ্যাথ চিকিত্সার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু কোনও ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় না হোমিওপ্যাথি ওষুধ। দক্ষিণ দিনাজপুরে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কাজল মণ্ডলের বক্তব্য, “আরও চিকিত্সকের দাবি করে কলকাতার রাজ্য স্বাস্থ্যভবনে চিঠি দেওয়া হয়েছে।” এই অবস্থায় মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
জয়দীপ গুহ, বালুরঘাট |