নকল পাটালির ঠেলায় কমছে আসল নলেন গুড়ের পাটালির বিক্রি।
ইছামতীর তীরে আগে যেখানে খেজুর গাছের সারি ছিল, সেখানে ক্রমশ গড়ে উঠছে ইটভাটা। মাটি পুড়ছে। জমি শুকোচ্ছে। পরিবেশ বদলাচ্ছে। আর তাতেই রস কমছে খেজুর গাছের শরীরে। রসের জন্য ভাঁড় পেতে রাখা শিউলিরা (যাঁরা রস সংগ্রহ করেন) বেশ মন খারাপ করেই ফিরে আসছেন। আর তারই সুযোগে বাজার ভারি করছে চিনি, চুনের মিশেলে তৈরি নকল পাটালি। অনেকে না বুঝে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু স্বাদ খুলছে না পিঠে পুলির। কেউ কেউ আবার দানাগুড় ও মৌঝোলা তৈরির জন্য মেশাচ্ছেন আলু সিদ্ধ।
এক সময়ে শীতের শুরুতেই বাজার মাত করত বসিরহাটের নলেনগুড়ের রসগোল্লা, সন্দেশ, পাটালি। বিদেশেও পাড়ি দিত তা। হাটে বাজারে গেলেই দূর থেকে ভেসে আসত নলেন গুড়ের সুবাস। অগ্রহায়ণের শুরুতেই খেজুরগাছ পরিষ্কার করে শিউলিরা। একটি খেজুর গাছ তিন বার কাটার পরে তাতে রসের জন্য ভাঁড় পাতা হয়। দিনে দু’বার রস হয় গাছে। ভোরের রসকে জিরেন বলে, বিকেলের রসকে বলে ওলা। পৌষ-মাঘে রস মেলার পর ফাল্গুনে রস কমতে থাকে। রসের ঘনত্বও বাড়ে। গাছ কাটার পরে প্রথম দিকের রসেই ভাল নলেনগুড় হয়। পশ্চিম দণ্ডিরহাটের শিউলি অহাব গাজি, খালেক মোল্লার কথায়, দেড় দু’ভাঁড় রস জাল দিলে তবেই এক কেজির মতো খাঁটি নলেন গুড়ের পাটালি তৈরি হয়। গুড় ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, “মহকুমা জুড়ে খেজুর গাছ কেটে টালির কারখানায় তা বিক্রির ধুম পড়ে গিয়েছে। এক সময়ে ইছামতী নদীর ধার ঘেঁষে কেবল সার সার খেজুর গাছ ছিল। এখন সেখানে তৈরি হচ্ছে ইটভাটা। টালি কারখানাগুলিতে জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কাটা খেজুর গাছ। আগের মতো রস পাচ্ছেন না বলে জীবিকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন শিউলিরা।
গ্রামবাসীদের অবশ্য বক্তব্য, “নকল নলেন গুড়ের জন্যই আসল গুড় নষ্ট হতে বসেছে। চাহিদাও কমছে। এমনিতে নলেনের রস কমলেও, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চিনি আর চুন দিয়ে নকল নলেনগুড় তৈরি করছেন। অনেকে আবার লাভ করতে ঝোলা গুড় বা পাটালি তৈরিতে আলু সেদ্ধ মেশাচ্ছেন। ১০০ টাকা কেজি গুড়ে ১০ টাকা কেজি আলু মেশালে লাভের অঙ্ক ভালই হয়।”
মিষ্টি ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, “বছর কয়েক আগেও নভেম্বরের শুরু থেকেই শীতের দিনগুলিতে বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ কেজির উপরে নলেন গুড়ের সন্দেশ, রসগোল্লা বাইরে যেত। এখন ধীরে ধীরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০-৭০ কেজিতে।” |