সম্পাদকীয় ২...
সম্ভাবনার শিল্প
মাত্র পাঁচ মাস আগে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নায়ক বিমল গুরুঙ্গ জিটিএ প্রধানের পদ ছাড়িয়া স্বতন্ত্র গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনের নূতন পর্ব শুরু করিয়াছিলেন এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করিয়াছিলেন। বছর না ফুরাইতে সেই পদে তাঁহার প্রত্যাবর্তন, কলিকাতার রাজভবনে শপথ গ্রহণ এবং সেই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহাস্য উপস্থিতি নাটকীয় বলিলে অত্যুক্তি হয় না। অগস্ট-সেপ্টেম্বরে বিমল গুরুঙ্গ রাজ্য সরকার ও তাহার নেত্রী সম্পর্কে যে ভঙ্গিতে কথা বলিতেন, তাহার সহিত তাঁহার বর্তমান ভঙ্গির দূরত্ব দ্বিমেরুপ্রতিম। কিন্তু এই পরিবর্তন কেবল নাটকীয় নহে। ইহা পাহাড়ের রাজনীতিতে একটি পরিবর্তনের সংকেত বহন করিতেছে। সেই পরিবর্তিত রাজনীতিতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও রাজ্য সরকার তথা শাসক দলের সহযোগিতা একটি কার্যকর এবং সফল ভূমিকা পালন করিতে পারে, অন্তত আপাতত। সহজ সত্য ইহাই যে, পাহাড়ের মানুষ বিরোধিতা এবং অশান্তির রাজনীতিতে ক্লান্ত, তাঁহাদের জীবন ও জীবিকা তাহাতে বিপন্ন, সুতরাং তাঁহারা শান্তি চাহিতেছেন। গুরুঙ্গের ‘প্রত্যাবর্তন’, রাজ্য সরকারের সহিত সহযোগিতার অঙ্গীকার এবং রাস্তাঘাট, পানীয় জল, পর্যটন ইত্যাদি বিষয়ে জোর দেওয়ার প্রস্তাব সেই দাবির সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেখানেই তাঁহার নেতৃত্বে ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় অগ্রগতির সম্ভাবনা। সম্ভাবনা শান্তিরও।
তাহার অর্থ এই নয় যে, পাহাড়ের সমস্যা মিটিয়া গিয়াছে। স্বাধিকারের দাবি বিমল গুরুঙ্গের পক্ষে ত্যাগ করা সম্ভব নয়, ত্যাগ করিলে তিনি পাহাড়ের রাজনীতিতে অপাঙক্তেয় হইয়া যাইবেন। তাহা জানেন বলিয়াই শপথ গ্রহণ এবং উন্নয়নী অঙ্গীকারের পাশাপাশি প্রায় এক নিশ্বাসে তিনি গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ দিবার কথা বলিয়াছেন। কেন্দ্রীয় সরকার এখন অস্তাচলে, তাহার উপর চাপ দিয়া আর কিছু হইবার নহে, তাহা তিনি বিলক্ষণ জানেন। তাহা সত্ত্বেও তিনি কথাটি বলিয়া রাখিয়াছেন, কারণ না বলিলে তাঁহার চলিত না। স্পষ্টতই, এখন তাঁহার লক্ষ্য জিটিএ তথা রাজ্য সরকারি অর্থ ও সহযোগিতা কাজে লাগাইয়া পাহাড়ে আপন প্রতিপত্তি জোরদার করা। দ্বিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাঁহার উত্‌সাহও এই কারণেই। আপন রাজনৈতিক সামর্থ্য জোরদার করিতে পারিলে ভবিষ্যতে তাঁহার পক্ষে গোর্খাল্যান্ডের দাবি লইয়া নূতন করিয়া আন্দোলন শুরু করা সহজ হইবে, আপন নেতৃত্বও নিরাপদ হইবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাহা বিলক্ষণ বোঝেন। পাহাড়ের অশান্ত রাজনীতিকে তিনি বশে আনিয়াছেন, বিমল গুরুঙ্গকে রাজভবনে আনিয়া শপথ লওয়াইয়াছেন, ইহা অবশ্যই বড় কৃতিত্ব। কিন্তু রাজনীতিতে যেমন স্থায়ী শত্রুতা নাই, তেমনই স্থায়ী বন্ধুত্বও নাই। রাজ্য সরকারের কাজ হইবে পাহাড়ের যথার্থ উন্নয়নে উদ্যোগী হওয়া। উন্নয়নের পথেই বিচ্ছিন্নতার দাবির মোকাবিলা সম্ভব। সেই উন্নয়নে মোর্চাকে শরিক করিতেও কোনও অসুবিধা নাই, বরং তাহাতে লাভই বেশি। পাহাড়েও ক্ষুদ্র দলতন্ত্রের খেলা খেলিতে গিয়া সি পি আই এম ভুল করিয়াছিল। তাহাতে দলেরও সমস্যা বাড়িয়াছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থকে আপন দলের স্বার্থের উপরে স্থান দেন, তবে আখেরে তাঁহার দলেরও লাভ হইবে। রাজনীতি সম্ভাবনার শিল্প। পাহাড়ে একটি সম্ভাবনা তৈয়ারি হইয়াছে। আপাতত সম্ভাবনামাত্র। কিন্তু তাহা মূল্যবান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.