আপ-ছায়ায় মোদীও আন্দোলনমুখী

২৯ ডিসেম্বর
ধোনির শহরে চল্লিশ মিনিটের নিখুঁত ইনিংস। তিনি খেললেন ধরে। মেরে খেলল দল।
গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গার মামলায় আদালত তাঁকে রেহাই দেওয়ার পর আজই প্রথম প্রকাশ্যে এলেন নরেন্দ্র মোদী। মাঝে তিনি ব্লগে দুনিয়াকে জানিয়েছেন, যন্ত্রণা-পর্ব পেরিয়ে এসে এখন তিনি মুক্তি ও শান্তি অনুভব করছেন। রাঁচির মঞ্চে আজ যেন সে ভাবেই পেশ করলেন নিজেকে।
‘শাহজাদা’, ‘সাহাবজাদা’র পরে এ দিন তিনি রাহুল গাঁধীকে কটাক্ষ করতে গিয়ে তাঁর ঘোষণাকে ‘আকাশবাণী’ বলে কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু আক্রমণের ঝাঁঝ ছিল তুলনায় কম। মিনিট চল্লিশের মধ্যে ধরে ধরে তিনি বোঝালেন, দাঙ্গার ভূত আপাতত ঘাড় থেকে নামার পর এখন তাঁর ভাবনা শুধুই কংগ্রেসের হাত থেকে দেশকে বাঁচিয়ে সুশাসন দেওয়া।
এর সমান্তরালে আক্রমণের দায়িত্ব সামলালেন দলের অন্য নেতারা। ভোট মেরুকরণের কথা মাথায় রেখেই উগ্র ভাবে তাঁরা কখনও আক্রমণ করলেন পাকিস্তানকে, কখনও মার্কিন প্রশাসনকে। প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত সিন্হা তো ঘোষণাই করে দিলেন, “দাঙ্গার মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার পরেও যদি স্বয়ং বারাক ওবামা এসে মোদীকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে যান, তা হলে আমরাও (ক্ষমতায় এলে) ওবামার ভিসা বাতিল করে দেব।”
জনসমুদ্রের উদ্দেশে। রবিবার রাঁচির জনসভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। প্রশান্ত মিত্রের তোলা ছবি।
নরম-গরমের এই মোদী-প্যাকেজের আর একটি দিকও বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠল এ দিনের সভায়। তা হল, দল অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে উপেক্ষা করে চলার কৌশল নিলেও তাঁর রাজনীতির সদ্য-সফল ধারাটি থেকে দূরে থাকতে চান না বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তা হল মানুষকে নিয়ে চলা। ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের কাছে দরবার করা। গোটা দেশে সুশাসন আনার জন্য আজ এই পথেই গণ-আন্দোলনের ডাক দিলেন মোদী। মুখে কেজরিওয়ালের কথা না বলুন, কিন্তু মোদীর ওই আহ্বানের নেপথ্যে কেজরিওয়ালেরই ভাবনার মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রামদেবও আজ মোদীর হয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করার কথা বলেছেন।
দিল্লিতে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া কেড়ে নিয়ে বিজেপিকে বড় রকমের ধাক্কা দিয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ। তাঁর আন্দোলনের ধারাকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে চাইলেও মোদী কিন্তু নিশানায় রাখছেন রাহুলকেই। যাতে আগামী লোকসভা ভোটটা হয়ে ওঠে শুধুই কংগ্রেস-বিজেপি-র লড়াই। তাই কেজরিওয়ালের পাখির চোখ যদি হয় স্বচ্ছ প্রশাসন, সেখানে মোদী তাঁর সুশাসনের স্বপ্নের ডালিতে রাখছেন সকলের সব সমস্যা ঘোচানোর অঙ্গীকার। এমন সুশাসন, যা মূল্যবৃদ্ধি রুখবে, রোজগার বাড়বে, উন্নয়ন হবে এবং প্রশাসনকে করবে দুর্নীতিমুক্ত।
মোদীর পরোক্ষ বার্তাটি স্পষ্ট, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিজেপি-ই একমাত্র বিকল্প শক্তি গোটা দেশে। এবং যে কারণে গণ-আন্দোলনের কথা বলা ভিন্ন মেজাজের এই মোদীও কিন্তু রাহুলকে নিরন্তর কটাক্ষ করে যাওয়া থেকে সরে আসছেন না। ক’দিন আগেই দুর্নীতি ও মূল্যবৃদ্ধি রুখতে দিল্লিতে কংগ্রেস-শাসিত মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন রাহুল। তার পর সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি দুর্নীতি রোখার ব্যাপারে তাঁর মনোভাবের কথা জানিয়ে দায় চাপান বিজেপির ঘাড়েই। রাহুলের ওই আক্রমণেরই আজ জবাব দিলেন মোদী। তাঁর কথায়, “পুরনো জমানায় আকাশবাণীর কথা শুনেছি। যাকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হত। আর এখন এক নতুন আকাশবাণী আসে। এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে, যাঁর হাতে রয়েছে দুর্নীতি দূর করা থেকে শুরু করে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানোর যাবতীয় দায়িত্ব ও অধিকার।”
এখানেই শেষ নয়। রাহুলকে বিদ্রুপ করে মোদী আরও বলেন, “আকাশবাণী করেই লুকিয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। নিজের দায় ঝেড়ে ফেলে রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলে দেন। যার থেকে তাঁর কপটতা ধরা পড়ে।” এর পরেই মোদী চ্যালেঞ্জ ছোড়েন, “দুর্নীতির লালনপালন হচ্ছে কংগ্রেসের কোলেই। আকাশবাণীতে এতটাই সততা থাকলে তার জবাব দিন।”
মোদীর দাবি, কংগ্রেস জনতার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই আকাশবাণী জনতার মঙ্গল করতে পারে না। তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে না। তাই বিকল্প পথের হদিস দিতে মোদী বলেন, “হেলিকপ্টারে আসতে গিয়ে দেখছিলাম, মাইলের পর মাইল পথ মানুষ হেঁটে আসছেন এই সভায় যোগ দিতে। জানি না তাঁরা পৌঁছতে পেরেছেন কি না। এঁরা আসছেন কুশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। সুশাসনের প্রত্যাশায়। দেশ জুড়ে তাই সুশাসনের দাবিতেই শুরু হোক গণ-আন্দোলন।”
আগামী ক’মাসে দেশের আম ভোটারের কাছে এবং ভোটের আগে-পরে যে সব রাজনৈতিক দল পাশে আসতে পারে, তাদের সকলের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোটা বড় চ্যালেঞ্জ মোদীর সামনে। যে কারণে ভোট মেরুকরণের ভার নিজের হাতে না রেখে, এ ব্যাপারে সামনে রাখছেন দলের অন্য নেতাদের। গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে আদালত ক্লিনচিট দেওয়ার পরে সুদীর্ঘ নিবন্ধ লিখে নিজের যন্ত্রণার কথা জানিয়েছিলেন মোদী। আজ সে প্রসঙ্গ ছুঁয়েছেন শুধু কংগ্রেসের সাম্প্রদায়িক ও বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে। এই প্রসঙ্গে সওয়াল করে গিয়েছেন বিজেপি-র অন্য নেতারা।
দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহ যেমন বললেন, “২০০২ সালের এক দাঙ্গাকে সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদীকে বারবার সাম্প্রদায়িক বলা হয়েছে। এ বারে যখন আদালত তাঁকে ক্লিনচিট দিল, কংগ্রেস মোদীকে বিপাকে ফেলার জন্য নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করল। মোদী নাকি গোয়েন্দাগিরি করছেন। মোদী তদন্ত কমিশন গঠন করার পরেও কেন্দ্র আবার কমিশন গঠন করছে।”
মোদী নিজে এড়িয়ে গেলেও দলের সভাপতিই এ দিন তাঁকে হিন্দুত্বের সঙ্গে জড়িয়ে নেন সুকৌশলে। রামের সঙ্গে মোদীর তুলনা টেনে রাজনাথ বলেন, “ভগবান রাম যাতে সিংহাসনে বসতে না পারেন, তার জন্য মন্থরাও এমন ষড়যন্ত্র করেছিল যে, রামকে বনবাসে যেতে হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রামকে সিংহাসনে বসা থেকে কেউ ঠেকাতে পারেনি। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কংগ্রেস যত ষড়যন্ত্র করবে, ততই মোদী শক্তিশালী হবেন। কেউ তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়া আটকাতে পারবে না।”
মোদীর সুশাসনের বার্তার সঙ্গে রাজনাথের ওই উপমা দুইয়ে মিলে তৈরি হল এক নিখুঁত মোদী-প্যাকেজ। যেখানে মোদী আর দলের চোখে পোস্টার বয় নন, খোদ রাম। যিনি সুশাসন দিতে সক্ষম।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.