‘মঙ্গলে উষা বুধে পা, যথা ইচ্ছা তথা যা’। তেরো শেষ হচ্ছে মঙ্গলে। বুধে পা রেখে বছর শুরু করছে চোদ্দো। শেয়ার বাজারে যাঁরা বিচরণ করেন, তাঁরা অবশ্যই চাইবেন নতুন বছরে শেয়ার সূচক উপর দিকে যথা ইচ্ছা তথা যাক।
সেই রকম পরিবেশও সৃষ্টি হচ্ছে একটু একটু করে। শীতের ফসল বাজারে এলে পণ্যমূল্য কমবে এই বিশ্বাসে তেজী মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও সুদ বাড়াননি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তা রঘুরাম রাজন। এতে খুশি শিল্প-বাণিজ্য মহল। খুশির প্রতিফলন দেখা গিয়েছে শেয়ার সূচকে। শীতের সব্জির দাম এরই মধ্যে বেশ খানিকটা কমেছে। যে-পেঁয়াজ গৃহস্থ মাসখানেক আগে ৮০ টাকায় কিনেছে, তা এখন কিনতে পাওয়া যাচ্ছে ২০/২৫ টাকায়। সামনে বড় নির্বাচন। দাম কমাতে না-পারলে ভোট পাওয়া যাবে না এই কথা মাথায় রেখে অবশেষে নড়ে চড়ে বসেছে মনমহোন সরকার।
দিল্লিতে কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির রাজত্ব শুরু হওয়ায় দুর্নীতির ব্যাপারগুলি এখন প্রশ্রয় পাবে না বলে মনে করা হচ্ছে। পণ্যমূল্য যদি সত্যিই কমতে শুরু করে, তবে সুদ কমার সম্ভাবনাও থাকবে। তা যদি হয়, তবে সূচককে হয়তো আর বেঁধে রাখা যাবে না। এ ছাড়া মার্কিন অর্থনীতির উন্নতি কিছুটা হলেও চাঙ্গা করবে বিশ্ব অর্থনীতিকে। এর অনুকূল হাওয়া বইবে ভারতেও। মার্কিন সরকার ধীরে ধীরে আর্থিক ত্রাণ কমালেও তার কোনও বড় প্রতিফলন ভারতে পড়বে না বলেই মনে করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আশা করা যায়, নতুন বছরে আমরা আবার ‘বুল বাজার’ দেখতে পাব। সেনসেক্স ও নিফ্টি পেরিয়ে যাবে সর্বকালীন রেকর্ড।
প্রধান দুই সূচক এখন যথেষ্ট উঁচু জায়গায়। প্রথম সারির অনেক শেয়ারই পৌঁছেছে সর্বোচ্চ উচ্চতায়। বাজারের স্বাস্থ্য তখনই প্রকৃত অর্থে ভাল হবে, যখন ঊর্ধ্বচাপ দেখা দেবে ছোট এবং মাঝারি শেয়ারগুলির মধ্যে। বিদেশি লগ্নিকারীদের নজর মূলত বড় শেয়ারগুলির উপরেই। শেয়ারগুলি নাগালের বাইরে চলে গেলে স্থানীয় লগ্নিকারীরা কিনতে চাইবেন ভাল মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ শেয়ার। এটা সম্ভব সাধারণ লগ্নিকারীদের মনে আস্থা ফিরলে তবেই। লোকসভা নির্বাচনের আগে যা না-ও বাস্তবায়িত হতে পারে। দিল্লিতে মোটামুটি একটি স্থায়ী সরকার গঠিত হলে এবং অন্যান্য পরিবেশ অনুকূলে থাকলে হয়তো আমরা আম আদমিকে আবার ইক্যুইটির জগতে প্রবেশ করতে দেখব। এটি হতে পারে বছরের দ্বিতীয় ভাগে।
বাজারে এসে গিয়েছে মূল্যবৃদ্ধি- সূচক লগ্নিপত্র। প্রথম দিকে সুদের হার বেশ আকর্ষণীয়। মূল সুদ ১.৫ শতাংশ ছাড়াও পাওয়া যাবে ভোগ্যপণ্যের গড় মূল্য সূচক (সি পি আই) অনুযায়ী অতিরিক্ত সুদ। এই হিসেবে প্রথম দিকে সুদ দাঁড়াবে ১১ শতাংশেরও উপরে। এই সুদ নজর টানলেও মনে রাখতে হবে ভবিষ্যতে পণ্য মূল্য কমার সঙ্গে সঙ্গে সুদও কমতে পারে। সেই কারণে মানুষ ঠিক বুঝতে পারছেন না, এখানে লগ্নি করা দীঘর্র্মেয়াদে লাভজনক হবে কি না। এই প্রকল্পের সুদ পুরোপুরি করযোগ্য। অর্থাৎ যাঁরা সর্বোচ্চ করের আওতায় পড়েন, তাঁদের কাছে করমুক্ত বন্ড বেশি আকর্ষণীয় মনে হবে। বাজারে এখন চালু আছে দুটি কোম্পানির করমুক্ত বন্ড। ৮.৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যায় করমুক্ত বন্ডে।
যাঁরা কম করের আওতায় পড়েন, তাঁদের কাছে অবশ্য মূল্যবৃদ্ধি-সূচক বন্ডের আকর্ষণ যথেষ্ট। অতীতে দেখা গিয়েছে, ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার বেশির ভাগ সময়েই মূল্যবৃদ্ধির হারের তুলনায় কমই থাকে। অর্থাৎ এই প্রকল্পে সুদ সব সময়েই ব্যাঙ্ক সুদের তুলনায় বেশি থাকবে বলে আশা করা যায়। প্রবীণ নাগরিকেরা ১ বছর পরে এবং অন্যরা ৩ বছর পরে প্রয়োজনে ভাঙাতে পারবেন এই বন্ড। ভারত সরকারের ইস্যু করা এই বন্ড সুরক্ষার দিক থেকেও অতি উত্তম। ১০ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে সুদ নিয়মিত দেওয়া হবে না। জমে উঠবে আসলের সঙ্গে। |