বিনোদন
বাংলা নাটকেও জলদি হিটের হাওয়া
পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচের বাজার নেই। এখন কুড়ি ওভারের খেলা।
সিনেমায় জুবিলির যুগ নেই। এখন প্রথম তিন দিনে টাকা তুলে নেওয়ার খেলা।
নাটকেও রমরমিয়ে ২০০ রজনীর দিন গিয়েছে। এখন প্রথম ১৫টা শো হাউসফুল মানেই বড় হিট-এর তকমা। ছ’আট মাস পর থেকে ভিড় কমতে শুরু করার আগেই পরের প্রযোজনা মঞ্চে এনে ফেলা। এই নতুন ফর্মুলায় ভর করে টাকার অঙ্কে বাংলা নাটক এমন কয়েকটি শিখর ছুঁয়েছে, যা কয়েক বছর আগেও ভাবা যেত না।
যেমন? হাজার টাকার টিকিট। মনীশ মিত্রর ‘ঊরুভঙ্গম’ এ বছরের সবচেয়ে চমকপ্রদ হিট বলে গণ্য হচ্ছে। সারা রাত ধরে অভিনয় হয় ছ’ঘন্টার নাটকটি। প্রথম দুটো শো-এ টিকিটের দাম ছিল ৩০০ টাকা। মনীশ নিজেই বলছেন, দু’তিনটির বেশি শো করা যাবে বলে আশা করেননি। কিন্তু দর্শক সমাগমই সব হিসেব বদলে দিয়েছে। এখন বিজ্ঞাপন বেরনোমাত্র সবচেয়ে আগে শেষ হয়ে যায় হাজার আর ৫০০ টাকার টিকিটই। ১০০ বা ২০০ টাকার টিকিট বিক্রি হয় সবার শেষে। ২০১৩-র ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ২২টা শো-এর ১৮টা হাউসফুল। শো-প্রতি প্রায় দু’লাখ টাকার বিক্রি আছে।
মনীশ কিন্তু তাও ‘ঊরুভঙ্গম’ আঁকড়ে বসে নেই। নতুন নাটক ইতিমধ্যেই নেমে গিয়েছে।
ব্রাত্য বসুর ‘সিনেমার মতো’ নেমেছিল মে মাসে। ১০০ ও ২০০ টাকার টিকিট এখনও অবধি ৩০টা শো-এর মধ্যে ২৪টা হাউসফুল। হলের আয়তন অনুযায়ী শো প্রতি ৮৫-৯৫ হাজার থেকে এক লাখ সাত-নয় পর্যন্ত বিক্রি আছে। আমন্ত্রিত শো-এর দর উঠেছে এক লাখ। বাংলা নাটকে এও আর এক শিখর।
ব্রাত্যও নতুন নাটকের কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
নান্দীকারের এ বছরের হিট নাটক ছিল ‘নাচনী’। পরিচালক পার্থপ্রতিম দেব জানাচ্ছেন, মে মাস থেকে শুরু করে ৩০টা শো-এর ২৯টাই হাউসফুল শো। প্রতি ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার বিক্রি। এ বছরই বাংলা নাটকের টিকিটের দাম ১০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত হয়েছে। নান্দীকার অবশ্য দুশো টাকার পাশাপাশি আজও কুড়ি টাকার টিকিট রেখেছে। ‘নাচনী’র পরের প্রযোজনা, ‘শানু রায়চৌধুরী’র ‘রিভাইভাল’ও মঞ্চে এসে গিয়েছে।
অন্য দিকে মিনার্ভা রেপার্টরির ‘রাজা লিয়ারে’র পরে টিকিটের দাম ফের ৩০০ টাকা রাখার সাহস দেখিয়েছে ‘নিঃসঙ্গ সম্রাট’। অগস্ট মাসে নামার পরে এখনও ৯টা শো হয়েছে ৮টা হাউসফুল। প্রতি শো প্রায় এক লাখ কুড়ির মতো বিক্রি। পরিচালক দেবেশ চট্টোপাধ্যায় তাও ৫০ রজনীর স্বপ্ন দেখছেন না।
নাটকের গড় আয়ু যে কমছে, এ নিয়ে দৃশ্যত কারও দ্বিমত নেই। তবে সেটাকে ভাল বা খারাপ বলার চেয়ে বদলে যাওয়া সময় আর অর্থনীতির বাস্তবতা বলেই মেনে নিচ্ছে নাট্যজগত। ব্রাত্য-দেবেশ-কৌশিক সেনরা বলেই দিচ্ছেন, এখন একটা নাটকের এককালীন আয়ু (প্রথম মঞ্চস্থ হওয়ার পরে দর্শক আনুকূল্য ধরে রেখে একটানা অভিনয়) ছ’আট মাসের বেশি নয়। একটা হিট গান, একটা হিট সিনেমা বা একটা বেস্টসেলারও যেমন এখন আর খুব বেশি দিন মানুষের মনে স্থায়িত্ব পায় না, নাটকও তার ব্যতিক্রম নয়। ব্রাত্যর স্পষ্ট কথা, ‘‘আমার ঠাকুরদার সঙ্গে আমাকে তুলনা করে কোনও লাভ নেই।’’ সাহিত্য, সিনেমা, নাটক সবই এখন একেকটা ইভেন্ট। সেই ইভেন্ট যত দিন বাজারে তার রেশ ধরে রাখতে পারবে, তত দিনই তার আয়ু। এবং নাটকের ক্ষেত্রে এই ইভেন্টের আয়ু তত ব্যাপকও নয় বলে মানছেন দেবেশ।
কেন? কারণ গ্রুপ থিয়েটার কোনও দিনই আমজনতার বিনোদন ছিল না, আজও নয়। তাকে মূলত বাঁধা দর্শকের উপরেই নির্ভর করতে হয়। একটা ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’ কি একটা ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ কি একটা ‘রুদ্ধসঙ্গীত’ বা ‘রাজা লিয়ার’ মাঝে মাঝে সেই গণ্ডি অতিক্রম করে যায়। কিন্তু সেটা রোজকার ঘটনা নয়। বরং দেবেশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, যত দিন পেশাদার থিয়েটার বেঁচে ছিল, তত দিন একটা বৃহত্তর দর্শকের জীবনেও থিয়েটার দেখতে যাওয়ার চল ছিল। গ্রুপ থিয়েটারও তার সুফল ভোগ করেছে। কিন্তু ঘরে বসে বিনোদনের অঢেল রাস্তা খুলে যাওয়ার পরে নাটকের দর্শক অনেক সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে।
একমত মেঘনাদ ভট্টাচার্যও। এই বাজারে তাঁর ‘পিঙ্কি-বুলি’ সেই বিরল উদাহরণ, যা ১০০ রজনী পূর্ণ করল। কিন্তু মেঘনাদই বলছেন, সাড়ে ছশো পার করা ‘দায়বদ্ধ’ নয়ের দশকের গোড়ায় ১০০ পেরিয়েছিল এক বছর এক মাসের মধ্যে। ‘পিঙ্কি-বুলি’র লাগল আড়াই বছর। কেন? মেঘনাদের নাটকে ৭০ শতাংশ থাকে কল শো। কিন্তু সেই বাজার কালে-দিনে কমেছে। অফিস ক্লাব বা ব্যাঙ্কের শো-এর রমরমা নেই। বাংলা ব্যান্ডের জনপ্রিয়তা নাটকে বড় থাবা বসিয়েছে। তবু যে ১০০ পেরনো গেল, তার রহস্য কী? মেঘনাদ বলছেন, তাঁর দর্শকের বড় অংশ মফস্সলের মধ্যবিত্ত। তাঁরা অনেকে ২০০ বা ৩০০ টাকার টিকিট কাটতে পারেন না। কিন্তু ব্যবসার অঙ্কটা ভিড় দিয়ে পুষিয়ে দেন।
অন্য দিকে এক ঝাঁক নতুন তারকা পরিচালক, তারকা অভিনেতা, রাজনৈতিক উত্তেজনা, মিডিয়ার নজর এবং মঞ্চভাষায় নানা পরীক্ষানিরীক্ষার সুবাদে বাংলা নাটক যে নতুন অক্সিজেন পেয়েছে, সেটা অনেকটা মাল্টিপ্লেক্স-ঘরানার দর্শক। শহুরে, উচ্চবিত্ত। পকেট ভারী, কিন্তু সংখ্যা কম। তবে এই দর্শক যে নিয়মিত নাটক দেখতে আসছেন, কৌশিক সেনের মতে এটাই আশার কথা। সেই সুবাদেই কাজের দিনে অভিনীত হলেও ‘থানা থেকে আসছি’-র মতো নাটক গড়ে ৪৮-৫০ হাজার টাকার বিক্রি পাচ্ছে। কিন্তু কৌশিক মানছেন, একটা হিট নাটক নামিয়ে দু’বছর নিশ্চিন্তে থাকার দিন আর নেই।
চটজলদি উপভোগ, চটজলদি বিস্মৃতি। ফের নতুন উত্তেজনায় গা ভাসানো। ফেসবুকে এই ‘লাইক’ তো এই ‘আনফ্রেন্ড’। জীবনযাত্রা থেকে বিনোদন, সবেতেই এখন তাৎক্ষণিকতার জোয়ার। বাংলা নাটকেও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.