তুমুল তর্কাতর্কি দুই বৃদ্ধের। সেই কাজিয়া দেখতে ভিড়ও জুটেছে ভালই। বর্ধমান থেকে লাঠি কিনতে পৌষমেলায় এসেছেন সত্তরোধ্বর্র্ কীর্তন শিল্পী সুবল দাস বৈরাগ্য। লাঠির দর নিয়েই দোকানির সঙ্গে তর্ক লেগেছে। সুবলবাবু ১০০ টাকা অবধি উঠতে রাজি। কিন্তু ১৬০-টাকার কমে লাঠি ছাড়তে নারাজ দোকানদার দয়ালচন্দ্র দাস। ফি বছরের মতো এ বারও তিনি কলকাতার সল্টলেক থেকে মেলায় এসেছেন হরেক রকমের লাঠির পসরা নিয়ে। অতীতে অনেক রকম ক্রেতাই তিনি সামলাছেন। কিন্তু এই ভাবে দর কষাকষিতে পড়েননি। এক সময়ে বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললেন তিনি, “দাদা নিতে হয় তো নিন। টাইম নষ্ট করবেন না!” ভিড়ের থেকে এক ছোকরার আবার তখনই টিপ্পনি, “ও দাদু ঝামেলা বাড়িয়ে কী হবে! নিয়েই নিন না!” শেষ পর্যন্ত রফা হল ১৪০ টাকায়। সুবলবাবু আর কী করেন! গুণে গুণে একশো চল্লিশ টাকা দিয়ে পছন্দের লাঠিখানা নিয়ে রওনা দিলেন বাড়ির পথে।
|
মেলার ভিড় ঠেলে অনেকেই এগিয়ে যাচ্ছেন মাঝ মাঠে। কর্পোরেট হাউসের কর্তা-গিন্নিই হন কিংবা রেলের ইঞ্জিনিয়র, দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের অনেকেই চুমুক দিতে পৌঁছে যাচ্ছেন তাঁর চায়ের দোকানে। কিন্তু চায়ের দোকানিটি কে? তিনি কাটোয়ার শ্রীখণ্ডের কাবু শেখ। যেই যাচ্ছে তাঁর কাছে চা খেতে, এসে বলছে-- চায়ের ব্যাপারে এত নিষ্ঠা দেখিনি বাবা!! ব্যাপারটা কি? চা তৈরির পাত্র থেকে মগ, ছাঁকনি, এমনকী চায়ের কাপও সবই পেতলের ব্যবহার করেন কাবু। মেলায় মেলায় চায়ের দোকান দিয়েই পেট চালান ওই দোকানি। তাই যত্নটুকুই বড় সম্বল। ধানবাদ থেকে সপরিবারে পৌষমেলা ঘুরতে এসেছিলেন রেল ইঞ্জিনিয়র অর্জুন কুমার। কাবুর চা খেয়ে ফেরার পথে বলেই ফেললেন তিনি, “কাবুর চায়ে জাদু আছে!”
|
ভাঙা মেলা থেকে বেতের মোড়া আনার জন্য গিন্নি এক রকম ফতোয়াই জারি করেছেন। কথা মতো মেলা থেকে আবদুল মোতিন সস্তায় একজোড়া বেতের মোড়া পেয়েও গিয়েছেন। একরত্তি মেয়ে মাম্পি বাড়ি থেকে বেরনোর সময়ে আবদার করেছিল একটা ‘টেডি বিয়ার’ চাই। তাও কেনা হয়েছে। কিন্তু এক হাতে টেডি, অন্যটায় মোড়া নিয়ে যাবেন কী করে!! পিলপিল করে পর্যটক ধেয়ে আসছেন। বারবার ধাক্কা খেতে খেতে শেষে হাল ছাড়লেন। সামান্য কিছু খাওয়াও হল না যে তাঁর। কোনও রকমে বিরক্ত মুখে ট্রেন ধরতে ছুটলেন প্রান্তিক স্টেশনে! |