পাহাড়পুরে বিস্ফোরণ ও মালদহে চলন্ত বাসে বেপরোয়া গুলি চালানোর ঘটনায় আত্মগোপনকারী কেএলও জঙ্গি টম আধিকারী ও মালখান সিংহের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সন্দেহ। প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া কিছু সূত্রের ভিত্তিতে তদন্তকারী অফিসারদের ওই সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, মালখান ও টমের গতিবিধির উপরে নানা কৌশলে নজরদারি চালিয়ে জানা গিয়েছে, কখনও নেপাল, কখনও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা, আবার কখনও অসমের ডেরায় বসে অগস্ট মাস থেকে নাশকতার ছক কষছে।
রাজ্য গোয়েন্দা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন মাস আগে সূত্র মাধ্যমে খবর পৌঁছয়, টম আলিপুরদুয়ার এলাকায় ‘গানবাজনা’-র ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছে। ঘটনাচক্রে ওই মাসের আলিপুরদুয়ারে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা হয়। সে যাত্রায় তা সফল হয়নি। এর মাস তিনেক পরে আরেকটি সূত্রের মাধ্যমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, টম ‘জলপাইগুড়িতে পাবলিককে তারা দেখানোর’ বন্দোবস্ত করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের এক কর্তার কথায়, “গানবাজনা মানে যে বিস্ফোরণ তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি। তেমনই তারা দেখানো মানে যে বড় মাপের নাশকতার ছক সেটাও স্পষ্ট। সেই মতো নজরদারি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি।”
তাই এই মুহূর্তে টম ও মালখানকে ধরার উপরে যেমন জোর দেওয়া হচ্ছে, তেমনই ওই বিস্ফোরণের কাজে নানা এলাকার যারা মদত দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে ধরাটাও পুলিশের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার পর্যন্ত পুলিশ ওই দুটি ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে পুলিশ হেফাজতে থাকা অন্তত ১০ জন কেএলও লিঙ্কম্যানকে জেরা করে কিছু স্পষ্ট নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারী অফিসাররা। তাদের গ্রেফতার করতে উত্তরবঙ্গের ছয় জেলায় ১২টি দল তল্লাশিতে নেমেছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজ কানোজিয়া বর্তমানে উত্তরবঙ্গের যাবতীয় বিষয় সরাসরি দেখার দায়িত্বে রয়েছেন। এদিন তিনি কয়েক দফায় বৈঠকও করেছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাস্থল থেকে মোবাইলের সাতটি সিম কার্ড উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে ছয়টির মালিকের নাম-ঠিকানা জানা গিয়েছে। তাঁরা নিহত ও জখমদের বাড়ির লোকজন। কিন্তু, একটি সিম কার্ডের মালিককে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের সন্দেহ, ওই মোবাইলটি বিস্ফোরকের ব্যাগে ছিল। পুলিশের এক কর্তা জানান, ওই সিম কার, তা স্পষ্ট করতে সব রকম চেষ্টা হচ্ছে। অসম পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।
তবে তদন্তকারীদের একাংশ একটি ব্যাপারে নিশ্চিত, একটি নয়, বেশ কয়েকটি আইইডি তৈরির জন্য বিস্ফোরক-সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম এক সঙ্গে অসম থেকে উত্তরবঙ্গে সম্প্রতি ঢুকেছে। বিশেষ করে জলপাইগুড়ি, মালদহ ও কোচবিহার জেলায় এগুলি ঢুকেছে বলে সন্দেহ। অদূর ভবিষ্যতে ফের আইইডি-র বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কেএলও যে উত্তরবঙ্গে নাশকতার চেষ্টা করতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা গোয়েন্দারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি. বলেন, “তদন্ত চলছে। এখন বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।” |