সাড়ে চার বছরের এক শিশুকন্যাকে খুনের অভিযোগ উঠল পড়শি এক যুবকের বিরুদ্ধে। নদিয়ার মায়াপুরের চরকাষ্ঠশালী গ্রামে শুক্রবার সকালে খুনের পরে ওই শিশুর দেহ একটা ট্রাঙ্কের মধ্যে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। রাতে দেহটি একটি বস্তায় পুরে পাশের বাঁশবাগানে ফেলতে গিয়েই গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে যান ওই যুবকের মা। তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে পুলিশ আটক করেছে। কিন্তু প্রধান অভিযুক্ত ঈশা ওরফে মানিক মণ্ডল পলাতক। শিশুটির উপর যৌন নির্যাতনেরও অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের পরেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
শনিবার দেখা গেল, গোটা গ্রাম যেন ফুঁসছে। ঘটনার দিন সকালে নাসরিন নামে ওই শিশুকন্যাকে নিয়ে নতুনপাড়ার কলে কাপড় কাচতে গিয়েছিলেন তার মা খাদিজা বিবি। তাঁর ব্যস্ততার সুযোগে পাশের বাড়িতে ঢুকে পড়ে নাসরিন। তারপর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। তার বাবা হাসেম মণ্ডল বলেন, “নাসরিনকে খুঁজে না পেয়ে সারা গ্রামেই তল্লাশি চালানো হয়।” গ্রামবাসীরাও খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। জাল ফেলা হয় সব ক’টি পুকুর এবং ডোবায়। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। শুক্রবার দুপুরে নবদ্বীপ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন পেশায় রাজমিস্ত্রি হাসেম। গ্রামের লোকজন ঠিক করেন, নতুনপাড়ার সব বাড়িতে আরেকবার খোঁজা হবে। গ্রামের খাদেম আলি শেখ বলেন, “প্রতিটি বাড়িই খুঁজে দেখব বলে ঠিক করি।” কিন্তু মানিকদের বাড়ি যেতেই তল্লাশিতে আপত্তি জানায় তার মা।
এতেই সন্দেহ তৈরি গ্রামবাসীদের মনে। গ্রামের কয়েকজন মানিকদের বাড়ির উপর নজর রাখতে শুরু করেন। নাসরিনের মামা আনারুল শেখ বলেন, “সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ আমরা দেখি মানিকের মা কোলে করে কী যেন একটা নিয়ে বাড়ির পিছন দিকে যাচ্ছেন। তারপর সেটা বাড়ি থেকে একটু দূরে বাঁশবাগানের মধ্যে ছুড়ে ফেলে চলে যান। সঙ্গে সঙ্গে আমরা গিয়ে ওই বস্তা খুলে নাসরিনের মৃতদেহ দেখতে পাই।”
খবর যায় নবদ্বীপ থানায়। ততক্ষণে ওই বাড়ির সকলে বেপাত্তা। পুলিশ গিয়ে মানিকের মা ও ভাইকে নিয়ে যায় থানায়। নবদ্বীপের আই সি তপনকুমার মিশ্র বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে ওই শিশুটিকে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যৌন নির্যাতনের প্রমাণ মিললে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে। তার মধ্যে শনিবার মানিকের মা ও তার ভাইকে আটক করা হয়েছে। খোঁজা হচ্ছে মানিককে।”
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে নবদ্বীপের বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, “পুলিশকে বলেছি জেলে থাকাকালীন যেন চার্জশিট দেওয়া হয়।” |