ওয়ান্ডারার্স টেস্টের শেষটা যেমন থ্রিলিং হয়েছিল, ডারবানেও তেমন সম্ভাবনা আছে কি না, এই প্রশ্ন যদি মনে এসে থাকে, তা হলে আপনাকে খুশি করার মতো উত্তর নেই আমার কাছে। আমার মন বলছে, এই টেস্ট ড্র হওয়ার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ।
যা নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সফর শুরুর আগেই লিখেছিলাম, এই সিরিজ থেকে আসল প্রাপ্তি হবে সচিনোত্তর ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কী, তার আন্দাজ পাওয়া গেলে। পাওয়া গেলও। ভেবে ভাল লাগছে, সেটা বেশ ইতিবাচক। ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন প্রজন্ম যে লড়াইয়ের জন্য তৈরি, তা তারা এই সিরিজেই বুঝিয়ে দিয়েছে। তাই সিরিজ ড্র হলেও আমাদের খুশি হওয়া উচিত।
আমাদের ক্যাপ্টেন কুল যে কেন এত সফল, তা এই টেস্টে ওর সবচেয়ে ধুরন্ধর চালটাই বুঝিয়ে দিল। অশ্বিনকে বাদ দিয়ে জাডেজাকে (৪-৮৭) প্রথম এগারোয় নিয়ে আসার সিদ্ধান্তে আমরা অনেকেই চমকে গিয়েছিলাম। কিন্তু কেন ‘স্যর’ জাডেজাকে নিয়ে আসা, তা প্রমাণ হল এ দিনই। এমন উইকেটে জাডেজা যে সফল হতে পারে, তা ভাবার দুটো কারণ আছে। প্রথমত, ও ফর্মে রয়েছে। দ্বিতীয়ত, এক জন বাঁ-হাতি স্পিনারকে দিয়ে বল করানো মানে উইকেটে যদি টার্ন না-ও পাওয়া যায়, তা হলেও সোজা বলটা ব্যাটসম্যানের স্টাম্পের ভিতর দিকে আসবে। আর যেটা অফস্টাম্পে, সেটা ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাটসম্যান খোঁচা মারতে পারে। |
কালিসকে ‘গার্ড অব অনার’ টিম ইন্ডিয়ার। শনিবার ডারবানে। ছবি: রয়টার্স। |
এমন উইকেটে বাঁ-হাতি স্পিনাররা যে এ ভাবে ‘অ্যাঙ্গেলে’ ব্যাটসম্যানকে বিট করার বাড়তি সুবিধা পায়, সেটা ভেবেই জাডেজাকে নামানো। এই সিদ্ধান্তে ঝুঁকি অবশ্যই ছিল। কিন্তু ধোনির আরও একটা ফাটকা খেটে গেল। শনিবার পিটারসন আর এবি দু’জনেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেল। স্মিথ ফুটমার্কের ফাঁদে পড়ল। দুমিনির ক্ষেত্রে অবশ্য বলটা অফস্টাম্প থেকে ভিতরে ঢুকল। এ দিন জাডেজাই ভারতকে ম্যাচে রেখে দিল। স্মিথ, ডে’ভিলিয়ার্স থেকে গেলে কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা আরও দ্রুত রান তুলে ফেলত। জাডেজার জন্য এ দিন নতুন বল নেওয়াটা পিছিয়ে দিয়েছে ভারত।
তাতে অবশ্য একজনকে টলানো যায়নি। যে ভাবে ইনিংসটা এগোচ্ছে, তাতে জীবনের শেষ টেস্টে জাক কালিসের (৭৮ ব্যাটিং) ব্যাট থেকে একটা সেঞ্চুরি না পাওয়া গেলে অবাকই হব। আর সেটা হলে কিন্তু ভারত আবার চাপে পড়ে যাবে।
এই উইকেট কালিসকে চাপে ফেলার মতো নয়। জাডেজাও ওকে বিশেষ সমস্যায় ফেলতে পারেনি। তবে কালিসের ইনিংসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, ওর পেসটা। ভারতকে চাপে ফেলতে যে রকম গতিতে রান তোলা দরকার, সেটা ও তুলছে।
ডারবানের উইকেটটা ক্রমশ ব্যাটসম্যানদের স্বর্গ হয়ে উঠছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিংরুমে এখনও বসে দু’প্লেসি। ক্রিজে দুরন্ত ফর্মে থাকা কালিস। রবিবার ওরা দু’জনে মিলে যদি বড় একটা পার্টনারশিপ করে দেয়, তা হলে তো কথাই নেই। ম্যাচটা জমে যাবে। ওরা চা বিরতির মধ্যে শ’দুয়েক রানের লিড নিয়ে যদি ডিক্লেয়ার করে দেয়, তা হলে ভারতের সামনে বড় পরীক্ষা। স্টেইনের প্রথম ইনিংসের পারফরম্যান্সটা ভুলে যাবেন না। যদিও উইকেট এখন আরও গতিহীন হয়ে গিয়েছে।
এখন সব কিছুই নির্ভর করছে রবিবার প্রথম সেশনে ওরা কেমন ব্যাট করবে, তার উপর। শনিবার যেমন শুরুতেই পরপর তিনটে উইকেট পড়ে গিয়েছিল, তেমন যদি রবিবারও হয়, তা হলে টেস্টটা ড্রয়ের দিকে ঘুরে যাবে। ভারতের পক্ষে এই টেস্ট জেতা কিন্তু খুব কঠিন।
রবিবার সকালে অবশ্য ভারতকে খুব তাড়াতাড়ি নতুন বলটা নিতে হবে। সকালের দিকে পিচে আর্দ্রতা থাকবে। সেই সুযোগটা পেসারদের কাজে লাগাতে হবে। কালিসকে থামানোর ওটাই কিন্তু সেরা সুযোগ।
|
কালিস হল সে সব ডান হাতি ব্যাটসম্যানদের এক জন, যাদের কভার ড্রাইভ মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়। কালিসের সঙ্গে ব্যাট করার অনেক স্মৃতি আছে আমার। ওর সঙ্গে ব্যাট করেই আমার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছিলাম। কালিস আবার যখন ডাবল সেঞ্চুরি করেছিল, সঙ্গী ছিলাম আমি।
এবি ডে’ভিলিয়ার্স |
পরিস্থিতি অনুযায়ী সেরা ইনিংসটা খেলছে কালিস। ডে’ভিলিয়ার্স যখন ব্যাট নামে, কালিস একটা বলও খেলেনি। কিন্তু সেই অবস্থা থেকে চাপটা সামলাল। মনে হচ্ছে না, কালিস জীবনের শেষ টেস্ট খেলছে। মনে হচ্ছে, জীবনের সেরা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
আলভিরো পিটারসন |
|
পুরনো প্রেমের নতুন ইনিংস
নিজস্ব প্রতিবেদন |
জীবনের শেষ টেস্ট খেলতে নামা জাক কালিস নাকি পুরনো প্রেম ফিরে পেয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, প্রাক্তন প্রেমিকা শামন জার্ডিমের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক শুরু করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার। প্রায় ছ’বছর কালিসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল শামনের। যিনি পেশায় মডেল এবং অভিনেত্রী। আইপিএলের সময় কালিসের সঙ্গে বেশ কয়েক বার তিনি ভারতেও এসেছেন। এখানকার পরিবেশ তাঁর এত ভাল লেগে যায় যে, ভারতীয় মতে বিয়ে করবেন বলে ঠিক করেন কালিস-জার্ডিম। তবে গত জুনে সম্পর্কটা শেষ করে দেন দু’জনে। এক সূত্রের খবর, শামনের সঙ্গে বিচ্ছেদের জেরেই নাকি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে নাম তুলে নিয়েছিলেন কালিস। এখন অবশ্য দু’জনে নতুন করে সম্পর্ক শুরু করেছেন বলেই খবর। |