রেকর্ড বলছে, কিংসমিডে এটাই আজ পর্যন্ত ভারতের সবচেয়ে বেশি রান। সাড়ে তিনশোর আশেপাশে এর আগে কোনও ভারতীয় টিম তুলতে পারেনি। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, ডারবানে সেটা তুলেও ভারত ম্যাচের স্টিয়ারিংটা পেল না।
বোর্ডে সাড়ে চারশো রান থাকলে বোলারদের বলা যেত যে, যাও এ বার গিয়ে ওদের আড়াইশোর মধ্যে শেষ করে দেখাও। কিন্তু সেটা আর হবে না। যা দেখছি, তাতে এখন অ্যাডভান্টেজ দক্ষিণ আফ্রিকা। যদি না আমাদের বোলাররা মারাত্মক কিছু করে।
কিন্তু তার জন্য তো আবার ওদের স্টেইন হয়ে উঠতে হবে! আজ শেষ দিকে ভারত যা বল করল, তাতে সে রকম কোনও ইঙ্গিত পাইনি। জাহির, শামি বা ইশান্ত— কাউকে এখনও স্টেইনের মতো বিষাক্ত লাগল না।
আজ ভারত আসলে স্টেইনের আগ্রাসনের আন্দাজটা ভুল করেছিল। ওদের বোঝা উচিত ছিল যে স্টেইনকে টেস্টের প্রথম দিন মেরে দেওয়া গিয়েছে মানে রোজ মারা যাবে, এমন নয়। বরং মার খেয়ে দ্বিতীয় দিন অনেক বেশি ক্ষুধার্ত থাকবে স্টেইন। আশা করেছিলাম, ভারতীয়দের কাছে তার পাল্টা ফর্মুলা থাকবে। সেটা হয়তো দেখাও যেত। কিন্তু সব গণ্ডগোল করে দিল ডে’ভিলিয়ার্সের দু’টো ক্যাচ। |
পূজারা আর কোহলি— যে দু’টো ক্যাচ ডে’ভিলিয়ার্স ধরল, নিঃসন্দেহে ওই দু’টো ক্যাচকে স্বপ্নের বলা যায়। কোনও স্ট্রাইক বোলার যদি ও রকম ক্যাচে উইকেট পায়, তার আত্মবিশ্বাস এক ঝটকায় অনেকটা বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। আর তার পর যদি আপনি তাকে মাথায় চড়ে বসতে দেন, তা হলে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা হয়। স্টেইন আর মর্কেল মোটামুটি ‘স্টিম রোলার’ চালিয়ে দিল ভারতীয় ব্যাটিং লাইন আপের উপর। বিশেষ করে স্টেইন। এ বার ওকে খেলা প্রচণ্ড কঠিন হবে। ভারতের টেল এন্ডারদের নিয়ে ওর ছেলেখেলা করা ছেড়ে দিলাম। ও তো টপ অর্ডারের তিন-চার জনকে উড়িয়ে দিল। আর সত্যি বলতে, স্টেইনের মতো নিখুঁত বোলিং হালফিলে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। অন্য পেসাররা যেখানে এক ওভারে তিনটে কী চারটে নিখুঁত বল করতে পারে, সেখানে স্টেইন সেরা ফর্মে ছ’টা বলই নিখুঁত করবে। ওকে দেখলে অ্যালান ডোনাল্ডের কথা মনে পড়তে বাধ্য। সাউথ আফ্রিকার বর্তমান বোলিং কোচকে খেলা যতটা কঠিন ছিল, স্টেইনকে খেলা ততটাই কঠিন। তার উপর আজ আবার প্রচুর রিভার্সও করিয়েছে স্টেইন। আজ সকালে দশ বলের মধ্যে তিন উইকেট নেওয়ার পর দেখলাম বাউন্ডারি লাইনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ডোনাল্ড টাওয়েল দিয়ে সযত্নে ওর ঘাড়-মাথা মুছিয়ে দিয়ে কী সব বলছিল। তখনই দেখলাম স্টেইনের মুখে চওড়া হাসি। একটা সময় ক্রিকেট বিশ্বে ডোনাল্ড ‘হোয়াইট লাইটনিং’ হিসেবে বিখ্যাত ছিল। ওর ছাত্র স্টেইনকেও বিদ্যুত্ বলাটা ভুল হবে না! |
ভারতের ডারবান টেস্ট জেতার সম্ভাবনা এখন খুব কম। হয় ড্র হবে। নইলে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতবে। ওরা দিনের শেষে ৮২-০। শনিবার প্রথম সেশনে যদি ওদের তিন-চারটে উইকেট না ফেলা যায়, ভারতকে কিন্তু ম্যাচ বাঁচাতে নামতে হবে। দু’শোর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শেষ করতে পারলে, ভারত ফিরবে। নইলে নয়। স্টেইনের দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার আর এক জনকেও কিন্তু ভুললে চলবে না— জাক কালিস। এক জন নন-উইকেটকিপার হিসেবে দ্রাবিড়ের পর কালিসই একমাত্র যে টেস্টে দু’শো ক্যাচ নিল। সেটাও নিল জীবনের শেষ টেস্টে। ব্যাট হাতে রান, বল হাতে উইকেট, ফিল্ডার হিসেবে ক্যাচ— কী নেই বলুন তো লোকটার? আমি সোবার্সকে দেখিনি। কিন্তু এমন এক জন পরিপূর্ণ অলরাউন্ডারকে দেখেছি বলে গর্বিত। এমন এক জন ক্রিকেটারকে নিয়ে ক্রিকেটবিশ্ব তেমন মাতামাতি করল না, এটা দেখেই খারাপ লাগে। সামনের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার তিরিশ জনের যে সম্ভাব্য তালিকা এ দিন ঘোষণা হল, তাতেও কালিস নেই! |
ডারবানে স্টেইনগান ৩০-৯-১০০-৬ |
• ৬৬.৩ ওভার। বলের গতি ১৪০ কিমি। অফস্টাম্প করিডরে নিখুঁত ডেলিভারি ড্রাইভ করতে গিয়ে পূজারার খোঁচা।
• ৬৮.৫ ওভার। বলের গতি ১৪৩ কিমি। শরীরের দিকে তাক করে শর্ট। লেগস্টাম্পের উপর ডিফেন্ড করতে গিয়ে গ্লাভস ছুঁয়ে কিপারের হাতে জমা মুরলী।
• ৬৬.৬ ওভার। বলের গতি ১৪৫+ কিমি। রিভার্স বুঝতে না পেরে জাজমেন্ট দিয়ে রোহিত বোল্ড।
• ১০৬.৪ ওভার। বলের গতি ১৪০ কিমি। অফস্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে প্রথম স্লিপে ক্যাচ ধোনির।
• ১০৮.২ ওভার। বলের গতি ১৪২ কিমি। শর্ট বলে চালাতে গিয়ে জাহিরের খোঁচা।
• ১০৮.৫ ওভার। বলের গতি ১৪৩ কিমি। অফস্টাম্পের বাইরে শর্ট লেংথের বলে খোঁচা ইশান্তের। |
|