|
|
|
|
জেটলি এখন কম্বল বিলির রাজনীতিতেও
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২৮ ডিসেম্বর |
নরেন্দ্র মোদী কী করবেন, কী করবেন না। রাহুল গাঁধীর আকস্মিক রাগ দেখানোর কৌশলের পাল্টা চাল কী হবে। দিল্লিতে সরকার গড়া ঠিক হবে কি হবে না। সম্ভাব্য শরিক দলগুলির সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ রাখা। চার দেওয়ালের মধ্যে এমন হাজারো কৌশল রচনার জগতেই তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ। সেই চেনা গণ্ডি থেকে এ বার বুঝি বেরিয়ে আসছেন অরুণ জেটলি। লোকসভা ভোটের আগে নিজেকে নিরন্তর ভাঙছেন ও নতুন করে গড়ছেন বিজেপি-র এই শীর্ষস্থানীয় নেতা।
ঘনিষ্ঠ মহলে জেটলিও বহু বার বলেছেন, তিনি তাঁর সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাঁর পারদর্শিতা অনেক বেশি কৌশল রচনায়। জনতার মাঝে গিয়ে ‘মাস-লিডার’ হয়ে ওঠা হয়নি তাঁর। যদিও রাজনীতির হাতেখড়ি হয়েছিল আরএসএসের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের মাধ্যমে। ছাত্র রাজনীতি ও আন্দোলনের মাধ্যমেই তাঁর রাজনীতিতে উত্থান। জরুরি অবস্থার সময় তিনি ১৯ মাস কারাবাসও করেছেন। ধীরে ধীরে প্রভাবশালী মহলে পরিচিতি বেড়েছে। আইনজীবী হিসেবে, ক্রিকেট দুনিয়ায়, শিল্পবন্ধু হিসেবে। বিচক্ষণ বক্তা, আইনি ও বিদেশ সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর দক্ষতা ও সর্বোপরি কৌশল রচনার ক্ষেত্রে তাঁর মুন্সিয়ানা এখন প্রতিষ্ঠিত।
এই জেটলিই এখন বদলাচ্ছেন। শহুরে রাজনীতির চেনা গণ্ডি পেরিয়ে তিনি আম-জনতার রাজনীতিতেও প্রবেশ করছেন ধীরে ধীরে। এক সময় উমা ভারতীর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন জেটলি। উমা যখন গরুকে আদর করে তাকে খাওয়াচ্ছেন, পুজো করছেন, জেটলিকে কিন্তু তখন সেই পথ ধরতে দেখা যায়নি। সেই জেটলি এখন গোবলয়ের রাজনীতিতেও সক্রিয় ভাবে অংশ নিচ্ছেন। দিনভর প্রচুর মানুষের সঙ্গে দেখা করছেন। আজ ছিল তাঁর জন্মদিন। প্রতি বার জন্মদিনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের চেনা পরিচিত মানুষজনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভোজের আয়োজন করেন। এ বারে করেননি।
দিল্লিতে থাকলে লোদী গার্ডেনে প্রাতর্ভ্রমণ করেন জেটলি। আজ সকালে প্রাতর্ভ্রমণের সহযাত্রীরাই কেক কেটে জেটলির জন্মদিন পালন করেছেন। কিন্তু তার পর দুপুরে জেটলি সস্ত্রীক চলে গিয়েছেন এক অনাথাশ্রমে। সেখানে গিয়ে কম্বল বিতরণ করেছেন তিনি। জেটলি-ঘনিষ্ঠ এক নেতার মতে, নিতিন গডকড়ী যখন দলের সভাপতি হয়েছিলেন, তখন থেকেই জেটলিকে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী করার ভাবনাচিন্তা রয়েছে দলে। আর তার জন্যই ধীরে ধীরে জনতার মাঝে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন জেটলি।
বিজেপি সূত্রের মতে, জেটলি কোন আসন থেকে লড়লে সব থেকে ভাল হবে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জল মাপার কাজ চলছে। অমৃতসর আসনটির কথা অনেক দিন ধরেই ভাবছেন বিজেপি-র এই পঞ্জাবি হিন্দু নেতাটি। রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার বিপুল জয়ের পরেও সে রাজ্যেও কোনও আসন বেছে নিতে পারেন। বসুন্ধরার সঙ্গেও তাঁর যথেষ্ট সখ্য রয়েছে। আবার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও। কিন্তু অন্য কোনও রাজ্য থেকে জিতে এলে তাঁর কৃতিত্ব সেই রাজ্যের নেতার ঝুলিতেই যাবে। অথচ জেটলি আপাদমস্তক দিল্লিরই নেতা। ফলে দিল্লির কোনও আসনও বেছে নিতে পারেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও নতুন করে ভাবতে হচ্ছে তাঁকে। কারণ, দিল্লির যে কোনও আসন থেকে লড়ার জন্য অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা খোলা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে রেখেছেন জেটলির উদ্দেশে।
জেটলি জানেন, মোদী ক্ষমতায় এলে তাঁরই দু’নম্বর জায়গাটি পাওয়ার সম্ভাবনা। অনেকে তাঁর মধ্যে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মিল খুঁজে পান। কংগ্রেসে থাকার সময় প্রণববাবু সেই অর্থে আম-জনতার নেতা ছিলেন না। অথচ ইন্দিরা গাঁধীর সময় থেকে সনিয়া গাঁধী তিনি এই ‘নম্বর-টু’ জায়গাটিই দখল করে রেখেছিলেন। প্রণববাবু না থাকলে নরসিংহ রাও প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না। জেটলিও এখন মোদীর কৌশল রচনার অন্যতম রূপকারের দায়িত্ব পালন করছেন। নিয়মিত ব্লগ লিখছেন মোদীর হয়ে। তবে উভয়ের তফাত একটাই। প্রণবের শিকড় গ্রামে। জেটলির শহরে। সেই শহুরে মেজাজ থেকে বেরিয়ে নিজেকে এখন নতুন করে গড়তে চাইছেন জেটলি। |
|
|
|
|
|