বিনোদন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ফারুক শেখের

২৮ ডিসেম্বর
কেবারে সাদামাটা চেহারা, আচার-ব্যবহারে যেন পাশের বাড়ির ছেলে। তবে চোখদু’টো ছিল বড় তীক্ষ্ণ, ঝকঝকে। রুপোলি পর্দায় যখন জাঁকিয়ে রাজ করছেন অমিতাভ বচ্চন থেকে রাজেশ খন্না, এ হেন ব্যক্তিত্ব নিয়েই তাঁর বলিউডে পা। প্রথম দর্শনেই মাত। আর তার পর সাফল্যের লম্বা দৌড়। তিনি ফারুক শেখ। গত কাল গভীর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন এই প্রবীণ অভিনেতা। বয়স হয়েছিল ৬৫। একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্ত্রীকে নিয়ে দুবাই গিয়েছিলেন। সেখান থেকে হঠাৎই এল দুঃসংবাদ।
সালটা ১৯৭৩। সে বছরই মুক্তি পেয়েছিল ‘জঞ্জির’, ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’, ‘ববি’ থেকে ‘অভিমান’। মুক্তি পায় আরও একটি ছবি, ‘গরম হাওয়া’। অভিনয়ে ফারুক শেখ। আর পাঁচটা বাণিজ্যিক ছবির মতো বিষয়বস্তু নয়। দেশভাগের পটভূমিতে দেশ না ছাড়ার পণ। অনেকের মতে এটি-ই ছিল বলিউডে ভিন্ন ধারার ছবির পথপ্রদর্শক। এখনকার ফারহান আখতার, বা একটু পিছিয়ে গেলে নাসিরুদ্দিন শাহ, ওম পুরী যে ঘরানার অভিনয়ে পরিচিত, তা তো এক সময় শুরু হয়েছিল অমল পালেকর, ফারুক শেখের হাত ধরেই।
‘গরম হাওয়া’-র পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি ফারুককে। একের পর এক হিট। সমসাময়িক ছবির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে থাকে তাঁর সমান্তরাল ছবির ধারা। সত্যজিৎ রায় থেকে শ্যাম বেনেগাল, কিংবা হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় সকলেরই পছন্দের তালিকায় ছিল তাঁর নাম। ‘গরম হাওয়ায়’ ফারুকের অভিনয় দেখেই সত্যজিৎ রায় তাঁকে বেছে নিয়েছিলেন ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’তে। তাঁর জনিপ্রিয় ছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘উমরাহ জান’, ‘নুরি’, ‘চশমে বদ্দুর’, ‘কিসি সে না কেহনা’, ‘কথা’ ও ‘বাজার। এক দিকে যখন ‘চশমে বদ্দুর’-এর মতো ছবিতে ‘পাশের বাড়ির ছেলে’, একই সঙ্গে উমরাহ জানে রাজার চরিত্রে অনবদ্য।
১৯৪৮ সালে গুজরাতের বডোদরায় এক জমিদার পরিবারে জন্ম ফারুকের। বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। ছবির পর্দায় কিন্তু আসার কথা ছিল না ফারুকের। বাবাকে অনুসরণ করে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। বাবা ছিলেন বডোদরার ডাকসাইটে উকিল মোস্তাফা শেখ। পসার জমাতে সপরিবার মুম্বই চলে আসেন তিনি। বড় হয়ে বাবার পেশাকেই বেছে নিয়েছিলেন ফারুক। কিন্তু কিছু দিন পরেই বুঝতে পারেন, এ কাজ তাঁর নয়। চলে আসেন মঞ্চে। অভিনয়ে তাঁর হাতেখড়ি হয়েছিল কলেজজীবনে। যেখানে তাঁর প্রথম দেখা হয় রূপার সঙ্গে। আলাপ হয়েছিল শাবানা আজমির সঙ্গেও। প্রথম জনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিলেন ফারুক। আর দ্বিতীয় জন ছিলেন তাঁর আজীবন বন্ধু।
এ দিন রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ রূপার ফোন পান শাবানা। বললেন, “ও আমার খুব কাছের বন্ধু ছিল। সেই কলেজের দিনগুলো থেকে একসঙ্গে। ৪০ বছর আগে দু’জনে এক সঙ্গে নাটকের দল শুরু করি।” বলতে বলতেই গলা ধরে আসে শাবানার।
ফিল্ম, নাটক ছাড়াও বেশ কিছু টিভি সিরিয়াল করেছিলেন ফারুক শেখ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শাবানা আজমির সঙ্গেই ‘তুমহারি অমৃতা’। জনপ্রিয় হয়েছিল ফারুকের টক শো ‘জিনা ইসিকা নাম হ্যায়’।
ফারুক শেখের আর এক জন কাছেন বন্ধু-সহকর্মী ছিলেন দীপ্তি নাভাল। এক সময় তাঁদের জুটি খুব নাম করেছিল। ফারুকের বেশির ভাগ ছবিতে তিনিই ছিলেন নায়িকা। সে ‘চশমে বদ্দুর’, ‘কিসি সে না কেহনা’, ‘কথা’ কিংবা সাম্প্রতিক ছবি ‘লিসেন আমায়া’। সহকর্মীর মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন দীপ্তি নাভালও।
মোটামুটি সুস্থ-স্বাভাবিকই ছিলেন ফারুক। ঘনিষ্ঠ মহলের কথা অনুযায়ী তেমন রোগও ছিল না। সারিকার মুখেও শোনা গেল সেই একই হতাশা। এ বছরই দু’জনে ‘ক্লাব ৬০’তে অভিনয় করেছিলেন। এ দিন সারিকা বলেন, “ভেবে অবাক লাগছে, ১০ দিন আগেও দেখা হল ওঁর সঙ্গে। দেখেশুনে ভালই তো লেগেছিল। কত হাসিঠাট্টা করলাম, গল্প করলাম। আমরা আবার বাইরে খাওয়ার প্ল্যানও করছিলাম...।”
মৃত্যুর খবরটা ছড়িয়ে পড়ার পর টুইটারেও একের পর এক শোকবার্তা।
অমিতাভ বচ্চন যেমন লিখেছেন, “ঈশ্বর!!! ফারুক শেখ মারা গিয়েছেন?” টুইট করেছেন শাহরুখও।
২০১৪ সালেও ‘ইয়ঙ্গিস্তান’ ছবিতে পর্দায় দেখা যাবে ফারুককে। তবে সে ছবি দেখা হবে না স্বয়ং অভিনেতারই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.