রাত ৯ টা। বৃহস্পতিবার শীতের রাতে একটু আগেই শুয়ে পড়েছিলেন ধলুয়াবাড়ির বাসিন্দা সঞ্জীব দে। সেই সময়ে মাইকের আওয়াজে উঠে বসেন বিছানায়। শোনেন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হচ্ছে। মাইকে বলা হচ্ছে, “কোথাও পরিত্যক্ত সাইকেল, ব্যাগ কিংবা অন্য কোনও সামগ্রী পড়ে থাকতে দেখলে দ্রুত ফোনে পুলিশকে খবর দিন।” সাধারণত, স্টেশনে, বাস স্ট্যান্ডে এমন ঘোষণা হয়। তা বলে রাতের বেলায় পাড়ায়-পাড়ায় ঘুরে কেন ঘোষণা? কিছু একটা হয়েছে বুঝে ঘরের আলো জ্বালিয়ে টেলিভিশনটা চালান তিনি। তখনই জানতে পারেন, জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা।
সঞ্জীববাবুর মতো অনেকেই সেই ভাবে সে দিন রাতে শিউরে উঠছিলেন। সকলে ফোনে আত্মীয়স্বজনরা ঠিকঠাক বাড়ি ফিরেছেন কি না খোঁজ নিতে শুরু করেন। সঞ্জীব বলেন, “মাইকের শব্দ শুনেই চমকে যাই। টিভিটা চালিয়ে দিই। তার পর সব পরিষ্কার হয়ে গেল।” একই কথা বলেছেন এলাকার বহু বাসিন্দা। কোচবিহার দেওয়ানহাটের বাসিন্দা কোচবিহার ১ পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য আরশাদ হোসেন বলেন, “আত্মীয়ের বাড়ির অনুষ্ঠান থেকে রাতে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলাম। এত রাতে মাইকের ঘোষণা শুনে থমকে দাঁড়াই। তার পরেই পাহাড়পুরের ঘটনা জানতে পারি।” মাইকে ঘোষণা শুনে ঘুম থেকে জেগে বাড়ির বারান্দায় বেরিয়েছিলেন ঘুঘুমারির ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি কৃষ্ণ বিশ্বাস। তিনি বলেন, “টিভিতে পাহাড়পুরের ঘটনা দেখেছিলাম। মাইকের ঘোষণা শুনে বুঝতে পারি ওই ঘটনার জেরেই সতর্কতা। আগে এমনটা দেখিনি।”
মাইক জোগাড় করা অবশ্য বহু এলাকাতে সহজও ছিল না। কোচবিহার ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ খোকন মিঁয়া। তিনি দলের কাজ সেরে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ১০ টা হবে। সেই সময় জেলার এক পুলিশ কর্তা ফোন করে পাহাড়পুরের ঘটনার কথা খোকনবাবুকে জানান। এর পরেই মাইকে প্রচারের ব্যাপারে সহযোগিতার করার জন্য ঘুঘুমারি বাজারে যেতে হয়। দোকান বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীকে ডেকে এনে মাইকের ব্যবস্থা করাতে হয়। কোতোয়ালি থানা এলাকার মতো একই ভাবে জেলার আরও কয়েকটি থানার বাসিন্দারা মাইকের প্রচার শুনে পাহাড়পুরের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা জানতে পারেন। জেলা পুলিশ প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতিরগুলির উদ্যোগে রাতভর কোচবিহার শহর ও লাগোয়া এলাকা সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মাইকে ওই সতর্ক বার্তা প্রচারের কাজ চলে। পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “জেলা জুড়ে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে বেশ কিছু এলাকায় বেশি রাত পর্যন্ত মাইকে প্রচার হয়েছে।” পুলিশ জানায়, শুক্রবার জেলা জুড়ে বাড়তি নজরদারি হয়েছে বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, সেতু ও জনবহুল এলাকায় সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন হয়েছে কোচবিহার রাজবাড়ি , নিউ কোচবিহার রেল স্টেশনে। প্রশিক্ষিত কুকুর নিয়ে তল্লাশি চলে অসম সীমানার বক্সিরহাটে। যানবাহনে তল্লাশে নাকা বসানো হয়। |